কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের চর এলাকা গ্রামে তালপাতার হাতপাখা বানানোর ধুম পড়েছে। যদি ছন্দের তালে বলি ''আমার নাম তালের পাখা, শীতকালে দেইনা দেখা, গ্রীষ্ম কালে প্রাণের সখা''।
তীব্র গরমে তালপাতার কারিগরদের এখন অনেক কদর। ভেড়ামারা উপজেলায় মাসব্যাপী ধরমপুর ইউনিয়নের বৃত্তিপাড়া গ্রামে ঘোড়ে শাহ্ মাজারে মেলাকে কেন্দ্র করে জমিয়ে উঠেছে তালপাতার হাতপাখা কারিগরের ব্যাপক চাহিদা। তাই তারা আপন মনে বুনে চলেছেন একের পর এক দৃষ্টিনন্দন তালপাখা। আর সেসব তালপাখার কদর শুধৃ এই মেলই নয় গুটা ভেড়ামারা উপজেলায়। প্রতি বছরই গরমের সময় এখানে তাল পাখা বিক্রির ধুম পড়ে।
বাজারে প্লাস্টিকের হাতপাখা পাওয়া গেলেও তা তালের হাতপাখা বা খেজুর পাতা, কাপড়ের তৈরি নকশীপাখার মর্যাদা নিতে পারেনি। তালের হাতপাখার বাতাস একদম শীতল। আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় হাতপাখার কদর দিনে দিনে বাড়ছেই। হাতপাখার চাহিদা গরমে কখনো কমে না। গ্রীষ্মের গনগনে সূর্যতাপ ও খরায় নাস্তানাবুদ মানুষের কাছে হাতপাখার কদর এখন আরও বেশি। এ তীব্র তাপদাহ থেকে নিস্তার নেই কারও। মাতৃক্রোড়ের শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ, চাকুরে কিংবা দিনমজুর, ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল সবাই।
তালপাখার গ্রাম হিসাবে পরিচিত চর এলাকা গ্রামে ১০০'শ কারিগর রয়েছে তালপাতা পাখা তৈরির। গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী তালপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সংসারের কাজের পাশাপাশি পুরুষের সঙ্গে তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন গ্রামের অনেক নারী। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজের চাপ বাড়ে তালপাখা গ্রামে’র মানুষদের। এ সময় তালপাতা দিয়ে বানানো পাখার চাহিদা বেড়ে যায় বহু গুণ। তালপাতার পাখা বানিয়ে সচ্ছলতাও ফিরেছে অনেক সংসারে।
মহিলা তালপাতা কারিগর আমেনা খাতুন জানান, পাতা সংগ্রহ, ধোয়া, শুকানো এবং পরিষ্কার করার কাজটি করে পুরুষরা। আর পাখা আকৃতির মতো পাতাগুলো কেটে রং দেওয়া, বাঁশের কাঠি যুক্ত করা, সুতা দিয়ে বাঁধাইয়ের পর পাখার পূর্ণ রূপ দানে নারীরা সিদ্ধহস্ত। তারা জানান, একজন নারী প্রতিদিন ৬৫ থেকে ৭৫ পিস পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারেন।
পুরুষ কারিগর আব্দুল মোমিন জানান, জেলা ও জেলার বাইরে থেকে পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালের পাতা পিস প্রতি কেনা হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। প্রতি পিস তালপাতা থেকে দুটি পাখা তৈরি হয়। প্রতিটি বাঁশ কেনা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। একেকটি বাঁশে পাখা হয় শতাধিক। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা। তৈরি পাখাগুলো মান ভেদে পাইকারি বিক্রয় হয় ১৮ থেকে ২৫ টাকায়। আর হাত বদলে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত গিয়ে সেটির মূল্য দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এখানকার তৈরিকৃত পাখাগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়। তবে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে ওঠানামা করে পাখার চাহিদা।
মৌসুমের শুরুতে ১৩০ থেকে ১৪০টি পাখা তৈরি হলেও গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০০ থেকে ২৫০টি পাখা তৈরি করতে হচ্ছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাতপাখার প্রধান উপকরণ ‘তালপাতার’ সংকটের কথাও জানান তিনি।
তালপাতার পাখা শীত মৌসুমে চলে না। তখন কারিগররা বেকার থাকেন। সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কারিগর স্বাসছন্দে জীবনযাপন করতে পারত বলে জানান জাহির উদ্দিন। তিনি জানান, মূলত স্থানীয় পাইকাররা কারিগরদের কাছ থেকে পাখা কিনে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করেন।
অন্যদিকে পাখা গ্রাম থেকে সংগৃহীত পাখা, আশপাশের জেলা উপজেলার বিক্রয়কারী একাধিক পাইকার জানান, এখানকার তৈরি পাখার গুণগত মান ভালো থাকায় বাজারে এর কদর রয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকার দরুন বিক্রি এবং মুনাফা দুটোই সন্তোষজনক বলেও জানান তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha