আজকের তারিখ : নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ১১:৩২ এ.এম || প্রকাশকাল : অক্টোবর ৭, ২০২৪, ৮:৩৩ পি.এম
রূপগঞ্জে সরকারি জমিতে ডাইং কারখানায় হুমকির মুখে জনজীবন, পরিবেশ বিপর্যয়
নারাণয়গঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লীর পাশের সরকারি জমি ও খেলার মাঠ দখল করে নিটিং ডায়িং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা স্থাপনের পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারখানার নির্গত কেমিক্যালযুক্ত রঙিন ও গরম পানি ফেলা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী, জলাশয়, পতিত জমিতে, বিসিক জামদানি পল্লীসহ আশপাশের এলাকায়। তাতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেও সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নোয়াপাড়া জামদানি পল্লীর পূর্বপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫টি আলাদা দাগে ১২ বিঘা ৭ শতাংশ জমি রয়েছে। ১৯৯৬ সালে নোয়াপাড়া গ্রামের হাজী আলাউদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নেন। পরে রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিখিত অনুমতি গ্রহণ করে শতাধিক পরিবারের যুবকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সমবায় ভিত্তিতে মাছের খামার গড়ে তোলেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নবায়ন করে তিনি সমবায় মাছের খামার অব্যাহত রাখেন।
এর পর থেকে লিজ নবায়নের জন্য হাজী আলাউদ্দিন দৌড়ঝাঁপ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড লিজ দিতে গড়িমসি করে। উপায়ন্তর না দেখে গত ২০১২সালে তিনি আলাদতে মামলা দায়ের করেন। দেওয়ানী মামলা নং-৬৬৫/১২। পরে ওই জমিতে খেলার মাঠ ও জামদানি পল্লীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে মর্মে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রস্তাবে হাজী আলাউদ্দিন আদালতের মামলা তুলে নেন। সংসদ সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করে সেখানে খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়। এর পর থেকে এলাকার শিশু-কিশোররা এ মাঠে খেলাধুলা করে আসছে।
২০২৩ সালে হাজী আলাউদ্দীন মারা গেলে ইউনিফিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে ওই খেলার মাঠে একটি নিটিং ডায়িং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ট্রু ফ্রেব্রিক্স লিমিটেড ও ২২৪ নিটিং ডায়িং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং নামক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সে কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত রঙিন গরম পানি শীতলক্ষ্যা নদী, জলাশয়, পতিত জমিতে, বিসিক জামদানি পল্লীসহ আশপাশের এলাকায় ফেলা হচ্ছে। যে কারণে এলাকার মানুষ পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী এলাকাবাসীর পক্ষে জলাশয় ভরাট ও সরকারি জমিতে কারখানা স্থাপনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। পরে গত ২৮সেপ্টেম্বর হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে আলী আকবর বাদী হয়ে দুদক বরাবর আবেদন করেন।
নোয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, জায়গাটি খালি থাকার সময়ে এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করেছে। বর্তমানে ডাইং কারখানার নির্গত বর্জ্যে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
রূপসী কাজীপাড়া এলাকার জাকির হোসেন রিপন বলেন, ওই ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশে ছড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা ধরণের রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। কোন প্রকার ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) ছাড়াই কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের নির্গত বর্জ্য সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদী, খোলা জায়গায়, জলাশয়সহ আশপাশের এলাকায় ফেলছে। তাতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।
দক্ষিণ রূপসী গ্রামের কাজী আহমেদুল্লাহ আহাদ বলেন, স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগীতায় এ সরকারি জমি দখলে নেয়া হয়। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সরকারি সার্থে এই জমি ব্যবহার করা উচিত।
টু ফ্রেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জামান বলেন, টু ফ্রেবিক্স লিমিটেডের উৎপাদিত পণ্য শতভাগ রপ্তানিমুখী। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কারখানার জমি লিজ নেয়া। এখানে কোন অনিয়ম নেই। প্রতিষ্ঠানটি গ্রিন আর্থ তথা পরিবেশ বান্ধব সবুজ শিল্প-প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্য ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই।
তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৯১-৯২অর্থ বছরে বিসিক নোয়াপাড়ায় জামদানী পল্লি স্থাপন করে। তখন জামদানী শিল্পীদের মাঝে এখানে ৪শ’ প্লট হস্তান্তর করে। এসময় জামদানী পল্লির সুবিধার্থে পাশে সবুজায়ন, পরিবেশ বান্ধব, স্কুল, খেলার মাঠ স্থাপন করা হয়। দুর্ঘটনাজনিত আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি সরবরাহে এখানে জলাশয়ও রাখা হয়। সেই জলাশয়সহ ১২বিঘা ৭শতাংশ জমি বেদখল হয়ে যায়। সরকারি এ সকল জমি উদ্ধার করা প্রয়োজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নরসিংদী অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, দুদক থেকে এ বিষয়ে তিনি একটি নোটিশ পেয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে স্থাপনা নির্মাণেরও কোনো বিধান নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও তারাবো পৌরসভা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি জমি বেদখল হয়ে থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha