বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সম্ভাবনার দেশে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নপ্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান শক্তি।’
গতকাল রবিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে এম জে আকবর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে।
আর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্র চেপে বসেছিল, গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটছিল। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এম জে আকবর ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন এবং আগামী দশকে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আলোচনায় মূল বক্তা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে শুধু উন্নয়নের দিকে নয়, চারটি মাত্রাবিশিষ্ট আধুনিকতার দিকে নিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা চারটি মাত্রায় বিচরণ করেছেন। অনেক রাষ্ট্রই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে; কিন্তু আধুনিক হতে পারেনি।
এম জে আকবর বলেন, ‘গণতন্ত্র ও প্রতিটি ধর্মের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো দেশ আধুনিক রাষ্ট্র হতে পারে না। প্রতিটি বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলো অন্তর্ভুক্ত জাতীয়তাবাদ।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিকার ও স্বাধীনতার এই তাত্ত্বিক বিষয়কে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’ তিনি লিঙ্গসমতা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্য দূর না করে আপনারা একটি আধুনিক রাষ্ট্র হতে পারবেন না।
বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পথে হাঁটছে। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের জীবদ্দশাতেই হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর কারো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়। এ কারণেই মানুষ শেখ হাসিনাকে বারবার নির্বাচিত করে।”
এম জে আকবর তাঁর বক্তব্যে গণতন্ত্রের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন এবং স্থিতিশীলতা ধ্বংস করার চেষ্টাকারী শক্তিগুলোর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি, বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে।’
ভারতের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার জন্য তাঁদের সাধুবাদ জানানো উচিত। এটি সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।’
এম জে আকবর বলেন, বাংলাদেশের উচিত নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের পক্ষ নেওয়া।
গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে কারো ওপর বিদেশি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন হয় না। জনগণ, ভোটাররাই নিষেধাজ্ঞা দেন।’
অনুষ্ঠানের পর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এম জে আকবর বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন রাষ্ট্র নয় যে ভয় পাবে। কেউ আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেই আমি ভয় পাব, এমনটি হয় না।’
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের কারণে নয়, বাংলাদেশের প্রত্যাশার কারণেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের অর্থ শুধু পাঁচ বছর পর ভোট দেওয়া নয়। এটি প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তের চর্চা। এটি একটি জীবন্ত অভিজ্ঞতা।’
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও সার্ককে আরো সক্রিয় করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এম জে আকবর বলেন, ‘সন্ত্রাস ও সহযোগিতা একসঙ্গে চলতে পারে না। একসময় বাংলাদেশও সন্ত্রাস, উগ্রবাদের শিকার হয়েছে। সন্ত্রাস বাদ দিতে পারলে সব ধরনের সহযোগিতা চলবে।’
আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের অর্জিত উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সুযোগের দেশ। বাংলাদেশ গণতন্ত্র অনুসরণ করছে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর মাশফি বিনতে শামস।