নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত আবাদী জমিতে গৃহহীনদের জন্য সরকারিভাবে গৃহনির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের দাবী, জমির মালিকানা নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের দাবী, সরকারি খাস জমিতে নদীভাঙ্গা মানুষদের পুর্নবাসন করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দূর্গম চর করনেশানা মৌজা জুড়ে স্থানীয় কৃষকরা বেগুন, পেয়াঁজ, টমেটোর মতো সবজির আবাদ করেছে। নদী শিকস্তি-পয়স্তিতে খাস হওয়ায় সরকারিভাবে ওই জমিতে নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা ১৫০টি পরিবারের পূনর্বাসনের জন্য গৃহনির্মান করতে কয়েকদিন ধরে মাটি কেটে ভিটে তৈরি শুরু হয়েছে। নোটিশ না দিয়ে ফসলী ক্ষেতে এ ধরনের প্রকল্পের কাজ শুরু করায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা তাদের ফসল রক্ষার দাবিতে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে বার বার বিক্ষোভ করে অন্তত মৌসুমি সবজি তোলার আগ পর্যন্ত কাজ বন্দের দাবী জানাচ্ছেন।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হাসান মোল্লার পাড়ার শমসের বেপারি (৯০) বলেন, আমার বাপ-চাচাদের সম্পত্তি। পরবর্তীতে জমি নদীগর্ভে বিলণ হওয়ার পর পুনরায় জেড়ে ওঠে। সেই জমি জেগে ওঠার পর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত চাষাবাদ করে খাচ্ছি। এই জমি যদি সরকার দখল করে নিয়ে যায় তাহলে আমরা সবাই পথের ফকির হয়ে যাব।
শমসের বেপারীর ছেলে জয়নাল বেপারি বলেন, এই প্রকল্প এলাকায় আমার বাপ-দাদার ৯বিঘা জমি রয়েছে। জমি চাষাবাদ করে আমরা কয়েক ভাই বেঁচে আছি। জমি সরকারীভাবে খাস হয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা চালাচ্ছি। আমাদের পক্ষে দুইটা ডিক্রিও রয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনকে সেটা দেখাতে চাইলেও তিনি ঠিকমতে না দেখতে চাইছেন না।
তিনি বলেন, আমি এবং জয়নাল বেপারী মিলে ৪বিঘা জমিতে বেগুন, ৪বিঘা টমেটো ও ১ বিঘা জমিতে অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করেছি। এতে আমাদের প্রায় ৫লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে ৩ লাখ টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেয়া। কিছুদিন ধরে বেগুন তোলা শুরু করেছি। অন্যান্য ফসল কিছুদিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হবে। এখন এসব ক্ষেত ধ্বংস করে মাটি কাটলে আমরা শেষ হয়ে যাব। পাওনাদারদের চাপে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।
একইভাবে আইয়ুব আলী শেখ (৪৫) তিন লাখ টাকা খরচ করে ২বিঘা টমেটো, ২বিঘা জমিতে বেগুন রোপন করেছেন। এই জমি নদী শিকস্তি-পয়স্তির কারণে খাস হওয়ায় আমরা রাজবাড়ীর জজ কোর্টে মামলা করি। ১৯৭০ সাল থেকে এই জমি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। এখন নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আমাদের জমি কেটে চারপাশে বাঁধ করে তাতে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাট করে ভিটা করার কাজ করছে। যদি সরকারিভাবে নিতেই হয় তাহলে অন্তত আমাদের সবজি মৌসুম পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক।
স্থানীয় শাহজাহান বেপারী (৫০), চানমিয়া (৪৫), সূর্য শেখ (৫০), হাফজা বেগম (৪০), করিমুন নেছা (৪৫) সহ অনেকে অভিযোগে বলেন, এখানে আমাদের আরো অনেকের প্রায় ৪২বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে মাটি কাটার কাজ চলছে। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি এভাবে নিয়ে নিলে আমরা চরমভাবে অসহায় হয়ে পড়বো। প্রশাসন আমাদের মাঠের ফসল তোলার সময় পর্যন্ত দিচ্ছেনা। আমরা আমাদের ফসল ও পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভুমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গৃহনির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গোয়ালন্দে ৪৩০টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে নদী ভাঙ্গনের শিকার অসহায় ১৫০টি পরিবারকে এ অঞ্চলে পূনর্বাসনের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি খাস জমিতে ভিটে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
ইউএনও আরো বলেন, জমির মালিকানা দাবি করলেও স্থানীয়রা মালিকানার পক্ষে এখন পর্যন্ত বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সরকারি জমিতে সরকারি কাজ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। ডিসেম্বরের মধ্যে ভিটে তৈরির কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha