বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র কর্মকর্তা মহিন হোসেন আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে এসেছেন বাজার করতে। এক কেজি আলু ৭০ টাকা, বেগুন এক কেজি ৮০ টাকা, ফুলকপি বড় সাইজের একটি ৭০ টাকা, শিম ৫০০ গ্রাম ৪০ টাকা। এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৯০ টাকা দিয়ে রসুনের দাম অতিরিক্ত থাকায় মাত্র ৫০০ গ্রাম কিনেছেন ১২০ টাকা দিয়ে।
বাড়ি থেকে স্ত্রী বলেছিল তরকারির পাশাপাশি কাঁচামরিচ কিনতে। টাকার হিসেব করে দেখে চার প্রকার তরকারি ক্রয় করার পর অবশিষ্ট কোনো ৩০ টাকা রয়েছে। ২৫০ গ্রাম কাচামরিচের দাম আলফাডাঙ্গা বাজারে ৩০ টাকা। শেষে দোকানিকে ৫০০ গ্রামে বেগুন ফেরত দিয়ে ৪০ টাকা দিয়ে বাচ্চার জন্য খাবার কিনে হেটেই বাসায় ফিরেছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে অনেক’। প্রতি বছর শীতের এ সময় সবজির মূল্য কম থাকলেও এবার ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে।
আলফাডাঙ্গা চর বাকাইল গ্রামের ভ্যান চালক নিজাম বিশ্বাস। ভ্যান চালিয়ে দিনে আয় হতো ৫০০-৬০০ টাকা। এখন সকালে শৈত প্রবাহ থাকায় ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছে না। দুই দিন সকালে বের হলেও শীতের সময় ভ্যানে যাত্রী উঠতে চায় না। এজন্য নিজামের দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। রোজগার কমলেও খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। সীমিত আয়ে সংসারের খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে তার।
আলফাডাঙ্গা পৌরসভার নওয়াপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক জিল্লুর রহমান জাপান জানান, প্রতি বছর শীতের এই সময় বাজারে তরকারি বিক্রি করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী বাজারে ফেলে যায়। অনেকে পাতা কপি ও মূলা বস্তা হিসেবে ক্রয় করে নেয় গরুর খাদ্য হিসেবে। সেই সবজি এখন বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে উপজেলা অন্যসব বাজার থেকে আলফাডাঙ্গায় তরকারীর দাম অনেক বেশি রাখা হয়। আমি এখন আর আলফাডাঙ্গা বাজার থেকে তরকারি ক্রয় করি না।
আলফাডাঙ্গা সদর বাজার, গোপালপুর হাট, জাটিগ্রাম হাট, হেলেঞ্চা হাটসহ কয়েকটি হাটে ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের শীতের সময়ের তুলনায় শাকসবজির দাম অনেক বেড়েছে। তবে দাম ওঠানামা করে। স্থানীয় চাষিরা সবজি বেশি করে বাজারে নিয়ে এলে দাম কিছুটা কমে। তবে বিক্রেতাদের আশা ছিল শীতের সময় সবজির দাম কম হবে। সাধারণ মানুষ সবজি কিনে খেতে পারবে। দুই মাস শীত অতিক্রম হলেও শীতের সবজি কমার কোনো লক্ষণ নেই।
আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের তরকারি হাটের তুলনায় অনেক বেশি দাম রাখা হয়। বাজার করতে আসা অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গৃহস্থদের বাজারে তরকারি আনা মাত্রই বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পাইকেরি দরে ক্রয় করেই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ঝগড়া হতে দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখন সবজির মাত্র ৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বাকি ৭০ শতাংশ অন্য জেলা থেকে আসে। বাজারে এখন আলু এখন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে । কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, নতুন পেঁয়াজ ৯০, আদা ও রসুন ২৪০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা ৮০, শিম ৮০, বেগুন ৮০, ফুলকপি ৫০,মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিচ ৪০ এবং লাউ আকারভেদে ৭০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পুঁইশাক, পালং শাক ও লাল শাক ২০-৩০ টাকার বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বাড়ার কথা জানান স্থানীয় সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন মিয়া। তিনি দাবি করেন, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। শীতাকালিন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে, এখন দাম বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়লেই দাম কমে যাবে।
আলফাডাঙ্গা সবজি ব্যবসায়ীদের সভাপতি জুদ্দু মিয়া জানান, শীতের শুরুতে হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়াতে আমাদের এ অঞ্চলের অনেক সবজি চাষীদের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের উৎপাদন করা সবজি বাজারে সরবরাহ খুব কম। তবে আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে তরকারির দাম কমে যাবে। আমাদের বেশি দামে আড়ত থেকে তরকারি ক্রয় করতে হচ্ছে। তাই কম দামে এ মুহুত্বে সবজি বিক্রি করতে পারছি না।
সব ধরনের মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম হলেও মাছ ধরা পড়ছে না। নদীর মাছ প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষকরা ছোট রুই,মাঝারি সাইজের কাতলা,সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও ব্রিগেট মাছ দুই মাস ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। এখন ৩০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। ১৫০ টাকার পাঙ্গাশ মাছ এখন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও বয়লার মুরগী ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী পবন দাশ বলেন, আমাদের স্থানীয় ভাবে মাছের জোগান কম। দেশী মাছ সামান্ন কিছু আসলেও অনেক দামে বিক্রি হয়। চাষ করা মাছ আনা হয় খুলনা-বাগেরহাটসহ অন্য জেলা থেকে। পাঙ্গাশ মাছ আনা হয় ময়মনসিংহ জেলা থেকে। যাতায়াত খরচ বেশি হওয়াতে বেশি দামে বিক্রি করতে হয় ।
ছয় মাসের তুলনা করলে কাঁচাবাজারের শাকসবজির দাম প্রায় দিগুন হয়েছে বলে জানান আলফাডাঙ্গা সদর বাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুদ্দু মিয়া। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ সময় শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়ে। এখন বাজারে বিক্রি হওয়া শাকসবজির প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি জেলার বাহিরে থেকে আসে। এ জন্য দাম বেশি।
শাকসবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যেতিশ্বর পাল বলেন, বাজার তদারকি করে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha