তীব্রদাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশা করে রাজশাহীর বাঘায় ‘ইস্তিসকার’ নামাজ আদায় করেছেন স্থানীয়রা। নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ মোনাজাত।
আব্বাস উদ্দীন আহমদ এর গানের সুরে পাড়ার ছেলেরাও প্রার্থনা করছে-বেলা দ্বি-প্রহর, ধু-ধু বালুচর, ধূপেতে কলিজা ফাটে, পিয়াসে কাতর, আল্লাহ, মেঘ দে,আল্লাহ পানি দে, ছায়া দেরে তুই আল্লাহ, আল্লাহ, মেঘ দে,পানি দে। ফাডা ফাইট্টা ফাইট্টা রইছে যত খালা-বিলা-নদী, পানির লাইগা কাইন্দা ফিরে পঙ্খী জলধি, আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই আল্লাহ। পানির প্রত্যাশায় ছিন্নি মানত করছেন নারিরাও ।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৯টায় উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে খোলা আকাশের নিচে তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশা করে ‘ইস্তিসকার’ নামাজ এর আয়োজন করা হয়। এতে বাঘা পৌরসভা ও উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
নামাজ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বাঘা শাহী মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি আশরাফ আলী।
মুফতি আশরাফ আলী জানান, মানুষের সৃষ্ট কোনো পাপের কারণে মহান আল্লাহ তায়ালা অনাবৃষ্টি ও খরা দেন। বৃষ্টি না হলে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সাহাবীদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইস্তিসকার নামাজ আদায় করতেন। এজন্য তারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তওবা করে ও ক্ষমা চেয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, দিনের পর দিন বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির হাহাকার বাড়ছে। স্যালোচালিত কিংবা হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। পানি সংগ্রহে ভিড় বাড়ছে সাব মার্সেবল টিউবওয়েলে। প্রায় একমাস ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। নদী- নালা, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না অগভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পেও। তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ রোদে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না। পানি পাওয়া যাচ্ছে, এমন স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পানি সংকটে পুকুরে গিয়ে গোসল করছেন এলাকার অনেক মানুষ । এমন পরিস্থিতিতে তারা বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন।
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সুরুজ্জামান জানান, নামাজে সবাইকে অংশ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই মাইকে প্রচার করা হয়েছিল।
বাঘা পৌরসভার বাজুবাঘা গ্রামের গৃহবধূ হালিমা বেগম বলেন, তার বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে কয়েকদিন থেকে পানি উঠছে না। ব্যক্তি মালিকানায় পাশের বাড়িতে বসানো সাব মারর্সেবল টিউবওয়েল থেকে প্রতিদিন পানি সংগ্রহ
করতে হচ্ছে।
পৌরসভার বাজুবাঘা গ্রামের আব্বাস উদ্দীন বলেন, ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েও পানি উঠছে না। পওে জল মর্টার বসিয়ে পানির ব্যবস্থা করেছেন।
বিদুৎ চালিত মোটার বসানো নলকূপেও পানি উঠছেনা বলে জানিয়েছেন আম চাষি মাজদার রহমান ।
অমরপুর গ্রামের কৃষক টিপু সুলতান বলেন, ক্ষেত রক্ষার জন্য পাশের মালিকের পুকুর থেকে সেচ দিচ্ছি। সেই পানি নিতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। এবার ধানের ফলন নিয়ে সংশয় রয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মিঠনকুমার রবিদাস বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত পানির সমস্যা যাবে না। ১৫০ ফিট পাইপ দিয়ে যেসব এলাকায় সাব মার্সেবল নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে পানির সমস্যা নেই।
তবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশ কিছু হস্তচালিত অগভীর নলকূপে পানি না উঠছে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা বেগম জানান, মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা ছির ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সন্ধ্যায় কিছুটা কম হতে পারে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল আপছা রোদ। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেও
জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে কৃষি, গৃহস্থালি এবং সুপেয় পানি পানের ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বর্ষাকালে নদী-নালা, খালবিলের পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু কৃষিতে পানির ব্যবহার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে যে সমস্ত ফসলে সেচ কম লাগে সেই ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমেও পানির স্তর ঠিক রাখা যায়। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল উৎপাদন করতে কৃষকের সেচ খরচ বেশি লাগছে। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha