ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার
পাবনার ঈশ্বরদীর লক্ষীকুন্ডা ও সাহাপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুমোদনহীন প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করেছে ভাটা মালিক।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পদ্মা তীরবর্তী লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের বিলকেদা, কামালপুর, দাদাপুর এলাকায় চলছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে পোড়ানো হয় কাঠ।
অবৈধ এসব ইটভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত করার জন্য যেসব মাটি ব্যবহার করা হয় সেগুলো পদ্মা নদী ও বিভিন্ন এলাকার ফসলী জমি থেকে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন অসাধু ব্যাবসায়ীরা। এছাড়া অনেক জায়গায় ইটভাটার মালিকরা নিজেরাই নদী থেকে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যান। এসব ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। মাটি কাটায় বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি।
পদ্মা নদী ও আশপাশের বিভিন্ন ফসলী জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইটভাটায় মাটি ও কাঠের অতিরিক্ত ভারী যানবাহন যাতায়াতের কারণে স্থানীয় সড়কগুলো সংস্কারের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে৷ এসব অবৈধ ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের কারনে পাবনাবাসীর আশীর্বাদ খ্যাত মুজিব বাঁধটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে, বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাঁধটি প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। ধুলোবালিতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা শিশু কিশোরসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ।
অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম কিভাবে চলছে এমন প্রশ্নে ইটভাটা মালিকরা জানান, আমাদের ইটভাটা মালিকদের একটি সমিতি আছে। সমিতির পক্ষ থেকে সবকিছু ঠিক করা হয়। প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ একটি নির্ধারিত অর্থ সমিতিতে দিতে হয়। তবে কে চালায় এই সমিতি এ বিষয়ে জানা যায়নি।
এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন জানান, ঐ এলাকার রাস্তা ইটভাটা, মাটি এবং বালুর ব্যবসায়ীদের কারনে বেশিদিন স্থায়ীত্ব হয় না। সংস্কারের কয়েকদিনের মাথায় সড়কের বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। গেল কয়েকদিন আগেও ঐসব এলাকায় কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছে এবং সেগুলো রক্ষায় ভাড়ী যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন্য এলজিইডি অফিসের বিশেষ উদ্যোগে বারপোস্ট পুঁতে দেওয়া হয়। এ কারণে অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ী চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রাতের আধারে কে বা কারা সেই বারপোস্টগুলো ভেঙে দিয়েছে। এখন সেসব রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত ভারী গাড়ি চলাচল করছে।
এলাকাবাসীরা জানান, দিন রাত রাস্তা ও বাঁধের ওপর দিয়ে মাটি ও ইটভাটার বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। মুজিব বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই এলকার মাটি বেশ উর্বর তাই যেকোনো ফসলের বাম্পার ফলন হয়। বেশিরভাগই বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করেন তারা। তবে ইটভাটার ছাই উড়ে আসায় ও মাটি বহনের কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া নদী থেকে মাটি কাটার কারনে ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বাধ্য হয়েই ভাটা মালিকদের কাছে মাটি কাটার জন্য জমি বিক্রি করতে হয় বলেও জানান কৃষকরা।
এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনকে আরও তৎপর হয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha