আজকের তারিখ : নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ১:৩২ পি.এম || প্রকাশকাল : মে ৭, ২০২৪, ১১:৩৩ পি.এম
বিএমডিএ প্রকৌশলী কাসেমের ডিগ্রী প্রতারণা !
রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তিনি নামের আগে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রী ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সচেতন মহলের ভাষ্য, যে কর্মকর্তা ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে প্রতারণা করেন। নৈতিকভাবে তিনি সেই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নামের আগে ‘ড.’ডিগ্রী ব্যবহার করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আবুল কাসেম। কিন্তু তিনি আসলেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন কিনা এর প্রমাণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ তাঁর গবেষণাপত্র (থিসিস) জমা দিতে বলেছিল। এরপর তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস জমা দিয়েছেন, সে বিশ্ববিদ্যালয়টির দেশে পিএইচডি ডিগ্রি পরিচালনার কোনো অনুমোদনই নেই। গত সোমবার সকালে তিনি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক বরাবর ‘আটলান্টিক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস জমা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রকৌশলী আবুল কাসেম নিজেই। তিনি বলেন, ‘থিসিস পেপার জমা দিতে আমাকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। একদিন আগেই আমি থিসিস পেপার জমা দিয়েছি। আমি আটলান্টিক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ শাখা থেকে ডিসট্যান্ট লার্নিং বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছি।’
কাসেম বলেছেন, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদেশি ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির দেশীয় শাখায় পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তবে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পর্যন্ত (স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫ সাল) কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশীয় শাখাকে পিএইচডি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, ‘এ রকম বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রি বহু মানুষের আছে। অন্যদের ব্যাপারে কথা না উঠলে আমার ব্যাপারে কেন? আসলে একটা মহল আমাকে সমালোচিত করতে চাচ্ছে।’
জানা গেছে আবুল কাসেম প্রকৌশলী হিসেবে বিএমডিএতে যোগদান করেন ১৯৯৪ সালে। ২০১০ সাল থেকে তিনি নামের আগে ‘ড.’ লেখা শুরু করেন। আদৌ তিনি পিএইচডি করেছেন কিনা, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। কারণ পিএইচডি পড়াশোনার জন্য তিনি কখনো ছুটি নেননি। পিএইচডি ডিগ্রি ব্যবহার করে তিনি নিজেকে জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করেন। বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। বিএমডিএর অনুমোদিত জনবল কাঠামোতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কোনো পদই নেই। অথচ তিনি চতুর্থ গ্রেডে অবৈধ এ পদে আসীন হয়েছেন।
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আবুল কাসেমকে এই পদে আপগ্রেডেশন দেওয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা পড়ে যে, আবুল কাসেম ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। তখন মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলেও ধাঁমাচাপা পড়ে যায়।
সম্প্রতি ফের অভিযোগটি বিএমডিএকে যাচাইয়ের নির্দেশ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। আবুল কাসেম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকলে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন কিনা, অনুমোদন নিয়ে থাকলে এর সনদ ও গবেষণাপত্র (থিসিস) দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া নামের আগে ‘ড.’ শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন কিনা, সেটিও জানাতে বলা হয়। পরে নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ চিঠি দিয়ে এই প্রকৌশলীর কাছে তাঁর থিসিস পেপার ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন।
আবুল কাসেম স্বীকার করেছেন, নামের আগে ডক্টরেট ডিগ্রির ব্যবহার কিংবা ডিগ্রি অর্জনের জন্য তিনি মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেননি। ছুটির দিনে ক্লাস করার কারণে কোনো ছুটি নেওয়ারও প্রয়োজন হয়নি। তিনি দাবি করেন, বিএমডিএর যত কর্মকর্তা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাঁদের কেউ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেননি। স্থানীয়ভাবে বিএমডিএর অনুমতিতেই তাঁরা ডিগ্রি নিয়েছেন। নিজের বেলাতেও তিনি এমনটি করেছেন।
এবিষয়ে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘আবুল কাসেমের কাছ থেকে একটি থিসিস পেপার পেয়েছি। কিন্তু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন ও নামের আগে ডিগ্রি ব্যবহারের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। সে রকম কোনো চিঠি পাইনি। মন্ত্রণালয় যেহেতু বিষয়টি জানতে চেয়েছে, তাই আমি সেভাবেই সবকিছু লিখে পাঠিয়ে দেব। তারপর মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha