শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষার, জেলা প্রতিনিধি পাবনা
সকল প্রকার নিয়মনীতি উপেক্ষা করেই চলছে পাবনা জেলায় দেড়শতাধিক ইটভাটার কার্যক্রম। এতে ভয়াবহ হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
পাশাপাশি মাটি জোগান দিতে কাটা হচ্ছে কৃষিজমি আর ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ যার ফলে একদিকে যেমন কমছে আবাদি জমি অপরদিকে নির্বিচারে উজার করা হচ্ছে গাছপালা। রহস্যজনকভাবে এসব ইটভাটার কার্যক্রম উৎসব আকারে চললেও প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। মাঝে মাঝে নামমাত্র অভিযান চললেও তার সময়কাল খুবই ক্ষীণ সকালে অভিযান চালানো হয় আবার তা রাতেই স্বাভাবিক কার্যক্রম এ ফিরে যায়। কোন অদৃশ্য শক্তিতে কার ইন্ধনে চলমান হয় কেউ জানেনা।
স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করার সাথে সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে ইটভাটার মাটি কাটার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন হয়। এছাড়াও ইটভাটার মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিপুল অর্থের যোগান যায় সংশ্লিষ্ট সকল মহলে। ফলে বারবার এইসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উদ্যোগ নিলেও রহস্যজনকভাবে তা থেমে যায়। পরিবেশ এর ভারসাম্য রক্ষায় কয়লায় ইট পোড়ানোর কথা থাকলে তা না করে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, কোন কোন ভাটার নিজ আঙিনায় বসিয়ে নিয়েছেন স'মিল তাতে বোঝা যায় কাঠ পোড়ানোর উৎসবে মেতেছেন ভাটা মালিকেরা, জানা যায় ইট পোড়ানোয় ২৪ ঘন্টায় তিনশ মন জ্বালানি প্রয়োজন সেখানে কয়লায় পোড়ানোর কথা থাকলেও পুরোটাই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, এতে বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ।
পরিবেশ বিদরা বলছেন, যেভাবে কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে তাতে আগামীতে আমাদের কঠিন খেসারত দিতে হবে। কারন প্রকৃতি তার নিজ গতিতে জবাব দেন। বিশেষ পাবনার লক্ষীকুন্ডা, হেমায়েতপুরের অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা, বাগান গুলো নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি কাশি-শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাবনার উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের আবাদি কৃষি জমি কমছে। একটা ইটভাটার পাশে এখন আরেকটা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আবাদি কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। আমরা এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছি। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি কাজ না করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর, পাবনার সহকারী পরিচালক আব্দুল গফুর জানান পাবনা জেলায় ১৭৩টি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ৩০টি ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র থাকলেও এই ৩০টিরও সব কাগজ পরিপূর্ণ ঠিক নেই, আর বাকী ১৪৩টি ইটভাটা চলছে সম্পুর্ণ অবৈধভাবে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৫৫টি । ঈশ্বরদীর বেশিরভাগ ইটভাটা লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষি জমিতে অবস্থিত। কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ কোন ম্যাজিস্টেট পাওয়ার নেই যার ফলস্বরূপ জেলা প্রশাসন এ আবেদন করতে হয় জেলা প্রশাসন এর সুযোগ সুভিধা অনুযায়ী অভিযান চালানো হয়, তবে নিয়মিত অভিযন চালালে এই অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব। আমরা জেলা প্রশাসক স্যারের সমন্বয়ে একটা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা খুব শিগগিরই একটা একশনে যাবো ইনশাআল্লাহ।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশন এর উত্তরবঙ্গ ব্যুরোচিফ উৎপল মির্জা বলেন অবৈধ ভাটা চালানোর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সব আইনকানুন মেনে ভাটা পরিচালিত হোক। এক্ষেত্রে প্রশাসন এর সহযোগিতা কাম্য।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন পাবনা জেলায় যতগুলো ভাটা চলছে বেশিরভাগ ভাটাই অবৈধ এসব ভাটা মালিক কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কাঠ পোড়ানো সহ কৃষি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করছে যার ফলে আবাদী জমির পরিমান কমছে। এবং পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এটা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও কোন এক অদৃশ্য শক্তিতে বিরতিহীন ভাবে চলছে। এবিষয়ে আমরা প্রশাসন এর সুদৃষ্টি কামনা করি যাতে করে একটা নিয়মনীতি মেনে চলে।
এদিকে একাধিক ভাটা মালিক দাম্ভিকতা নিয়ে বলেন আমাদের লাইসেন্স নেই তাতে কি আমরা প্রশাসন ম্যানেজ করেই ভাটা চালাই। কোন প্রশাসন কে ম্যানেজ করেন এ প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন জেলা প্রশাসন, কিভাবে ম্যানেজ করেন তখন তারা বলেন ভাটা প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হয় এ টাকা তিন কিস্তিতে দেই আবার কেউ কেউ বলেন অগ্রিম দিয়ে আসছি। এই ম্যানেজ না করলে কি কি অসুবিধায় পড়বেন জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন টাকা না দিলে বা ম্যানেজ না করলে খরির গাড়ি,মাটির গাড়ি আটকে দিবে। ভাটায় অভিযান চলবে। তখন তো ব্যবসায়ীক ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
নিয়মিত অভিযান চলছে জানিয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম আনন্দ বাজার কে বলেন, ‘আমাদের তো লোকবল কম, ১৮ জনের জায়গায় মাত্র ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট। তারপরও আমাদের অভিযান চলছে, জরিমানা করা হচ্ছে। ভাটা প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে জেলা প্রশাসক বলেন আপনার মুখে প্রথম শুনলাম এবং আমি খুবই বিব্রত হলাম। আমরা এমন কোন অনৈতিক ভাবে অর্থ আদায় করিনি। আর এটার কোন সুযোগও নেই। আপনারা জানেন আমি এবং আমার টিম পরিচ্ছন্ন ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখবো আর সত্যি বলতে আমাদের মাত্র চারজন ম্যাজিস্টেট তার মাঝে একজন মেয়ে এবং সবাই নতুন এরা এখনো পরিপূর্ণ ভাবে বুঝতে পারেনা। তবে আপনারা সহযোগিতা করুন আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha