ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও পর্যটনে সমৃদ্ধ কুষ্টিয়ার কুমারখালী রেলস্টেশনে এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কুমারখালী রেলস্টেশন চত্বরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণ কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে তারা এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা দ্রুত এক্সপ্রেস ট্রেন দুইটির যাত্রা বিরতির দাবি জানান।
পার্শ্ববর্তী খোকসা এবং পাংশা স্টেশনে বেনাপোল এক্সপ্রেস সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামের দুইটি করে ট্রেন দুই মিনিট করে যাত্রা বিরতি দিচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই উপজেলাবাসী ও বাইরে থেকে আগত ব্যবসায়ী, দর্শনার্থীসহ নানা শ্রেণির মানুষ। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীক নেতৃবৃন্দসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মানববন্ধনে কুমারখালী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বায়ক আবু দাউদ রিপনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান মানু, কবি ও সাহিত্যিক লিটন আব্বাস, কাঙাল হরিনাথ প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম আর শাহিন, উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ভোরের ডাক পত্রিকার কুমারখালী প্রতিনিধি মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতি, শিল্প ও পর্যটনে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত কুমারখালী রেলস্টেশনে নেই এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই উপজেলাবাসী ও বাইরে থেকে আগত ব্যবসায়ী, দর্শনার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। পিছিয়ে পড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য।
জানা গেছে, গড়াই নদীর কোল ঘেঁষে ১৮৬৯ সালে কুমারখালী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের লুঙ্গি, গামছা, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য। প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে রেলপথেই সম্প্রসারিত হচ্ছে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য।
এছাড়াও এই উপজেলায় রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী, বিষাদসিন্ধু রচিয়তা মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের জন্মভূমি ও স্মৃতিজাদুঘর, বিপ্লবী বাঘা যতীন, জাতীয় সংগীতের সুরকার গগন হরকরা, বাউল সম্রাট লালন ফকিরের আখড়াসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যেখানে প্রতিদিনই দেশ ও বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীদের আনাগোনা হয়।
এ বিষয়ে কুমারখালী কাপুড়িয়া হাটের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, তাঁতশিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে কুমারখালীতে। প্রতিমাসে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি চালু না হলে ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষতি হবে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে।
কবি ও সাহিত্যিক লিটন আব্বাস বলেন, ব্রিটিশ ভারতের ঐতিহ্য নগরী কুমারখালী। সাংস্কৃতিক রাজধানীর এই জনপদকে মনীষীদের তীর্থভূমি বলা হয়। সেই জনপদে ট্রেন থামবে না, তা খুব দুঃখজনক। যে জাতি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিল্পকে স্মরণ করে না; সে জাতি তাদের ঐতিহ্যগতভাবে কতটা অগ্রসর হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
কুমারখালী রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সোহেল রানা বলেন, খোকসা ও পাংশায় এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এসেছে। কিন্তু কুমারখালীর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ইউএনও মো. মাহবুবুল হক বলেন, ঐতিহ্যবাহী কুমারখালীতে এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।