বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গণহত্যাকারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের অনেকে ঘাপটি মেরে আছে। ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা লুটের টাকা দিয়ে কৃত্রিম অরাজকতা তৈরি করে শেখ হাসিনার ফিরে আসার পথকে সুগম করার ষড়যন্ত্র করছে। সেই ক্ষেত্রে কারা মদদ দিচ্ছে এবং কাজ করছে তাও আমরা জানি। এদের কাছে অনেক কালো টাকা। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসন আমলে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েছেন ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। টাকা পাচার হয়েছে ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা দিয়ে কিছু উন্নয়ন করলেও তার মধ্যে থেকেও আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীরা লুট করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেদিকে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় যশোর চৌরাস্তা মোড়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'বিচার বিভাগ ছিল শেখ হাসিনার জল্লাদখানা, কসাইখানা। বিরোধীদলের নেতা- কর্মীদের সাজা দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার পছন্দমতো ব্যক্তিকে বিচারপতি বানিয়ে এই কসাইখানা থেকে ইচ্ছামতো সাজা দেওয়া হয়েছে। এই কসাইখানা ও পুলিশ প্রশাসনে এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা রয়েছে। এক সময়ে রাতের আঁধারে পুলিশ কত অন্যায় করেছে। তাদের (আওয়ামী লীগ) নির্দেশে রাতের আঁধারে কত নেতা- কর্মীদের ধরে এনেছে। খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতা- কর্মীদের সাজা দিতে তিনি এ অপতৎপরতা চালান।'
ভারতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'ভারতের কাছে কোহিনূর ছিল শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পতনে যেন ভারতের মনবেদনা কমছে না। তারা সীমান্ত রক্তাক্তের নির্দেশ দিচ্ছে। আমিত শাহর উসকানিমূলক বক্তব্য তার প্রমাণ। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দেশে যা হচ্ছে, তার সঙ্গে কারা জড়িত তা দেশের মানুষ বোঝে।'
খুলনার দাকোপে মন্দিরে উড়োচিঠি প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে হিন্দুদের পূজায় অংশ নেয়। পূজাতে গিয়ে খেলনা ক্রয় করে। সব ভেদাভেদ ভুলে আরতিতে অংশ নেয়। এই সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এই সম্প্রতি ভাঙছেন শেখ হাসিনা। ভারতে বসে ভারতকে উসকে দিচ্ছেন তিনি। পাকিস্তান আমল থেকে বিএনপির আমল পর্যন্ত হিন্দুদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, নির্যাতন হয়নি। তাহলে এখন কেন হচ্ছে! শেখ হাসিনার ইন্ধনে এই অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে। এই চক্রান্ত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ও তার প্রভুদের যৌথ প্রযোজনা।'
তিনি বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের পর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও স্বৈরাচারের দোসর ওই আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা দেশে প্রতিবিপ্লবের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই। যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে দেশকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করেছে, সেভাবে আমাদের সবাইকে তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নির্দেশ মেনে একযোগে কাজ করতে হবে। কোনভাবেই এই ছাত্র- জনতার সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কোনো কারণে যদি এই সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।'
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোটবিহীন নির্বাচনে কোনো জনপ্রতিনিধিকে দেশের মানুষকে দেখতে চায় না। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের এখনো ক্ষমতায় রেখেছেন কেন। এরাই তো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় দোসর, এলাকার সন্ত্রাসী গুণ্ডাপাণ্ডা। এই গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে শেখ হাসিনা। এই যশোরের এমপির মত একেকটি এলাকার দুবৃত্ত এমপিরা তাদের নিজেদের গুন্ডাপান্ডা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বর বানিয়েছেন। সুতরাং অবিলম্বে এদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির (খুলনা বিভাগ) সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্জ্ব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, '৫ আগস্টের পর আমরা ১৬ বছরের আন্দোলনের অর্জনের প্রাথমিক ধাপ পার করতে পেরেছি। এখনো অনেক পথ বাকি রয়েছে। আমাদের মূল টার্গেট গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন না হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার শপথ না নিচ্ছে ততদিন পর্যন্ত মনে রাখতে হবে। আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলাম। আজও বিরোধী দলেই আছি। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলমান। এ থেকে বিচ্যূত হওয়ার সুযোগ নেই।'
যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, অ্যাড. মোহাম্মদ ইসহাক, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম, আলহাজ্ব মিজানুর রহমান খান, অ্যাড. জাফর সাদিক, আব্দুস সালাম আজাদ, গোলাম রেজা দুলু, যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহম্মেদ ও মঞ্জুরুল হক খোকন প্রমুখ।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সালের পরিচালনায় গণসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ- সভাপতি সরদার নুরুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ- সভাপতি নির্মল কুমার বিট, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হায়দার রানা, যুগ্ম সম্পাদক রেজোয়ানুল ইসলাম খান রিয়েল, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা তরফদার রয়েল, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশের আগে দুপুর থেকে জেলার ৮ উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহকারে অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।