আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর বাঘায়, বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। রোববার (০৫ জাহুয়ারী ২০২৫) উপজেলার আড়পাড়া বাজার সংলগ্ন বিদ্যালয় মাঠে-বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক অনোয়ার হোসেন পলাশ ও ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
এতে পলাশ গ্রুপের আহত হয়েছেন উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মুনসাদ আলীর ছেলে মানিক হোসেন (৪০), একই গ্রামের মানিকের ছেলে রুহান আলী (২৩), গাজীউর রহমানের ছেলে সুজন হোসেন ওরপে বাবু (৩৩)।
রেজাউল গ্রুপের আহত হয়েছেন-বাউসা হেদাতিপাড়া গ্রামের তফেজ প্রামানিকের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮), তেতুলিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে জাফর আলী (৪০), বাউসা মাঝপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রানা ইসলাম (১৮), হেদাতীপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ইনামুল হক (৩৫)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুল হক জানান, গুরুতর আহত মানিক হোসেন ও রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, বিগত পনের বছর আগে আড়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে অনোয়ার হোসেন পলাশের স্ত্রী জুবাইদা বেগম বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। দেশের পট পরিবর্তনের পর ওই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতির জন্য আবেদন পত্র জমা দেন অনোয়ার হোসেন পলাশ ও পল্লী চিকিৎসক মহসিন আলী। তার বিপরিতে দলবল নিয়ে একই পদে আরেকটি আবেদন জমা দেন রেজাউল করিমের সমর্থক ওয়ালিউর রহমান বিকুল ।
রোববার সকালে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন তাদের সমর্থিত অর্ধশতাধিক লোকজন নিয়ে ওয়ালিউর রহমান বিকুল এর পক্ষে সভাপতির আবেদন পত্র নিয়ে আড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আসে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকার কারণে তারা বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, সেই সময় কয়েকজন শিক্ষক প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে বাইরে বসে ছিলেন। প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তারা বাইরের চেয়ার ও বিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা কম্পিউটারের মাউথ পিচ-কি বোর্ড ভাংচুর করে। তা দেখে স্থানীয় লোকজন এসে বাঁধা দিলে দু’পক্ষ হাতুড়ি-লোহার রড, চাইনিচ কুড়াল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়।
ওযার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক স্থানীয় জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগের দিন শনিবার দিঘা গ্রামে মিটিং করে তারা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। সভাপতির পদের জন্য দলবল নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তারা চড়াও হয়। তাদের প্রতিহত করলে তারা হামলা করে এবং বিদ্যালয়ের চেয়ার, মাউথ পিচ-কি বোর্ড ভাংচুর করে। পরে সংঘর্ষে রুপ নেয়। যোগাযোগ করে সভাপতি রেজাউল করিমের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন জানান,তারা ওয়ালিউর রহমান বিকুলের পক্ষে তার সভাপতির পদে আবেদন পত্র জমা দিতে যান। মোটর সাইকেল নিয়ে কিছু লোক বিদ্যালয় মাঠে নামতেই আনোয়ার হোসেন পলাশ পক্ষের লোকজন তাদের উপর হামলা করে। তাদের সাথে থাকা আরো লোকজন একত্রিত হয়ে পাল্টা আক্রমন করলে সংঘর্ষ বাঁধে। দেড়ঘন্টা পরে তাদের লোকজন নিয়ে চলে আসেন বরে জানান নাসির উদ্দিন। তবে বিদ্যালয়ের চেয়ার, মাউথ পিচ-কি বোর্ড ভাংচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, একই দল করলেও রেজাউল করিম প্রভাব বিস্তার করে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্টানে তার সমর্থিত লোককে এডহক কমিটির সভাপতি করার জন্য জেলা বিএনপির প্যাডে, আহবায়ক আবু সাঈদ চাদের ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারন সম্পাদক এর সুপারিশ করে আবেদন পত্র জমা দিয়েছে। একইভাবে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়েও প্রভাব বিস্তার করে ওয়ালিউর রহমান বিকুলকে সভাপতি করার জন্য তার পক্ষে আবেদন জমা দিতে আসে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। প্রধান শিক্ষক আজিবররহমান জানান, উপজেলায় মিটিং এর কারণে বিদ্যালয়ে ছিলেন না। পরে শিক্ষকের মাধ্যমে- চেয়ার, মাউথ পিচ-কি বোর্ড ভাংচুরের বিষয়টি জেনেছেন। দলীয় সুত্রে জানা গেছে- অনোয়ার হোসেন পলাশ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহবায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জলের সমর্থক আর রেজাউল করিম জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাদের সমর্থক।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফম আশাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবু সাঈদ চাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ কররে বন্ধ পাওয়া গেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha