শেখ সাইদুল ইসলাম প্রবীন, খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আজ ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ কুষ্টিয়া জেলার খোকসা হানাদার মুক্ত দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনে পালিত হবে।১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলার দামাল ছেলেরা খোকসা থানা হানাদার মুক্ত করে স্বাধীন করেন। খুলনা বিভাগের মধ্যে খোকসা উপজেলা প্রথম হানাদার মুক্ত হয়।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনী ও গেরিলা বাহিনী একের পর এক হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ও দেশীও শত্রুদের পরাজিত করে। অবশেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দেশীয় শত্রু রাজাকার খোকসা থানা এসে অবস্থান করে খবর পেয়ে মুজিববাহিনী ও গেরিলা বাহিনী যৌথভাবে এক অভিযান চালান। মুজিব বাহিনীর ও গেরিলা বাহিনী প্রচন্ড আক্রমণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত করে খোকসা মুক্ত করেন। যার নেতৃত্বে খোকসা থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল সেই মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা কালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খান ।
মঙ্গলবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে তৎকালীন কমান্ডার আলাউদ্দিন খানের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি খোকসা হানাদার মুক্ত করার স্মৃতিচারণ করে বলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে আমি বিভিন্ন এরিয়া কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম খোকসা থানা মুক্ত করার জন্য, কিন্তু বিভিন্ন কমান্ডারের তৎপরতা কম থাকায় পরবর্তীকালে আমি কয়েকজন গুপ্তচর বা সংবাদদাতা সঙ্গে কথা বলে তাদের ম্যানেজ করে বলেছিলাম কখন থানা আক্রমণ করে মুক্ত করা যাবে তোমরা আমাদের খবর দিয়ে সহযোগিতা করবে।
ডিসেম্বরের ২ তারিখে ২-৩ জন গুপ্তচর বা সংবাদদাতা আমাকে এসে খবর দেয় আজকের মধ্যে খোকসা থানা আক্রমণ করতে পারলে থানা মুক্ত করা সম্ভব হবে, আমি তাদের কথা শুনে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে মুক্তিবাহিনী, গেরিলা বাহিনী ও মুজিব বাহিনীকে এক জায়গা করে আমরা খোকসা থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়। তিনটি গ্রুপে নিয়ে ২ ডিসেম্বর তারিখ দিবাগত রাত্রেই একটি গ্রুপকে থানামোড়ে পশ্চিম দিকে আরেকটি গ্রুপ খোকসা পাইলট হাইস্কুলের দিকে এবং আরেকটি গ্রুপ বর্তমান শিশু বিদ্যালয়ের সাইডে অবস্থান করে। তিনটি গ্রুপে ৯টা অস্ত্র ছিল।
একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলাম আমি নিজেই আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোদাচ্ছের হোসেন আনজু, আরেকটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুলাল। আমি এদেরকে বলেছিলাম আমি সংকেত দেওয়া মাত্রই তোমরা আক্রমণ শুরু করবা। যেহেতু আমাদের অস্ত্র ও গুলি কম ছিল সে কারণে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা থেমে থেমে গুলি চালাবো আর ওরা আমাদের গুলি শব্দ শুনে বেশি বেশি গুলি চালাবে এবং পরবর্তীতে ওরা গুলি শূন্য হয়ে পড়বে।
আমরা একটি গুলি চালালে ওরা প্রচুর গুলি চালিয়েছিল এক পর্যায়ে রাত ৩ঃ৩০ মিনিটের দিকে ওদের কয়েকজনকে আটক করা হয়, আটককৃতরা তাদের সহযোগীদের বলে তোমরা আত্মসমর্পণ করো নইলে আমাদেরকে মেরে ফেলবে এ সময় ওদের চিৎকারে হানাদার বাহিনী ও দেশীয় শত্রু রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে। তখন আমরা সবাই থানার মধ্যে ঢুকে পড়ে তৎকালীন ওসি আব্দুল গনিসহ ৩শত হানাদার বাহিনীও দেশীয় শত্রু রাজাকারদের আটক করে এবং ৩৬০টি অস্ত্র প্রচুর গুলি উদ্ধার করি।
পরদিন ৩ ডিসেম্বর তারিখে আমরা আমাদের সকল বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী এবং স্থানীয় জনগণ নিয়ে খোকসা পাইলট স্কুল মাঠ সহ বিভিন্ন জায়গায় লাল সবুজ পোশাক পড়ে অবস্থান করি। এ সময় মিলিশিয়া বাহিনী খবর পেয়ে খোকসার বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা পালিয়ে যায়। এবং পরদিন ৪ ডিসেম্বর তারিখে সকাল ১০:০০ টায় আমি ও খোকসা জানিপুর পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেনকে সাথে নিয়ে উপজেলা চত্বরে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করি, এ সময় খোকসা হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
খোকসা থানা সহ সকল এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় খোকসা থানা। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালনের লক্ষ্যে খোকসা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যার নেতৃত্বে খোকসা হানাদার মুক্ত হয়েছিলেন যোদ্ধা কালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha