দুই শতাধিক শিক্ষার্থী তার মধ্যে ছাত্র ১২০ ও ছাত্রী ১৩০ জন, শিক্ষক মোট এগারো জন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ,ইংরেজি, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান ও চারুকারু, বিষয়ের শিক্ষক নাই। এ পরিসংখ্যান ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে ভবানীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ক্লাস চালাতে হিমশিম খাওয়ায় নেপথ্যে আছে। এ প্রতিষ্ঠানের মোট ১৬ টির মধ্যে পাঁচটি পদের শূন্যতা। বিদ্যালয় গিয়ে উপস্থিতি দেখা গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
শ্রেণী কক্ষের বেহালদশার মধ্যে কিভাবে পাঠদান চলছে জানতে চাইলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, ভবন ও শ্রেনীক্ষের অভাবে পাঠদানে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। ৩ রুমের পাকা শ্রেনী কক্ষসহ শিক্ষক মিলনায়তনের ভবন অনেক পুরাতন হওয়ায় গ্রেড বিম দেবে গিয়ে দেয়াল ও ছাদ ফেটে গিয়ে পলেস্তারা ধসে পরেও ছাদ থেকে পানি পরে যার কারনে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেনা। এমনকি টিনের ঘরের শ্রেনী কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা খুলে রেখেছি কারন এত খারাপ অবস্থা বৃষ্টির পানি পড়ে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে শিক্ষক সংকটের কারনে ইংরেজি, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান ও চারুকারু বিষয়ের ক্লাস চালাতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই আমরা যে কয়জন আছি সবাই মিলে বেশি বেশি ক্লাস নিচ্ছি। সব সহকারী শিক্ষকদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪/৫টি ক্লাস নিতে হচ্ছে। উল্লেখিত পদের শিক্ষক খুবই দরকার বলে জানান সহকারী শিক্ষকরা।
স্কুল সূত্রে জানা যায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ও ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্তহয়।
শিক্ষার্থী কম থাকার বিষয়ে ভবন সংকটকে দুষলেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, টিনের শ্রেণীকক্ষ সেটার দরজা জানালা ভাঙ্গা, স্কুলে আসা যাওয়ার রাস্তা ভালোনা। বৃষ্টির দিনে খুব খারাপ অবস্থা হয়, বেশি বৃষ্টিতে এখানে বসা যায়না। আমার স্কুলের রেজাল্ট ভালো। তারপরও শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য বাড়ি বাড়ি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আমাদের স্কুলে ভর্তি করাই কিন্তু কয়েকমাস পরে তারা অনেকেই চলে যায় শুধু অবকাঠামোগত দিক দেখে। আবার আশে পাশে ছোট ছোট মাদরাসা আছে সেটাও শিক্ষার্থী কমার কারন। তাই আমাদের স্কুলের নতুন একটা ভবন ও চাহিদা দেয়া শিক্ষক হলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান আরো উন্নত করতে পারবো।
সাবেক শিক্ষার্থী মো. সজিব হাওলাদার বলেন, নাচনমহল ইউনিয়নের মধ্যে এটা ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবানীপুর স্কুলে পাশের ইউনিয়ন থেকেও শিক্ষার্থী আসতো আর এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি আমাদের প্রানের প্রতিষ্ঠান, অতি দ্রুত বিদ্যালয়টির সংস্কার আশা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, সাবেক সভাপতি এম আলম খান কামাল একটানা ১৫ বছর সভাপতি থেকে কোন প্রকার উপকার হয়নি স্কুল ও শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেছেন। একটা নতুন ভবনের জন্য কোন চেষ্টা কোনদিন করেনি। জেলা আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় কেউ তাকে কিছু বলতে পারেনি,সব সময় দলের প্রভাব দেখিয়ে চলতেন।
সহকারী শিক্ষকরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি মেয়ে শিক্ষার্থী বেশি তার মধ্যে এটা খুবই অরক্ষিত নেই সীমানা প্রাচীর। ঘূর্ণিঝড় রেমালে শ্রেণীকক্ষের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, যাতায়াতের রাস্তাও ভালো না। নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে শ্রেনীকক্ষ স্যাঁতস্যাতে ভিজা থাকে এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় না তাছাড়া বিষয়টি অস্বাস্থ্যকরও বটে, মাঠ ও ওয়াস ব্লক ও ভালো নাই। তারমধ্যে শিক্ষক সংকট নিয়েই সমস্যায় আছি আমরা।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইমা জান্নাত বলেন, আমাদের স্কুলের ক্লাস রুমের অবস্থা খুবই খারাপ কাদা কাদা হয়ে যায়। আমাদের ভালো ক্লাস রুম দরকার। দরজা জানালা ভালো না। এতে আমাদের কষ্ট হয় ক্লাস করতে।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মার্জিয়া হক মিম বলেন, আমাদের স্কুলে মেয়েদের জন্য কোন কমন রুম নাই। ক্লাস রুম ভাঙ্গাচুরা সরকারের কাছে আমাদের আবেদন যাতে করে আমাদের স্কুলে একটি ভালো ভবন করে দেয়।
দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. পিয়াস জানান, স্কুলের অবস্থাতো খারাপই সেই সাথে স্কুলে আসা যাওয়ার রাস্তা আরো খারাপ। নদী ভাঙ্গনের কারনে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় খেলার মাঠে পানি জমে থাকে বারোমাসই।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা আরো বলেন, বিগত বছরে আমাদের স্কুলে কোন সরকারি অনুদান পাইনি। আমাদের বিদ্যালয়টিতে চাহিদার তুলনায় অর্ধেকও নাই শ্রেনী কক্ষ। এনটিআরসিএ'র কাছে শিক্ষকের আমরা চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু কবে পাবো সেটা জানিনা। এ ব্যাপারে আমি কয়েকবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেছি।
নলছিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার আযীম বলেন, আমি জানি ভবানীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মারাত্নক ভবন ও শিক্ষক সংকট আছে। আমি কর্তৃপক্ষ জানাবো ভবনের বিষয়টি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুনিল চন্দ্র সেন বলেন, জেলায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ভবন সংকট আছে। ভবন সংকটের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha