স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুরঃ
ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির নেতা শওকত হোসেন মুকুল, সালথা উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু ও সাবেক ছাত্রলীগ সাবেক নেতা আরিফুল ইসলাম, এই তিন নেতা মিলে সালথায় করলেন একটি নামধারী সংগঠন সালথা উপজেলা প্রেসক্লাব নাম করনে।
যদিও কয়েকদিন ধরে সারাদেশে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সেই সাথে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বড় বড় অপরাধীরা। এমন অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়াতে নতুন কৌশল করেছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির নেতা শওকত হোসেন মুকুল।
গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সালথা উপজেলা প্রেসক্লাব নামক সংগঠনটি গঠন করেছেন। ওই প্রেসক্লাবের সভাপতি হয়েছেন শ্রমিকলীগের নেতা মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আরিফুল ইসলাম।
জানা গেছে, একটি হোটেলে তিন-চার জন বসে তড়িঘড়ি করে সালথা উপজেলা প্রেসক্লাব নামের এই সংগঠনের ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা করে চুড়ান্ত ঘোষনা দেন তারা। এই কমিটিতে দু- একজন সাংবাদিক থাকলেও বাকিরা কেউ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নয়।
কমিটির অন্যান্য পদধারীরা হলেন, সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাইফুল ইসলাম মারুফ, মো. হাসান, জামাল হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক রুবেল রানা, অর্থ সম্পাদক মো. কামাল হুসাইন, দপ্তর সম্পাদক মো. আবুল বাসার, প্রচার সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সমাজ কল্যান সম্পাদক আজিম সরদার, কার্যনির্বাহী সদস্য (৩ জন) জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস, শওকত হোসেন (মুকুল), মো. মোশারফ মাসুদ।
এদের মধ্যে অনেকেই সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে যানা গেছে এবং সাংবাদিক হিসাবে তাদের কেউ তেমন চিনেন না। যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ পাওয়া রুবেল রানা ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক।
স্থানীয়রা সাংবাদিকরা জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তখন সালথা প্রেসক্লাবের সদস্য হন টুটু চৌধুরী; তবে পরবর্তীতে তাকে সালথা প্রেসক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়। এই টুটু একটি পত্রিকার আইডি কার্ড বাগিয়ে আনেন। পঞ্চম শ্রেণি পাস টুটু চৌধুরী নিউজ লিখতে না পারলেও সে নিজেকে অনেক বড় সাংবাদিক দাবি করে পরিচয় দিয়ে সাধারন মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে আসছেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা অজুহাতে চাঁদা তুলেন। অবৈধ মাটি-বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তিনি করতেন না। তার এহন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগি হওয়ায় ভয়ে কেউ টুটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেননি। লাবু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় থেকে বছরের পর বছর মাদক ব্যবসা, টেন্ডার বানিজ্য ও থানায় দালালি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টুটু চৌধুরীকে সালথা প্রেসক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সম্প্রতি সাবেক এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সম্পদের পাহাড় নিয়ে নিউজ করায় কালের কণ্ঠের সালথা-নগরকান্দা প্রতিনিধি নুরুল ইসলামকে হত্যার হুমকি দেন এই টুটু চৌধুরী।
স্থানীয়রা জানান, সালথা উপজেলা বিএনপি'র সাধারন সম্পাদক চৌধুরী ইমদাদ আলী খুসরুর সৎ ভাই টুটু চৌধুরী। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টুটু চৌধুরীও ভোল পাল্টিয়ে ফেলেন। টুটুর আর এক ভাই সালথা উপজেলা জামায়াতের শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশনের সভাপতি। যে কারণে তিনি এখন নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করে থানায় দালালি ও ফের চাঁদাবাজি শুরু করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
টুটু চৌধুরীর এমন কর্মকাণ্ড পুলিশ-প্রশাসনের নজরে এলে তিনি নতুন একটি প্রেসক্লাব গঠন করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকার বিনিময় কতিপয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভুঁইফোড় অনলাইন ও কিছু অখ্যাত পত্রিকার কার্ড বানিয়ে দেন। এর মধ্যে কম্পিউটারের দোকান থেকে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়েও সদস্য করা হয়েছে। চলমান অভিযানে গ্রেপ্তার এড়াতে, পুলিশ-প্রশাসনের থেকে সুবিধা পেতে ও ফের চাঁদাবাজি করার পরিকল্পনা থেকেই টুটু চৌধুরী এই প্রেসক্লাব গঠন করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এবিষয় ঐতিহ্যবাহী সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক বাঙ্গালী সময় পত্রিকার সম্পাদক মো. সেলিম মোল্যা বলেন, টুটু চৌধুরীকে আমি কখনো সংবাদ লেখতে দেখি নাই। সে একজন উশৃঙ্খল টাইপের লোক। তার অনৈতিক আচরনের তাকে কয়েকদিন আগে সালথা প্রেসক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এর পর থেকে ঐতিহ্যবাহী সালথা প্রেসক্লাব দখল করবে, সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে ঢুকতে দিবে না বলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এখন জানতে পারলাম, কিছু উসৃংখল লোক দিয়ে একটি নামধারী প্রেসক্লাব সংগঠন করেছে। তাদের নিয়ে সালথা প্রেসক্লাবের ভবন দখল করবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি সহযোগিতা নেবো। এরা আমার মালিকাধীন পত্রিকার ভূয়া আইডি কার্ড পর্যন্ত বানিয়ে ভূয়া সাংবাদিক তৈরী করছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে সালথা উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে এই প্রথম আমরা জানতে পারলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এলাকায় কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম মুরসিদ, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha