ঢাকা , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মহম্মদপুরে জ্বর ও সর্দি-কাশির রোগী বাড়লেও আগ্রহ নেই পরীক্ষায়, মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি

মাগুরার মহম্মদপুরে সপ্তাহখানেক ধরে বেশিরভাগ পরিবারেই জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মহম্মদপুর উপজেলা সদরসহ গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগই শিশু-কিশোরই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। ভয়াবহ এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মৌসুমী অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ভোগান্তি ও আতঙ্ক।
অন্যদিকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন এদের অর্ধেকের বেশী রোগী জ¦র ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত।
করোনা উপসর্গে আক্রান্ত ৪০উর্দ্ধ ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করা হলেও আগ্রহ নেই বেশীর ভাগ মানুষের। যে কারনে মহম্মদপুরে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব ও সাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শহরে ব্যপক প্রচারভিযান চালালেও অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিধিবিধান অগ্রাহ্য করে জনসমাগম করছেন।
এদিকে গত ১ সপ্তাহে মহম্মদপুরে ৬০ শতাংশ করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। হঠাৎ মহম্মদপুরের গ্রামাঞ্চলে গুলোতে করোনা উপসর্গের সর্দি-কাশি ও জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১৮৮ গ্রামের বেশীর ভাগ ঘরে এখন এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেশি।
এতে স্থানীয় বাজার গুলোতে সর্দি-কাশি ও জ্বরের ট্যাবলেট সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধসহ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। চিকিৎসকরা বলছে এমন চলতে থাকলে করোনা প্রকোপ চরম আকার ধারন করতে পারে।
আজ শনিবার (২৬ জুন) মহম্মদপুর ছিল হাটবার। হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়েছে এদিন। অধিকাংশ মানুষ ছিল মাস্ক বিহীন। বিকেলের দিকে শহরের কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার এলাকায় দেখা গেছে ঠেলাঠেলি করে মানুষ বাজার করছেন। উপজেলা প্রশাসন মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শহরে ব্যাপক প্রচারভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও অধিকাংশ মানুষ তা অগ্রাহ্য করে জন সামাগম করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকে আজ শনিবার পর্যন্তু উপজেলায় ৮৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সনাক্ত হয়েছেন ১৯৪ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আবু আহসান জানান, গত এক সপ্তাহে ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহে ১৭ জন করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তবে এরা সবাই সুস্থ আছেন।
এদিকে তাপমাত্রার এ তারতম্যের কারণেই সর্দি-জ্বর বেড়ে গেছে। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে উপসর্গ থাকলেও মানুষ পরীক্ষা করাতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানি ও কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অনেকেই।
জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মনে করছেন, করোনা হোক আর সাধারণ জ্বর হোক, তা সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যাবে। অনেকের পজিটিভ হওয়ার কারণে পরিবারসহ লকডাউনে যেতে হয় তাঁদের। এই ভয়ে করোনা উপসর্গ থাকলেও বেশির ভাগ মানুষের করোনা পরীক্ষায় নেই আগ্রহ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন উপজেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠছেন। আবার কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোকছেদুল মোমিন বলেন, মহম্মদপুরের বিভিন্ন এলকায় সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। আমাদের বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫০-১৭৫ রোগী আসছেন। এসব রোগীর মধ্যে অর্ধেকই সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত। ওষুধে ভালো হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
এ ছাড়া আমরা লক্ষ্য করছি, অনেক রোগীর উচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে। কিন্তু সাধারণ ওষুধে তিন থেকে চার দিনে তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।’ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীই মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ছেন। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মাগুরা সিভিল সার্জন শহিদুল্লাহ দেওয়ান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালনো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। কিন্তু অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশিকে এখনো মৌসুমি অসুখ হিসেবে ভেবে পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছে না। খুব জটিল পর্যায়ে না গেলে তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে আসছে না। মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, সোমবার থেকে মহম্মদপুরকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হবে। এ সময় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

মহম্মদপুরে জ্বর ও সর্দি-কাশির রোগী বাড়লেও আগ্রহ নেই পরীক্ষায়, মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি

আপডেট টাইম : ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
মাগুরার মহম্মদপুরে সপ্তাহখানেক ধরে বেশিরভাগ পরিবারেই জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মহম্মদপুর উপজেলা সদরসহ গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগই শিশু-কিশোরই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। ভয়াবহ এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মৌসুমী অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ভোগান্তি ও আতঙ্ক।
অন্যদিকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন এদের অর্ধেকের বেশী রোগী জ¦র ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত।
করোনা উপসর্গে আক্রান্ত ৪০উর্দ্ধ ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করা হলেও আগ্রহ নেই বেশীর ভাগ মানুষের। যে কারনে মহম্মদপুরে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব ও সাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শহরে ব্যপক প্রচারভিযান চালালেও অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিধিবিধান অগ্রাহ্য করে জনসমাগম করছেন।
এদিকে গত ১ সপ্তাহে মহম্মদপুরে ৬০ শতাংশ করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। হঠাৎ মহম্মদপুরের গ্রামাঞ্চলে গুলোতে করোনা উপসর্গের সর্দি-কাশি ও জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১৮৮ গ্রামের বেশীর ভাগ ঘরে এখন এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেশি।
এতে স্থানীয় বাজার গুলোতে সর্দি-কাশি ও জ্বরের ট্যাবলেট সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধসহ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। চিকিৎসকরা বলছে এমন চলতে থাকলে করোনা প্রকোপ চরম আকার ধারন করতে পারে।
আজ শনিবার (২৬ জুন) মহম্মদপুর ছিল হাটবার। হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়েছে এদিন। অধিকাংশ মানুষ ছিল মাস্ক বিহীন। বিকেলের দিকে শহরের কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার এলাকায় দেখা গেছে ঠেলাঠেলি করে মানুষ বাজার করছেন। উপজেলা প্রশাসন মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শহরে ব্যাপক প্রচারভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও অধিকাংশ মানুষ তা অগ্রাহ্য করে জন সামাগম করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকে আজ শনিবার পর্যন্তু উপজেলায় ৮৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সনাক্ত হয়েছেন ১৯৪ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আবু আহসান জানান, গত এক সপ্তাহে ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহে ১৭ জন করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তবে এরা সবাই সুস্থ আছেন।
এদিকে তাপমাত্রার এ তারতম্যের কারণেই সর্দি-জ্বর বেড়ে গেছে। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে উপসর্গ থাকলেও মানুষ পরীক্ষা করাতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানি ও কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অনেকেই।
জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মনে করছেন, করোনা হোক আর সাধারণ জ্বর হোক, তা সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যাবে। অনেকের পজিটিভ হওয়ার কারণে পরিবারসহ লকডাউনে যেতে হয় তাঁদের। এই ভয়ে করোনা উপসর্গ থাকলেও বেশির ভাগ মানুষের করোনা পরীক্ষায় নেই আগ্রহ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন উপজেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠছেন। আবার কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোকছেদুল মোমিন বলেন, মহম্মদপুরের বিভিন্ন এলকায় সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। আমাদের বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫০-১৭৫ রোগী আসছেন। এসব রোগীর মধ্যে অর্ধেকই সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত। ওষুধে ভালো হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
এ ছাড়া আমরা লক্ষ্য করছি, অনেক রোগীর উচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে। কিন্তু সাধারণ ওষুধে তিন থেকে চার দিনে তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।’ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীই মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ছেন। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মাগুরা সিভিল সার্জন শহিদুল্লাহ দেওয়ান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালনো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। কিন্তু অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশিকে এখনো মৌসুমি অসুখ হিসেবে ভেবে পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছে না। খুব জটিল পর্যায়ে না গেলে তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে আসছে না। মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, সোমবার থেকে মহম্মদপুরকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হবে। এ সময় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।