লোকসভা নির্বাচনের আবহে রাজ্যের সিংহভাগ থানার ওসি/আইসি বদলী হয়েছেন বিভিন্ন জেলায়। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট তার ব্যতিক্রম নয়। মঙ্গলকোট মানেই যেন রাজনৈতিক হানাহানি- অশান্তির আঁতুড়ঘর। 'গা ছমছম, কি হয় কি হয়....'। বছর খানেক আগে মঙ্গলকোটের লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসীম দাসকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই মামলার তদন্তভার রয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির হাতে।
গত ফেব্রুয়ারিতে হুগলির চন্দননগর থেকে মঙ্গলকোটে আইসি পদে আসেন পুলিশ অফিসার মধুসূদন ঘোষ। মঙ্গলকোটে দায়িত্বভার গ্রহণের মাত্র দেড় মাসেই ধারাবাহিক অপরাধ দমনে নজির গড়েছেন তিনি। সে তালিকায় রয়েছে চোরাই চার চাকা গাড়ি মাত্র ছয় ঘন্টার ব্যবধানে উদ্ধার করা থেকে প্রাচীন দুস্প্রাপ্য মূর্তি উদ্ধার। আবার সোনার দোকান লুটের উদ্দ্যেশ্যে রেইকি করতে আসা ওড়িশার সশস্ত্র দুস্কৃতিকে সঙ্গীসহ গ্রেপ্তার করা থেকে বিপুল অস্ত্রসহ আটক করা। অজয় নদের বালিলুট রুখতে ১২ এর বেশি লরি/ট্রাক আটক করা। এর পাশাপাশি ভিন জেলা এমনকি ভিন রাজ্য থেকে এলাকার অপহৃত সাবালিকা - নাবালিকাদের উদ্ধার করে নিম্ন আদালতের মাধ্যমে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া। এমন ঘটনা মঙ্গলকোট পুলিশের সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্য বলা যায়। এই পুলিশ অফিসার ভিন জেলা থেকে এসে নতুন জেলা মঙ্গলকোটের মত এলাকাকে অপরাধ দমনে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, তাতে তার সাহসীকতার পরিচয় বলে পুলিশ মহল মনে করছে।
এদিকে ইসলামিক জলসা থেকে কীর্তন গানের আসরে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে অটুট রাখতে এলাকাবাসীদের আহবান জানানো স্থানীয়দের হৃদয়ে নবাগত আইসি মধুসূদন ঘোষকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। অপরাধ দমনে ঘটনাগুলি বিশ্লেষণ করা যাক, ঘটনা এক, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে আউশগ্রামের শিরীষতলা, গুসকরা স্টেশন রোড থেকে একটি বোলেরো পিকআপ গাড়ি চুরি যায়। অতঃপর মঙ্গলকোট থানার পুলিশ সোর্স মারফত খবর পেয়ে গাড়িটিকে মঙ্গলকোটের মল্লিকপাড়া থেকে উদ্ধার করে। এছাড়া ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই অভিযুক্ত কে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলকোট থানার পুলিশ ঘটনা ঘটার মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যে চুরি যাওয়া গাড়ি উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ।
ঘটনা দুই, মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত চক গ্রামের এক বাসিন্দা মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ করে যে তার নাবালিকা মেয়েকে রায়গঞ্জ নিবাসী এক ব্যক্তি ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এই অভিযোগ পাওয়া মাত্র মঙ্গলকোট থানার পুলিশ অতি তৎপরতার সাথে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইনপুটকে কাজে লাগিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রায়গঞ্জ থেকে ওই নাবালিকা মেয়েটিকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত বারুলিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ করে তার সাবালিকা মেয়েকে কোন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ফুসলিয়ে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে এবং বিহারের কোন এক জায়গায় লুকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মঙ্গলকোট থানার পুলিশ অতি তৎপরতার সাথে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে এবং গত ১৫ মার্চ বিহার থেকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
ঘটনা তিন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ পূর্ব মঙ্গলকোটের পিণ্ডিরা গ্রামের মাঠ থেকে শতাব্দী প্রাচীন গুপ্ত যুগের বিষ্ণু মূর্তি সাথে বহু পুরাতন এক শিবলিঙ্গও উদ্ধার করে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ। মঙ্গলকোট থানার পক্ষ থেকে ওই মূর্তিগুলি পুজো দেওয়ার পর, এসডিপিও কাটোয়া এবং মঙ্গলকোট থানার অধিকারিক মহাশয়ের উপস্থিতিতে এই মূর্তিগুলি স্থানীয় রায় পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ঘটনা চার, গত ১১ মার্চ মঙ্গলকোট থানার পুলিশ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে মুসোরি বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে দুই অভিযুক্তকে। এছাড়াও অভিযুক্তদের কাছ থেকে দুটি চুরি হওয়া বাইকও উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য সোনার দোকান লুট করার উদ্দেশ্যে ওড়িশার এক দুস্কৃতি কাটোয়া শহর এলাকার এক ব্যবসায়ীকে নিয়ে রেইকি করতে গিয়েছিল ওই এলাকায় ।
ঘটনা পাঁচ, গত ১৩ মার্চ মঙ্গলকোট থানার পুলিশ লোচনদাস সেতুতে সন্ধ্যাকালীন নাকা চেকিং চালানোর সময় একটি মোটর বাইকে দুইজন ব্যক্তিকে সন্দেহজনক ভাবে আসতে দেখে তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ অতি দক্ষতার সাথে ওই দুই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে ওই বাইকটি তারা বর্ধমানের দিক থেকে চুরি করে নিয়ে আসছে।
এছাড়া পুলিশ ওই দুই ব্যক্তির দেহ তল্লাশি চালালে তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়।
ঘটনা ছয়, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ অবৈধভাবে বালি পাচার রুখতে সক্রিয়ভাবে রাস্তায় নামে এবং মোট আটটি অবৈধ বালি বোঝাই লরি আটক করে এছাড়াও চারটি অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক আটক করে ওই সমস্ত গাড়িগুলির ড্রাইভার ও মালিকের বিরুদ্ধে সঠিক আইনানুগ ধারায় মামলা করে ।জানা গেছে, প্রতিদিন ডিউটি অফিসারের টেবিল থেকে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ঘরে স্থানীয়দের অভাব অভিযোগ নিয়ে পর্যালোচনা চালান তিনি।রাতের দিকে বিভিন্ন সড়কপথে টহল দিতে দেখা যায় বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন। মঙ্গলকোটের বুকে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক কাজ করা এক এনজিও সংগঠনের কর্মকর্তা সম্রাট মুন্সি বলেন -' উনাকে খেলাধুলাসহ নানান সামাজিক উদ্যোগে সর্বদা পাশে পাওয়া যায়'।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha