রাজশাহীর বাঘায় ক্রেতার অভাবে বিক্রি হয়নি কৃষকের লাউ। পরিবহন খরচ বাঁচাতে বাজারে ফেলে রেখে যাওয়া সেই লাউ পরে বিনা টাকায় কেউ কেউ নিয়ে যান।
শনিবার (১৬-০৩-২০২৪) উপজেলার আড়ানি বাজারে পাইকারি বিক্রির জন্য লাউ নিয়ে এসেছিলেন আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোচর মহল্লার মৃত আমির আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থেকেও ক্রেতা না পাওয়ায় লাউ রেখে ফিরে যান। হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথমের দিকে প্রতি পিচ লাউ ১০ টাকা করে বিক্রি হলেও পরে আর ক্রেতা মেলেনি । তাই পরিবহন খরচ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রেখে যাচ্ছি।
হাবিবুর রহমান জানান, এক বিঘা জমিতে লাউ এর আবাদে সার, বীজ, সেচ, লেবার, মাচা তৈরী সহ খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। প্রথমের দিকে প্রতি পিচ দেড়-দুই কেজি ওজনের একটি লাউ বিক্রি করেছেন ৪০-৪৫ টাকায়। মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি করেছেন ২৫-৩৫ টাকা প্রতি পিচ। শেষ সময়ে ৫-১০ টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু শনিবার হাটে কোন ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারেননি। পাইকারি বিক্রির জন্য লাউগুলো বাজারে নিয়েছিলেন।
তার মতো ৭০টি লাউ বিক্রির জন্য বাজারে নেন, আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কউন্সিলর জিল্লুর রহমান। তিনি জানান,পাইকারি বিক্রি করতে না পেরে কুশাবাড়িয়া গ্রামের খুরচা সবজি ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে দিয়েছেন। বিক্রি করে টাকা না দিলেও এতে তার কোন দাবি নেই।
গোচর গ্রামের লাউ চাষি জহুরুল ইসলাম সোনা বলেন, এক ব্যক্তিকে ৬০টি লাউ দিয়েছি। কত টাকা দিবে কিছুই জানিনা। জমিতে কিছু লাউ রয়েছে। এগুলো বিক্রি করতে পারছিনা।
আড়ানি বাজার ব্যবসায়ী শাহীদুজ্জামান জানান,পরে সেই লাউ কেউ কেউ নিয়ে গেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীর সাথে কথা বরে জানা যায়,আড়ানি বাজারে প্রচুর লাউ আমদানি হয়। পাইকাররা সেই লাউ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় বিক্রি করেন। বাইরের পাইকাররা না আসায় লাউয়ের দামে ধস নামে।
পাইকারী ক্রেতা কুশাবাড়িয়া গ্রামের আলান উদ্দিন বলেন, শনিবার হাটে লাউ কেনার কোন ক্রেতা ছিলনা। বাসুদেবপুর গ্রামের সেন্টু আলী ৫০০ লাউ নিয়ে আমার আড়তে আসেন। আমি কোন লাউ কিনি নাই। তাই তিনি আড়তে লাউ রেখে চলে যান। পরে মানুষকে ফ্রি দিয়েছি।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার আড়ানী হাটে প্রতি পিচ সাড়ে ৬ টাকা গড়ে এক হাজার লাউ কিনেছিলাম। সেই লাউ ঢাকায় নিয়ে তিন দিন যাবত বিক্রি করে ৪ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তাই আমি শনিবার হাটে লাউ কেনেননি।
বাঘা বাজারে প্রতিপিচ লাউয়ের দাম চাওয়া হয় ২০ টাকা। জানতে চাইলে বাঘা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী পলাশ হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সব ধরনের শাকসবজির দাম চড়া ছিল। শনিবার কোন কোন সবজির দামে ধস নামে। আড়ানি বাজার থেকে সকালে প্রতিপিচ লাউ ১০ টাকা হিসেবে কিনেছেন। সেই লাউ খুচরা ২০ টাকা হিসেবে বিক্রি করবেন। দাম কমার বিষয়ে তিনি বলেন, আমদানি বেশি। সেই তুলনায় ক্রেতা নেই। এ কারণে কম দামেও পণ্য বিক্রি করা যাচ্ছে না।
কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে অধিকাংশ শাকসবজির দাম কমেছে। এর পরও মিলছে না ক্রেতা। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক-ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, রোজা শুরুর আগের দিন বাজারে প্রতি পিচ লাউ বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। ৪০ টাকার বীচি আলা শিম বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। ৩০ টাকার সাধারন শীম বিক্রি হয় ৬০ টাকা। এভাবে টমেটো,গাজর, খিরা, শসা ও লেবুসহ প্রায় সব ধরনের শাকসবজি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়।
শনিবার(১৬-০৩-২০২৪) খুচরা বাজারে বেগুন ও কাঁচা মরিচের দর কেজি প্রতি ২০ টাকায় নামে। ১১৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি,১৩০ টাকার রসুন বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা কেজি। ৩০ টাকার গাজরের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে । খিরা ৫০ টাকা,রমজানের আগে ছিল ৩০ টাকা, গত দুইদিন আগে শসার দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি। শনিবার সেই শসা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা। টমেটো বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা। ২দিন আগে দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। শনিবার ২৫ টাকা হালির লেবুর দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা হালি। শিম ৬০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা ও টমেটো ৩৫ টাকা, শসা ৫০ টাকা ও খিরা ৫০ টাকা।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ৭৮ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। শীত কমে যাওয়ার কারনে লাউ এর চাহিদা কমে যায়। তিনি বলেন, বাজারে লাউসহ সবজির সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা না থাকায় দাম কমেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha