ভেড়ামারায় দিনদিন পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। আকস্মিক ভাবে পদ্মানদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভেঙে পড়ছে নদী-তীরবর্তী এলাকা। হুমকিতে নদী সংলগ্ন বসতভিটা ও ফসলি জমি। পদ্মার তীব্র স্রোতে দিন দিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে।
ফলে, ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। ভাঙন থেকে মাত্র ১'শ মিটার দূরে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। অপর দিকে বার মাইল টিকটিকি পাড়ার সামনে বিশাল এলাকা পদ্মা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক'শ একর ফসলি জমি।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা বেড়িবাঁধের পাশেই রাইটা পাথর ঘাট। ভেড়ামারা থানার একটি অন্যতম সুন্দর্যময় দর্শনীয় স্থান। এখানে রয়েছে পিকনিক স্পট। প্রতিদিন পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাঁধের কাছে এসে পানির ধাক্কা লাগছে। পানির স্রোতে ঘুরপাক ও পানির তীব্রতায় রায়টা বেড়িবাঁধ ভাঙতে শুরু করেছ। এই বাঁধ ভেঙে গেলে রায়টা নতুন পাড়া ফয়জুল্লাপুর এই দুইটি গ্রাম আগে পানিতে ডুবে যাবে। পানি বন্দি হয়ে পড়বে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি।
আষাঢ় মাসে পদ্মায় পানি তুলনা মুলক কম হলেও বন্যার পানি আসা শুরু করেছে। পদ্মায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণেই পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা দেখে স্থানীয় মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বার মাইল এলাকায় আবার গতকাল থেকে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধকি বিঘা ফসলি জমি।
অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে নদী থেকে বালি উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে আয়ের একমাত্র উৎস ফসলি জমি হারিয়ে নদীর তীরবর্তী জনপদের মানুষগুলো চরম বিপদের মধ্যে রয়েছেন।
এলাকাবাসী বলেছেন, ভেড়ামারা বার মাইল এলাকায় পদ্মায় বৈধ বালুমহাল না থাকলেও প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছেন। এর ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে এ সকল এলাকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাট।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন জানান, প্রতি বছর পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রায়টা বেড়িবাঁধে পানির আঘাত হানে। মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার মানুষ। এবারও তাই হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকলে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক গ্রাম ডুবে যাবে।
কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেন, দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙ্গন রোধে জরুরিভাবে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু জানান, এখন যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের উদ্যোগ রয়েছে, দুই একদিনের মধ্যেই ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
ভেড়ামারা বাহিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রওশন আরা সিদ্দীক বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে সাধারন জনগন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভেড়ামারার ১২ মাইল এলাকার টিকটিকি পাড়ার সামনে বিশাল এলাকা পদ্মা ভাঙনে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, এ সময় পানি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বন্যা বা ভাঙনের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি আছে।
এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত হাফিজুর রহমান জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতায় ইতোমধ্যে ধান, কলা বাগান, নানা প্রকার শাকসবজির মাঠ নদীতে ভেঙে গেছে। ভাঙনে ১৫০ একর জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাড়িঘর ভাঙনের মুখে। ভাঙ্গন রোধে বিগত দিনে সরকার কাজ করেছে বর্তমান সরকার জিও ব্যাগ বরাদ্দ দিলেও তা দিয়ে ভাঙ্গন পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না, আমরা বর্তমান সরকারের কাছে কামনা করি, এ ভাঙ্গন কিভাবে রোধ করা সম্ভব তার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ভেড়ামারা ভাঙন কবলিত এলাকা আজ ৯ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল আড়াইটার সময় বার মাইলসহ বেশ কয়েকটি ভাঙন এলাকা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পশ্চিমাঞ্চল, ফরিদপুর জোনে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান সিরাজ, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকেীশলী শ্রী অসীম কুমার ও মসফিকুর রহমান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল মুকুল, ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল আলম চুনু, সাবেক পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব শামিমুল ইসলাম ছানা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আলহাজ্ব জাকির হোসেন বুলবুল, যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজি, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু, বাহিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রওশনআরা সিদ্দীকসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha