সারাদেশে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন ৬৫ জন ভিআইপি প্রার্থী। এদের মধ্যে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের হুইপও রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের মাঠে টিকে থাকতে পারলে এসব আসনে তুমুল লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে এসব ভিআইপির বিজয় নিশ্চিতে লড়াই করতে হবে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে।
গত ২৬ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তখন দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত রাখার কথা জানানো হয়েছিল। তবে আগের ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এখন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের পদধারীদের ঢালাওভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ মিলবে না। তবে এ ক্ষেত্রে দলটি কী কৌশল নেবে তা জানা যাবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরে।
এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এটা ঠিক যে, অনেক আসনেই আওয়ামী লীগের পদধারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমরা বেশ চাপের মুখে রয়েছি। তবে এটা নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি, ৪ ডিসেম্বরের আগেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের পদধারী অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত হয়েছেন। আবার অনেকেই নিষেধ করা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মাঠ থেকে সরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ কী কৌশল গ্রহণ করে, তার দিকে তাকিয়ে শরিক দলের প্রার্থীরাও। চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা ভিআইপি প্রার্থীরাও আশা করছেন দল শেষ মুহূর্তে হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কঠোর হবে।
ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। গতকাল ইসি সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করলেও তাদের ৩০৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সারাদেশের ৩০০ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে ২ হাজার ৭১১টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১ হাজার ৯৬৪ জন, বাকি ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৯টি দল বিএনপিসহ ১৫টি দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখনই চূড়ান্ত হবে কোন আসনে কার বিরুদ্ধে কে টিকে থাকবেন চূড়ান্ত লড়াইয়ে।
এদিকে, দিনাজপুর-৩ আসনে মনোনয়ন দাখিলের আগে রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চনকে থানায় দুই ঘণ্টা আটক রাখার খবর পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে তাঁকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায় এবং রাত সোয়া ২টার দিকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন দিনাজপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এদিকে ওই আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজকে মনোনয়নপত্র জমা না দিতে হুমকি দিওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
রংপুর বিভাগ
রংপুর বিভাগের আট জেলার ৩৩টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী হয়েছেন ২৭৭ জন। ৯২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের পদধারী আছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে আটটি আসনে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
রংপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এখানে মোট চারজন প্রার্থীর মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল। লাঙ্গল মার্কার আসন হিসেবে পরিচিত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টিপু মুনশি এমপি হন। কিন্তু এবার জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতা না হলে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে সরকারের এই মন্ত্রীকে।
রংপুর-৫ আসনের এমপি এইচ এন আশিকুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। দুই গ্রুপই শক্তিশালী। এই আসনে এবার নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপিপুত্র রাশেক রহমান। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জাকির হোসেন।
দিনাজপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন হুইপ ইকবালুর রহিম। এখানে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ।
দিনাজপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক।
লালমনিরহাট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমান এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও ঢাবির সিনেট সদস্য আতাউর রহমান প্রধানের।
লালমনিরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবারের এমপি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পরিবহন নেতা সিরাজুল হকের সঙ্গে হবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
নীলফামারী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। পরপর চারবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়া নূরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবারে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন। ২০১৬ সালে জয়নাল আবেদনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।
গাইবান্ধা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ সরোয়ার কবির। দলীয় নেতাকর্মীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে শাহ্ সারোয়ার কবিরের।
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৩৯টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী-১ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এবার নৌকার প্রার্থী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আয়েশা আখতার ডালিয়া। ওমর ফারুককে আটকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তারা সব প্রার্থী মিলে ‘একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী’ রাখার চেষ্টায় আছেন।
রাজশাহী-২ আসনে তিনবারের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। আসন ভাগাভাগি হলেও এই আসনে বাদশাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান রহমান বাদশা।
রাজশাহী-৩ আসনে দুইবারের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দীন এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। দু’জনের লড়াই শেষ পর্যন্ত জমজমাট হবে বলে সবার ধারণা।
রাজশাহী-৪ আসনে তিনবারের আওয়ামী লীগের এমপি এনা প্রপাট্রিজের মালিক এনামুল হক এবার মনোনয়ন পাননি। লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। তাঁর আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ।
রাজশাহী-৫ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর আসনে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন।
রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রায়হানুল হক।
জয়পুরহাট-২ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন। তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী। এতে করে কিছুটা বেকায়দায় আছেন কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন।
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডল। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। বিশ্বাসের জামাতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুলও এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের (নৌকা) মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রধান প্রতিপক্ষ মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহাদ আলী সরকার।
নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তাঁর বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপির বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।
খুলনা বিভাগ
খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মোট সংসদীয় আসন ৩৬টি। এর মধ্যে চার হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে শক্ত প্রতিপক্ষ। নড়াইল-২ (নড়াইল সদর আংশিক ও লোহাগড়া উপজেলা) আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজার বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন আটজন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী বর্তমানে এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলাইমান হক জোয়ারদার ছেলুন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, এফবিসিসিআই পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। প্রতীক বরাদ্দের সময় তাকেই নৌকা দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নৌকা পেলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। মিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
যশোর-৫ আসনে (মনিরামপুর) টানা তৃতীয়বার প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। প্রথমবার তিনি নৌকাকে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন। এর পর দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন প্রতিমন্ত্রীও। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও লড়তে হবে নিজ দলের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ৭০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি আসনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ হেভিওয়েট প্রার্থী অথবা বর্তমান এমপিকে নিজ দলের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হবে। কোথাও কোথাও অন্যান্য দলের ভিআইপি প্রার্থীকেও মোকাবিলা করতে হবে তাদের।
জেলার ২০টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তবে তাঁকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামের সঙ্গে।
ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. হাবিবুর রহমান। যদিও তাঁকে ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমের বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও প্রার্থী হওয়ায় ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
ঢাকা-৫ আসনে দলীয় প্রার্থী হারুনুর রশীদ মুন্নার বিরুদ্ধে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, এই আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। এই আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
ঢাকা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও তাঁকে লড়তে হবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি কাজী ফিরোজ রশিদের বিরুদ্ধে।
ঢাকা-১৯ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনামের বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে। আবার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শাহাজাহান ভূঁইয়াকেও ভোটের মাঠে মোকাবিলা করতে হবে। এমপি নির্বাচন করতে শাহাজাহান ভূঁইয়া এর মধ্যেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
গাজীপুর জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে টানা পাঁচবারের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী টুসীকে। তিনি বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান এমপি ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ।
মুন্সীগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ-৩ এ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বড় ছেলে ও সদ্য পদত্যাগী পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব।
মানিকগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের মধ্যে মানিকগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু, সদ্য পদত্যাগকারী সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চল।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে গণফোরামের একাংশের সভাপতি সাবেক এমপি মফিজুল ইসলাম খান কামাল প্রার্থী হয়েছেন। বিগত নির্বাচনে বিএনপির নীরব সর্মথনে মফিজুল ইসলাম কামাল প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এবার নিরপক্ষে ভোট হলে ভোটের সমীকরণ জটিল হতে পারে।
নরসিংদী জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে নরসিংদী-৪ আসনের বর্তমান এমপি ও শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোহরদী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরুর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হচ্ছে। বীরু সাবেক সেনাপ্রধান ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী লে. জেনারেল (অব.) নুরউদ্দিন খানের ভাতিজা।
কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ। এখানে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন। এ ছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এই তিন শক্তিশালী প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে এমপি প্রার্থী হওয়া নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদকে লড়তে হবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বর্তমান এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে।
টাঙ্গাইল জেলার আটটি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি ও মধুপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হকের সঙ্গে।
টাঙ্গাইল-৪ আসনে দলীয় প্রার্থী কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। স্থানীয়ভাবে লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে।
টাঙ্গাইল-৮ আসনে দলীয় প্রার্থী সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অনুপম শাহজাহান জয়। এখানে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও অনুপম শাহজাহান জয়কে হেভিওয়েট প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে মোকাবিলা করতে হবে।
ফরিদপুর জেলার চারটি আসনের মধ্যে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি আবদুর রহমানকে ‘কিংস পার্টি’খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফরকে মোকাবিলা করতে হবে। বিএনপি থেকে বিএনএমে যোগদান করেছেন শাহ জাফর। এ ছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এবং কৃষক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাবেক সহসভাপতি আরিফুর রহমান দোলন। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের ভোটে ভাগাভাগি হবে। সে ক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থীর হারার শঙ্কা রয়েছে।
ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী জাফরউল্ল্যার বিরুদ্ধে বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে পরপর দু’বার স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিক্সনকে তাঁর জনপ্রিয়তার কারণে হারানো কঠিন হয়ে পড়েছে নৌকার প্রার্থীর।
গোপালগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে গোপালগঞ্জ-১ এ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান পাঁচবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এবারও এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেনে মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কবির মিয়া।
রাজবাড়ী জেলার দুটি আসনের মধ্যে রাজবাড়ী-১ আসনে পাঁচবারের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী কেরামত আলীর বিরুদ্ধে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন চারবারের উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস। এ আসনে দু’জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
মাদারীপুর জেলার তিনটি আসনের মধ্যে মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বর্তমান এমপি ড. আবদুস সোবহান গোলাপের বিপরীতে দু’জন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা আক্তার এবং কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তৌফিকুজ্জামান। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে।
শরীয়তপুর জেলার তিনটি আসনের মধ্যে শরীয়তপুর-২ পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর ছোট ছেলে ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলী।
ময়মনসিংহ বিভাগ
ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার ২৪টি আসনের মধ্যে আটটি আসনে তুমুল লড়াই হতে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। এই আসনে বিএনপির সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
শেরপুর-১ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হুইপ আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে নৌকার প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের বড় ভাই।
জামালপুর-১ (ইসলামপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম শাহিনুজ্জামান।
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।
জামালপুর-৫ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। রাজনীতিতে নতুন মুখ আজাদের প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী এফবিসিসিআইর পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রামের ১১ জেলার ৫৮ আসনের মধ্যে অন্তত তিনটি আসনে ভিআইপি প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
কুমিল্লা-৬ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবারের এমপি হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তাঁর এ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা। এ আসনে এমপি বাহার ও সীমার প্রয়াত বাবা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আফজল খানের বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। দলীয় সমঝোতা না হওয়ায় সীমা প্রার্থী হয়েছেন এবার।
চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই আসনে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. সামছুল হক ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী চাঁদপুর-৪ আসনেও নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মাঝি পানিম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন আছেন মহাজোটের আসন ভাগাভাগির ঝুঁকিতে। তাঁর ঝুঁকি জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে নিয়ে।
সিলেট বিভাগ
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রীসহ ৭ জন নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন।
এদের মধ্যে অন্তত ৫ জনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখে পড়তে হচ্ছ। সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
সিলেট-৬ আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে প্রার্থী তালিকায় রয়েছে কিংস পার্টি খ্যাত তৃণমূল বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরী। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার হোসেন।
মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক এমপি এম এম শাহিন, সাবেক এমপি আব্দুল মতিন ও কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী শফি আহমদ সলমান। এই আসনেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির নেতা ও সাবেক এমপি মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিকের বিরুদ্ধে প্রার্থী জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha