ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হওয়া ২০ লাখ টাকাই ছিলো যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮ জনের নিয়োগ বানিজ্য ও হাসপাতালের আইসিইউর ঘুষের। অনুসন্ধানকালে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৬ মে ২০২৩ এ যশোর মেডিকেল কলেজে অফিস সহায়ক পদে ১৮ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তৎতকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মহিদুর রহমান। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজারের অধিক চাকুরী প্রত্যাশী পদগুলোয় যোগ্যতা অনুসারে অনলাইনে ২২- ০৫- ২০২৩ থেকে ০২-০৬-২০২৩ পর্যন্ত আবেদন করেন। সেই সময়ে যশোরের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এলাজিডি মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি অধ্যক্ষ মহিদুর রহমানের নিয়োগ বানিজ্যের টাকা। বিষয়টি সে সময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় নিয়োগ স্থগিত করেন এবং নিয়োগ বোর্ডের সভাপতিকে ডা. মহিদুরকে সরিয়ে দেন।
অধ্যক্ষ মহিদুর রহমানের পরে তার স্থলাভিষিক্ত হন বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আবু হাসনাত মো আহসান হাবিব। তিনিও কলেজের অধ্যক্ষ আসীন হয়ে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেই অনুসারে গত ৫ জুলাই যশোর মেডিকেল কলেজের অফিস সহায়কের ১৮টি শূন্যপদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা সরকারি এমএম কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এক হাজার ৫১ জন চাকরি প্রত্যাশী। খাতা মূল্যায়নের পর ৬ জুলাই ফলাফল প্রকাশ হয়। মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন ২৮৬ জন প্রার্থী। ৮ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হয়ে প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় কোটা সংরক্ষণ করে ১৮ জন প্রার্থীকে ১২ই জুলাই নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
আওয়ামীলীগের মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা.আবু হাসনাত মোহাম্মদ আহসান হাবিব সমন্বয় করে প্রতিটি নিয়োগপ্রাপ্তের কাছ থেকে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা করে আদায় করেন। সব মিলিয়ে ১৮ জনকে চাকুরী দিয়ে মোট ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ দেওয়া হয়। এর পর জুলাইয়ে বৈষম্য কোটাবিরোধী আন্দলোন বেগবান হলে এসব টাকা ব্যাংক অথবা অন্য কোথাও সরাতে পারেনি। এসব টাকা তারা নিজ স্থানে লুকিয়ে রাখেন।
এরপর গত ১৯ নভেম্বরে অনৈতিক উপয়ে উপার্জিত ২০ লাখ টাকা নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কেনাকাটার ধুয়ো তুলে যশোর থেকে বিমান যোগে ঢাকার উর্দেশ্যে রওনা হন। যশোর বিমান বন্দরে সিকিউরিটি কর্মকর্তারা তাকে ছেড়ে দিলেও ঢাকার বিষয়টি জানিয়ে দেন। তখন ঢাকা বিমান বন্দরের সিক্রিউরিটি কর্মকর্তা তাকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ঢাকায় বিমান বন্দরে অবস্থানরত কর্মকর্তারা তাকে হেফাজতে নেন। এবং তাকে এ বিপুল পরিমানের টাকার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিমান বন্দরের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে বিভিন্ন কৌশলে ম্যানেজ করে তিনি সেখান থেকে মুক্তি পান। পরে বিষয়টি চাউর হতে থাকলে সংবাদ মাধ্যম অধ্যক্ষের এ বিপুল পরিমানের টাকার বিষয়টি অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেন। শুধু নিয়োগ বানিজ্য নয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আবু হাসনাত মোহাম্মদ আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসিইউর বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা শারমিন বলেন, আমি মাস্টার্স ডিগ্রিসহ সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছি। কিন্তু মেডিকেল কলেজের অফিস সহায়ক পদে মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে আমাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা এসএসসি পাস করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকেই চাকুরী দিয়েছেন। তাছাড়া ৪-৫ হাজার পরীক্ষার খাতা ১ দিনে দেখে পরের দিন ফলাফলা দেওয়ার অর্থ কি দাড়ায়। এসব পরীক্ষা শুধুমাত্র একটা সিস্টেম। আগে থেকেই ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নিয়ে এ পদে চাকুরী দিয়েছেন। শুধু শারমিন নয়। অহেদুল ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম, সুমনসহ একাধিক চাকুরীর পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। আরো অভিযোগ পাওয়া যায়, যারা শুধুমাত্র ওই সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে লবিং করেছে তারাই শুধু চাকুরীতে নিয়োগ পেয়েছেন।
এদিকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, যশোর মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. আহসান হাবীব হাসপাতালের আইসিইউ এর দায়িত্ব গ্রহণের পর হাসপাতাল চত্তরে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছেন। ওই সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে আইসিইউতে বেড পাবে না। বেড পেতে হলে একজন রোগীর স্বজনকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। তা না দিলে কখনো আইসিইউর বেড পাওয়া যায় না। এ চক্রের মধ্যে কয়েকজন বিশেষ পরিচয়ের লোকও রয়েছে বলে জানান সূত্রগুলো।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. আহসান হাবীবের নিকটে ২০ লাখ টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যশোর ২৫০ শয্য জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ভর্তি ও বেড ভাড়ার টাকা নিয়ে তিনি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটার জন্য ঢাকাতে যাচ্ছিলেন। ঢাকার বিমান বন্দরের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে হেফাজতে নেন। পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে বোঝালে তারা তাকে মুক্তি দেন। তবে বিপুল পরিমানের নগদ টাকা কাছে নেওয়াও হাসপাতালের জন্য কোন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা-কাটা করতে যাচ্ছিলেন এমন প্রশ্নের তিনি সুদোত্তর দিতে পারেন নি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha