আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহী অঞ্চলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ, বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাও, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনাও। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। অধিকাংশক্ষেত্রে বিএমডিএর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলছে গভীর নলকূপগুলো। এতে এলাকায় এলাকায় রবি ফসল আবাদে দেখা দিয়েছে সেচ সংকট।
এদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ)কর্মকর্তারা বলছেন, গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে ব্যাপক রাজনৈতিক সুপারিশ ও চাপের মধ্যে পড়েছেন তারা। বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (সেচ) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্টের পর অধিকাংশ গভীর নলকূপ দখল হয়েছে। এখন অপারেটর নিয়োগ দিতে গিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বেদখল হওয়া নলকূপগুলো উদ্ধার করে নতুন অপারেটরদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।তিনি বলেন, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। মাঠ পর্যায়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে সেচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। গত ৫ আগস্টের পর আগের নিয়োগ করা অপারেটরদের কাছ থেকে গভীর নলকূপের চাবি কেড়ে নিয়ে নিজেরাই তালা ঝুলিয়ে দেন একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। সেই থেকে গভীর নলকূপগুলো নিজেদের মতো করে চালাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বিএমডিএ পরিচালিত প্রায় ১৬ হাজার ৫৬৭টি গভীর নলকূপের জন্য নতুন অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এসব পদের বিপরীতে ২৬ হাজার ৭৫২টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর নভেম্বর জুড়ে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর একযোগে অপারেটর নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়। এরপরই বঞ্চিতদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন বিএমডিএর মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় ও কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঘেরাও বিক্ষোভের কারণে বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে বসে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তারা মাঠ পরিদর্শনেও যেতে পারছেন না আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
জানা গেছে, অপারেটর নিয়োগ বাতিল ও তাদের দলীয় লোক নিয়োগের দাবিতে গত রোববার বিএনপি নেতাকর্মীরা গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাটে অবস্থিত বিএমডিএর জোনাল কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর রাজশাহীর তানোর জোনাল কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিএমডিএ কার্যালয়ে তালা দিয়ে দেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের সুপারিশ করা সব নেতাকর্মীকে অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে।
প্রকাশিত ফল বাতিলের দাবিতে একদিন পর বিএনপির আরেকটি স্থানীয় গ্রুপ আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তানোরে। গত ২ জানুয়ারি কৃষক সমাজের ব্যানারে তিন দফা দাবিতে জামায়াতের নেতাকর্মীরা পালটা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তানোর বাজারে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে বিএমডিএ কার্যালয় আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদ করেন তারা। বিএমডিএ কার্যালয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলার নিন্দাও করা হয় জামায়াতের সমাবেশ থেকে।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের অপারেটর নিয়োগের দাবিতে গত ২ জানুয়ারি গোদাগাড়ীতে স্থানীয় বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, অপারেটর নিয়োগে বিএনপির এক গ্রুপের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন। লাভবান হয়েছেন আরেক গ্রুপের নেতাকর্মীরা। গত ৩ জানুয়ারি অপারেটর নিয়োগকে কেন্দ্র করে নওগাঁর পত্নীতলা এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। মামলার ঘটনাও ঘটেছে।
জানা গেছে, বিএমডিএ গভীর নলকূপগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগ করে থাকে এক বছরের জন্য। অপারেটররা সেচ থেকে আহরিত রাজস্বের ওপর একটা কমিশন লাভ করেন। পাশাপাশি গভীর নলকূপগুলোর সব রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু তত্ত্বাবধানও অপারেটরদের করতে হয়। অপারেটর হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত তাকে অধিভুক্ত এলাকার কৃষক হতে হয়। গভীর নলকূপের সেচ এলাকায় কারও নিজের জমি না থাকলে তাকে অপারেটর নিয়োগ করা হয় না।
দলীয় সুপারিশ নিয়েও বিএনপির অনেক আবেদনকারী বাদ পড়েছেন, কারণ তারা কৃষক নন। এই বিষয়টি জানিয়েছেন বিএমডিএর সেচ উইংয়ের কর্মকর্তারা। চূড়ান্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সুপারিশগুলো থেকে শতকরা ৫০ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ হয়েছে তাদেরকে যাদের গভীর নলকূপ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় এলাকায় বিক্ষোভ ও ঘেরাও করছেন দলীয় বিবেচনায় সব অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে।
এবিষয়ে বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (সেচ) দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নতুন অপারেটরদের হাতে চাবি ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছি। কেউ নির্দেশ না মানলে তখন আইনি পন্থায় সমাধানের পথে যেতে হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিএমডিএর গভীর নলকূপের সাহায্যে উত্তরাঞ্চলে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে চলতি রবি মৌসুমে সেচ নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গভীর নলকূপগুলো ঠিকমতো না চালানো হলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।#
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha