দেশের বৃহত্তম কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সব কটি পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
এই প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার কৃষকদের সেচের পানি দেওয়া হতো। সর্বশেষ চার উপজেলায় একটি পাম্পের সাহায্যে পানি সরবরাহ চালু ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে সেটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বোরো ধানের চারা রোপণের এই সময় এক লাখের বেশি কৃষক বিপদে পড়েছেন।
চোখের সামনে ঘটছে সবই, তবু কৃষকের বুকফাটা হাহাকার যেন দেখার কেউ নেই। পানির অভাবে বোরো ধানের আবাদ করতে পারছেন না কুষ্টিয়ার কৃষকরা।
উল্লেখ্য,১৯৫১ সালে প্রাথমিক জরিপের পর ১৯৫৪ সালে জি-কে সেচ প্রকল্প অনুমোদন পায়। চালু হয় ১৯৬২-৬৩ সালে। পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে বছরের ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হতো। বাকি দুই মাস চলত রক্ষণাবেক্ষণ। ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের পানি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় সেচযোগ্য এলাকা রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১০৭ হেক্টর।
জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় তিনটি পাম্পের সাহায্যে পানি দেওয়া হতো। কয়েক বছর ধরে দুটি পাম্প বন্ধ ছিল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বশেষ সচল পাম্পটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর এবং চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা—এই চার উপজেলার কৃষকেরা দুর্ভোগে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেক কৃষক ধান লাগাতে পারছেন না, কারও ধানের জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। কেউ কেউ শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এতে ধান উৎপাদনে খরচ ১২ থেকে ১৫ গুণ বেড়ে গেছে।
কুষ্টিয়ার বড় একটি ধান চাষের এলাকার কৃষকরা সরাসরি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) পানির ওপর নির্ভরশীল। গত কয়েক বছর ধরে বোরো মৌসুমে জিকে ক্যানেলের পাশ ঘেঁষে চাষ হয়ে আসছে বিষবৃক্ষ তামাকের। ফলে অন্যান্য বছর জিকে ক্যানেলে পানি থাকলেও ধানের জমিতে পানি যেতে বাধা দেন তামাক চাষিরা। কিন্তু এবার জিকে খালেও পানি নেই। ফলে চাষের জমি পড়ে রয়েছে ফাঁকা। সেচ খরচ আগের চাইতে দ্বিগুণ হওয়ায় কৃষকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন জিকের ওপর। ফলে বোরো ধানের চারা নষ্ট হচ্ছে বীজতলায়। এদিকে নির্বাচনী সহিংসতায় মাঠের সেচপাম্পগুলোর চুরি বেড়েছে। একদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত চাষিদের নগদ টাকার প্রলোভন দেখাচ্ছে বিভিন্ন তামাক কোম্পানি। চাষের আগেই কৃষকদের ঋণ দিয়ে কমিয়ে ফেলা হচ্ছে বোরো আবাদের জমি। সব মিলিয়ে এমন চলতে থাকলে কুষ্টিয়ার জিকে এলাকা জুড়ে বিস্তীর্ণ জমিতে আর হবে না বোরো ধানের চাষ।
জানা যায়, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় সৃষ্ট যান্ত্রিক ত্রুটি, অদক্ষতায় সঠিক রক্ষণা-বেক্ষণে ব্যর্থতা, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি স্বল্পতাসহ নানা কারণে স্থাপনের ১০ বছর না যেতেই ২০০৯ সালে জাপানের ইবারা কর্পোরেশন নির্মিত জিকে প্রধান পাম্প হাউজে স্থাপিত তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প ২০১৭ সালেই অকেজো হয়ে যায়। বাকি দুটি সচল পাম্প দিয়ে কোনো মতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল পানি সরবরাহের কাজটি। ২০২০ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় পাম্পটিও অকেজো হয়ে পড়ে। সেই থেকেই কার্যত একটি পাম্প দিয়ে চাহিদার যৎসামান্য পানি সরবরাহ করছে সেচ প্রকল্পটি। সর্বশেষ চলতি শুষ্ক মৌসুমে অবশিষ্ট পাম্পটিও অকেজো হয়ে যাওয়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) এখন মৃত প্রকল্পে রূপ নিয়েছে।
ভেড়ামারায় অবস্থিত পাউবোর গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান পাম্পহাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিনটি পাম্পই বিকল হয়ে আছে। কৃষক প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘আপনারা (কৃষক) আপনাদের মতো চালিয়ে (সেচ) নেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, পাম্প বন্ধ হওয়ার কারণে বোরো চাষে কৃষকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। হয়তো ফলন কম হবে। যা মনে হচ্ছে, কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
কবে নাগাদ পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারছেন না পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। পদ্মায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তিন-চার বছর আগে থেকে বোরো মৌসুমে শুধু কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়। মাগুরা ও ঝিনাইদহের খালগুলোর কপাট বন্ধ রাখা হয়।
প্রকল্পের প্রকৌশলীদের মতে, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সময়কালে ২.৮ মেগা ওয়াট হাইড্রোলিক ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প স্থাপন শেষে সেচের পানি সরবরাহে চালু হয় প্রকল্পটি। এরপর সার্ভিস ওয়ারেন্টির শর্তানুযায়ী নির্মাণকারী/স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান দুই বছর সার্ভিস দেয়। কিন্তু ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এর সার্ভিসিং এবং যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করে পাম্প সচল রাখার দক্ষ কোনো প্রকৌশলী না থাকায় ওই সময়ের বাস্তবতায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত পাম্প হাউজ মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই অকেজো হয়ে যায়। এসব অকেজো যন্ত্রপাতি মেরামত ও সংস্কারে দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থ ব্যয়ের পরিমাণে বিস্তর ব্যবধান, অব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্তের ধীর গতিসহ নানা কারণেই ঝুলে আছে সেচ প্রকল্পের অকেজো পাম্পকে সচল করার কাজটি। যদিও এর আগে প্রকল্পটি সচল রাখতে ধাপে ধাপে সরকার টাকা ব্যয় করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি, ফলে এসব জেলা খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত জেলা।
এসব জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় ৯৬ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে এবার সেচ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এছাড়া পদ্মার পানি প্রবাহের নির্ধারিত স্তরের ওপরও নির্ভর করে চালাতে হয় সেচ প্রকল্পের পাম্প।
পাম্প হাউজের প্রকৌশলীরা মিজানুর রহমান আরো জানান, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ন্যূনতম ৩৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ প্রয়োজন। অথচ এসময়ে যখন পানি প্রবাহ ২৪ হাজার কিউসেকের নিচে নেমে আসে এবং পাম্প হাউজের ইনটেক চ্যানেলে পানির গভীরতা ৬ মিটার থেকে কমে ৪ মিটারের নিচে নেমে যায়, এতে সেচ কার্যক্রমের সক্ষমতা হারায় পাম্প হাউজটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার সেচ সম্প্রসারণ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সেচ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী চাষিরা সেচ সুবিধা নিয়ে থাকেন। এতে প্রতি মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা হিসেবে বার্ষিক তিনটি মৌসুমে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার আর্থিক সাশ্রয় হয় চাষিদের।
তবে বিগত দিনের কারিগরি সক্ষমতার সংকটকে বিবেচনায় রেখে পরিস্থিতির উত্তরণে গোটা সেচ প্রকল্পকে ঢেলে সাজানোসহ যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনের জন্য জিকে প্রধান পাম্প হাউজের পাম্প স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেচ প্রকল্প নির্মাণে বাপাউবো এরই মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে সর্বশেষ অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানালেন বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পটির নির্মাণের সময় ধরা হয়েছে চার বছর।
তিনি আরও বলেন, এবার আরও কিছু বিকল্প পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হবে, যেমন বেশ কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে (মার্চ-এপ্রিল-মে) মাসে পদ্মার পানি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় পাম্প হাউজের ইনটেক চ্যানেলে ৪ মিটারের নিচে পানি নেমে যাওয়ায় মেইন পাম্প হাউজ বন্ধ রাখতে হতো। এবার থেকে বিকল্প ব্যবস্থায় সাবসিডিয়ারি সেকশনে আরও ১০টি পাম্প স্থাপন করা হবে। তাহলে পদ্মার পানি প্রবাহ হ্রাস পেয়ে ৪ মিটারের নিচে নেমে গেলেও সেচের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, আমি প্রতি বছর ধানের আবাদ করি। এবারও চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করার জন্য চারা দিয়েছি। কিন্তু পানির অভাবে চাষ করতে পারছি না। স্যালো ইঞ্জিনের ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। কারণ এখন সবাই জিকে প্রকল্পের পানি ব্যবহার করায় স্যালো ইঞ্জিনের পাম্প মাঠে নেই।
কৃষক নুরু নবী জানান, খয়েরপুর বিএডিসি ফার্মের কাছে সাত বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করার জন্য জমি চাষ দিয়েছি। কিন্তু পানি নেই। পানির অভাবে মাটি শুকিয়ে গেছে। কবে ক্যানেলে পানি আসবে, সেই আশায় আছি।
একই এলাকার কৃষক আনারুল ইসলাম এবার ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষের জন্য এবং আতিয়ার রহমান আট বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্য চারা দিয়েছেন।
তারা জানান, এলাকার অধিকাংশ মাঠে পানি নেই। জিকে ক্যানেলের ওপর ধান চাষ নির্ভর করছে এখন। মাঠে স্যালো ইঞ্জিনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ধানের চারার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। যদি পানি না পাই, তাহলে চারা কেটে গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
জিকে সেচ প্রকল্পের সেচের পানি নির্ভরতা কুষ্টিয়ার একাংশের মধ্যে বেশি মিরপুর উপজেলায়। মিরপুরের এসব ক্যানেলের আশপাশে এখন তামাকের আবাদ বেশি হওয়ার ফলে এ এলাকায় ধান চাষ চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ তামাক না শেষ হলে মাঠে তামাক চাষিরা সেচের পানি ঢুকতে দেন না। আর এবার তো জিকে সেচ প্রকল্পের মাঠে পানিই নেই।
কৃষকদের দাবি, তামাকের জমির আশেপাশে ধানের আবাদ করলে তামাকের ক্ষতি হয়। এজন্য মাঠে পানি ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। আর এবার যারা ধানের চারা দিয়েছেন পানির অভাবে তারা ধান রোপণ করতে পারছেন না। ফলে ধান চাষিরা বিপদের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া তামাক চাষের জন্য তামাক কোম্পানিগুলো চাষের শুরুতেই নগদ টাকা, সার, বীজ দিয়ে থাকে।
মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, যতদূর চোখ যায়, ততদূর শুধু তামাক আর তামাক। মাঝে মধ্যে ফাঁকা পড়ে আছে যেগুলোতে এখন বোরো ধান থাকার কথা ছিল। এসময় কৃষকদের বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করার কথা থাকলেও তারা তামাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। একদিকে তামাকের লাভের টোপ, অন্যদিকে জিকে সেচ প্রকল্পে পানির অভাব- দুইয়ে মিলে বোরো ধানের মাঠ খাঁ খাঁ করছে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বিভিন্ন এলাকার মাঠ থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে মাঠের স্যালো ইঞ্জিন চালিত পাম্পগুলোর ইঞ্জিন চুরি হচ্ছে নিত্যদিন। ফলে বন্ধ তাদের কার্যক্রমও।
কচুবাড়ীয়া এলাকার স্যালো ইঞ্জিন চালিত সেচ পাম্পের মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের দিন রাতে মাঠে থাকা দুটি সচল সেচ পাম্প চুরি হয়েছে। এখন আর পাম্প কেনার টাকা নেই। আমার পাম্পের আওতায় প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া হতো, এখন সেটা বন্ধ রয়েছে।
গিয়াস উদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, আমি প্রতিবছর ১০-১২ বিঘা ধানের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে মাছ চাষ করি। মাঠের মধ্যে এসব পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন আর মাছ চাষ করতে পারছি না। মাছ দিলে পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। পুকুরগুলোতে ছয় ইঞ্চি পানি রয়েছে, যা মাছ চাষের জন্য অনুপযোগী।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষক মনির মোল্লা জানান, গত তিন চার বছর ধরে জিকে ক্যানেলে পানি না পেয়ে চাষিরা যে যার মতো করে স্যালো ইঞ্জিন চালিয়ে সেচ দিচ্ছেন। এতে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অথচ জিকে খালের পানি দিয়ে সেচ দিতে পারলে সেচ খাতের খরচটা আমাদের বেঁচে যেত। চাষিদের ধান উৎপাদন খরচও কম হতো।
মিরপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকতা সাদ্দাম হোসেন জানান, আমরা কৃষকদের সেচ প্রকল্পের আশায় না থেকে দ্রুত বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে ধান রোপণের পরামর্শ দিয়েছি। যাতে ধানের চারা নষ্ট না হয়। তবে তাতে এবার ধানের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় বেশি হবে।
কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই জিকে সেচ প্রকল্পের সেচ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আমরা কৃষকদের বিকল্প উপায়ে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এক্ষেত্রে সেচ খরচ কিছুটা বেশি হলেও সরকার এরই মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি খাতে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতিসহ উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছে। এতে নতুন করে খাদ্যশস্য উৎপাদন খরচ বাড়বে না বরং সাশ্রয়ী হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মো. তৈমুর জানান, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে ২৫-থেকে ৩০ ফুট নিচে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমরা টিউবয়েল স্থাপন করতে গিয়ে অতিরিক্ত আরও ৩০ ফুট নিচে যাওয়ার পর পানির স্তর পাচ্ছি। ভূ-উপরিভাগের পানির উৎসে ঘাটতি, কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির ফলে দ্রুত ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ নম্বর পাম্প চালু করে পানি ছাড়া হয়। কিন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল পৌনে পাঁচটায় পাম্পটি বিকল হয়ে যায়। ফলে সেচের পানি সরবরাহ এখন পুরোপুরি বন্ধ। একে একে বন্ধ সকল পাম্প।
পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রকল্পের একেকটি পাম্প প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। তিনটি পাম্পের মধ্যে ২ ও ৩ নম্বর পাম্প দুটি কয়েক বছর ধরে বিকল। এ ছাড়া বিকল্প হিসেবে আরও ১২টি ছোট পাম্প ছিল। সেগুলোও ২০০১ সাল থেকে বিকল।
জিকে সেচ খালগুলো পানি শূন্য হওয়ায় এবার পানি সংকটের ভয়াবহতায় আরও একটা নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের গোটা জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা ডিপিপির অনুমোদন পেলেই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিতে পারব। যুগোপযোগী করে তৈরি করা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আগামী ৩০ বছরের জন্য এ প্রকল্প নিয়ে আর আমাদের ভাবতে হবে না। তবে নির্মাণকালীন চার বছরের মধ্যে একই প্রকল্প জোন থেকে বিকল্প কোনো উপায়ে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে জিকে সেচ নির্ভর এসব কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকরা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha