পাঁচ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে শিশু রাকিব হোসেনকে। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা গ্রামে শিকলে বাঁধা রয়েছে ১১ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন শিশু রাকিব হোসেন।
দূর্ঘটনা বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ছেলেকে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে প্রতিদিন কাজে যান দিনমজুর বাবা রুহুল আমিন (৪৫)। আর এভাভেই পাঁচ বছর ধরে শিকলবন্দী রাকিব।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা গ্রামে শিশু রাকিবের বাড়ি। অন্যের জমিতে চাষাবাদ ও দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালায় রুহুল আমিন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় দিন দিন ছেলের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, এমনটাই বললেন রুহুল আমিন ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় শিশু রাকিবের পায়ে লোহার শিকল ও তালা লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা। প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে সে শিকলে বাঁধা গাছটির চারদিকে ঘুরছে। হঠাৎ পাশ দিয়ে কোনো পথচারীকে যেতে দেখলেই ইশারায় কাছে ডেকে পায়ের শিকল খুলে দিতে বলে।
রাকিবের বাবা রুহুল আমিন বলেন, অভাবের সংসার তার। এক দিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। প্রতিদিন সকালে ছেলেকে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে কাজে যান। বিকেলে কাজ থেকে ফিরে ছেলেকে ঘরে নিয়ে আসেন। উন্নত চিকিৎসা পেলে ছেলেটা হয়তো ভালো হবে। কিন্তু সেই টাকা তার নেই।
পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে বাড়ির সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ভটভটির ধাক্কায় রাকিব হোসেন গুরুতর আহত হয়। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। চিকিৎসায় রাকিব প্রাণে বেঁচে গেলেও সে বাক্প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
পরিবারে সৎমা থাকলেও রাকিবের দেখাশুনা করেন বাবা রুহুল আমিন। রাকিবের দাদি রহিমা বেগম বলেন, দুর্ঘটনার পর রাকিব হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যেত, অন্যের ক্ষতি করত। পরে এলাকাবাসীর অনুরোধে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
শিশু রাকিবের বাবা রহুল আমিন বলেন সমাজের বিত্তবানরা যদি শিশুটির চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন, ছেলেটাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারি তাহলে হয়তো আমার ছেলে আবার সাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।