সাবেক তথ্যমন্ত্রী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একটি কুচক্রী মহল মিরপুর ও ভেড়ামারায় সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সুপরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতিকারীরা তুষারকে হত্যা করেছে। ইনু পরিষ্কারভাবে বলতে চাই জাসদ কারোর কোন জায়গা দখল করে না, গাছ কেটে কোনদিন খাইনি। সুতারাং ব্যক্তিগতভাবে জাসদের লোকজন ও নেতা কর্মীর মধ্যে কোন বিরোধ এবং ব্যাক্তিগত ভাবে কারোর প্রতি অভিযোগ নেই। মুজিব কোর্ট এর দুই বগলে যারা বিএনপি জামাত পোষে তারাই সু পরিকল্পিতভাবে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা নাইফ আহমেদ তুষার কে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন,ব্যক্তিগত কারণে তুষার খুন হয় নাই। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে বলেন, দয়া করে ব্যক্তিগত বিরোধের কথা বলবেন না। কারণ জাসদের সাথে তুষারের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না। এতে করে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীরা রেহায় পেয়ে যাবে। তুষার নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছিল। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলতে চাই, প্রকৃত খুনি আসামিদের ধরতে তৎপর হন। প্রকৃত খুনিদের কে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। তিনি আরো বলেন কালো মুজিব কোট পড়ে যারা জামাত ও বিএনপি দুই বগলে পোষে এবং নিজ দলের ও ১৪ দলের লোককে মারে তাদেরকে চিহ্নিত করে প্রতিহত করতে হবে। আওয়ামী লীগের বন্ধুদের বলতে চাই সতর্ক হোন। দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দুই মুখী সাপের বিষ দাঁত ভেঙে না দিলে, ঘরকাটা ইঁদুরা আওয়ামী লীগের খুঁটি পর্যন্ত খেয়ে ফেলবে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গত ৫ এপ্রিল শুক্রবার রাত ৮টার সময় দুষ্কৃতিকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে উপজেলার গোলাপ নগর জাসদ ছাত্রলীগ নেতা নাফিজ আহমেদ তুষারের হত্যা ও তার জানাজারে ৬ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৫টার সময় অংশ নিয়ে হাসানুল হক ইনু উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
জানাজায়ে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন। জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায়। ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ বেনু। পৌরসভার মেয়র আনোয়ারুল কবীর টুটুল প্রমূখ।
নিহত নাফিস আহমেদ তুষার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর কদমতলা এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে। তুষার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদ ছাত্রলীগের সহসম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ঈদের ছুটিতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। তার বাবা রবিউল ইসলাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড জাসদের সভাপতি।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইফ আহমেদ তুষার গোলাপনগর বাজারে রাত ৮টার দিকে দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ১২ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল চায়ের দোকানে সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল থেকে নেমেই তুষারকে চায়ের দোকানের মধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। একপর্যায়ে তুষার দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে বাজারের মধ্য প্রকাশ্যে তারা আবারও কুপাতে থাকে। এ সময় স্থানীয়রা ছুটে আসলে রাস্তায় ফেলে রেখে দুর্বৃত্তরা চলে যায়। এতে তুষারের পায়ে, হাতে, বুকে ও মাথাসহ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রামদার আঘাতে মারাত্মক যখম হয়। পরে স্থানীয়রা আহত তুাষারকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা আহত তুষারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ এপ্রিল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে নাইফ আহমেদ তুষার মারা যান।
নিহত তুষারের বাবা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে গোলাপনগর বাজারে তুষারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে তুষারের মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ঘটনার সন্ধ্যায় গোলাপনগর বাজারের পার্শ্ববর্তী একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তুষার, জেমস ও তাদের বন্ধুরা। এ সময় আট-নয়টি মোটরসাইকেলে ১৭-১৮ জনের একটি দল হামলা চালায়।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে প্রথমে কিছুক্ষণ মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পরে তারা তুষারকে ধাওয়া করেন। প্রাণ বাঁচাতে তুষার দৌড়ে পার্শ্ববর্তী খাইরুল ইসলামের বাড়ির সামনে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তখন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা।
হত্যার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) মহসীন আল মুরাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে তুষারের বন্ধু জেমসকে আটক করা হয়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এর আগে সোহাগ নামে এক বিএনপি নেতাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় তুষারকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়।
পূর্বশত্রুতার বিষয়ে পলাশ কান্তি নাথ বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভেড়ামারা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আল হোসাইন সোহাগকে মারপিটের মামলায় তুষার আসামি ছিলেন। ওই মামলার যারা সাক্ষি, এ ঘটনায় তারা আসামি হতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরেই খুন হন তুষার।
এদিকে জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনাকে নৃশংস, পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হিসেবে উল্লেখ করেন অসিত।
নিহত তুষারের বাবা রবিউল ইসলাম রবি ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদের সাংগঠিক সম্পাদক। তিনি বাদী হয়ে প্রায় ২০জনকে আসামী করে গতকাল শনিবার রাতে ভেড়ামাা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
নিহতের ছোট বোন শাপলা বলেন, তুষার রাজধানীর প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঈদ উপলক্ষে ১৭ রোজায় ছুটিতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিলেন। আমার ভাইয়ের সাথে ঈদ করতে পারলাম না। তার আগেই সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। খুনিদের দৃষ্টান্তমুল শ্বাষিÍ ও ফাঁসি চাই।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে তুষারের বন্ধু জেমসকে আটক করা হয়েছে । নিহত তুষারের বাবা রবিউল ইসলাম রবি বাদী হয়ে থানায় গতকাল শনিবার রাতে এজাহার দাখিল করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha