মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সবুজ মিয়াক গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০, সিপিসি ৩। এ ব্যাপারে এক প্রেস ব্রিফিং এ আজ দুপুরে তাদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানের লে: কমান্ডার কোম্পানি অধিনায়ক কেএম শাইখ আক্তার। এ সময় ফরিদপুরের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয় গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০:৩০ মিনিটে ফরিদপুর জেলার ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বিলমামুদপুর এলাকার কলাবাগান থেকে এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। সেই সময় ব্যাপক চেষ্টার পরও মৃত নারীর পরিচয় জানা যায়নি। এরপর কোতয়ালি থানা পুলিশ মৃত নারীর পরিচয় শনাক্তে কাজ শুরু করে। দীর্ঘদিন পর জানা যায় যে, ওই নারীর নাম নাসরিন এবং তার বাড়ী চট্টগ্রামে। নাসরিনের বোন সোনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। পরে তদন্তের এক পর্যায়ে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আরজু মল্লিক, পিতা- সেলিম মল্লিক, সাং- গেরদা বিলমামুদপুর, থানা- কোতয়ালি, জেলা- ফরিদপুর নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আরজু মল্লিক’কে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায় সে স্বীকার করে যে, তার বন্ধু ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আসামী সবুজ মিয়া উক্ত নাসরিনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফরিদপুরে নিয়ে আসে। এরপর নাসরিনকে তাদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে আসলে আরজু মল্লিক ও সবুজ মিয়া মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নাসরিনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়পূর্বক তাকে পৈশাচিক ভাবে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর নাসরিন বিষয়টি থানা পুলিশকে জানাবে বললে আরজু মল্লিক ও সবুজ মিয়া মিলে নাসরিনকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে উল্লেখিত এলাকার একটি কলাবাগানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। উক্ত ঘটনা তৎকালীন সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র ব্যাপক আলোচিত হয় ও সুশীল সমাজের বিবেক নাড়িয়ে দেয়।
উক্ত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানায় একটি গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪৭, তারিখ-২৩/১২/২০১৭ইং, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং/২০০৩) এর ৯(৩)/৩০। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আরজু মল্লিক ও সবুজ মিয়াকে আসামী করে ১৯ নভেম্বর ২০১৮ইং তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
বিজ্ঞ আদালত এর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল উক্ত ঘটনার বিচারকার্য সমাপ্ত করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ উল্লেখিত ধর্ষণ পূর্বক হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত সবুজ মিয়া ও আরজু মল্লিক’কে মৃত্যুন্ডাদেশ এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা প্রদান করেন। রায়ের সময় আসামী সবুজ মিয়া পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত মৃত্যুদন্ডের সাজা পরোয়ানা জারী করেন।
ইতোমধ্যে ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যেকর সৃষ্টি করে। রায়ের পর পরই র্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্প ব্যাপক আলোচিত এই ধর্ষণপূর্বক হত্যা মামলার একমাত্র পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সবুজ মিয়াকে গ্রেফতারের লক্ষ্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৩ জুলাই ২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ৯:৩০ মিনিটে র্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ডিএমপি ঢাকার সূত্রাপুর থানাধীন নারিন্দা কাঁচা বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২০১৭ সালের ব্যাপক আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এই মামলার মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সবুজ (৩৬), পিতা-বাবুল মিয়া @ বাবুল মিস্ত্রি, মাতা-ফিরোজা বেগম, সাং-মামুদপুর, হালিমের ভিটা, থানা্-কোতোয়ালি, জেলা-ফরিদপুর’কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী সবুজ মাদারীপুর, উজিরপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজের নাম পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে বসবাস করে ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধৃত আসামী একাধিক বিবাহ করেছে ও নিজের পরিচয় গোপণ রেখে সে একেক সময় একেক জায়গায় অবস্থান করতো। সর্বশেষ রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুর থানাধীন নারিন্দা এলাকায় গাড়ীর মিস্ত্রি পেশায় নিযুক্ত ছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।