সারা দেশের মতো ফরিদপুরের প্রতিটি উপজেলায় বাড়ছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা। বেড়ে গেছে সাংবাদিক ও সম্পাদকগণ। আর ফেসবুক তো আছেই। যার হাতে একটি এনড্রোয়েড মোবাইল আছে; সে ই সাংবাদিক। এছাড়া কিছু কিছু বিভিন্ন পেশাদার তাদের পেশাকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পন্থায় একটি কার্ড যোগাড় করে কোমরে ঝুলিয়ে বা মোটরসাইকেলের সামনে পিছে বড় বড় করে ‘সাংবাদিক’ অথবা ‘Press’ ‘Journalist’ ‘সংবাদপত্র’ সহ নাম জানা অজানা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার নাম লিখে কোন প্রকার আইন বা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে প্রকাশ্যে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকতার স্থান।
মানা হচ্ছে না অনলাইন নিউজ পোর্টাল তৈরীর নীতিমালা। ফলে তথ্য সন্ত্রাস অত্যাধিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। যেখানে একটি পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনের অনুমোদন নিতে গেলে বছরের পর বছর বহু কাঠখড় পোড়াইতে হয়। অথচ মাত্র ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অনলাইন টিভি তৈরী করেই বনে যাচ্ছেন সম্পাদক প্রকাশক কিংবা সাংবাদিক।
সাংবাদিকদের বলা হয় রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ। কেউ সমাজের আয়না বা দর্পণ বলেও অবহিত করেন। ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরনের সম্পাদক প্রকাশক কিংবা সাংবাদিকের পড়েছে ছড়াছড়ি। এ সব নাম সর্বস্ব নিউজ পোর্টালের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। টাকার বিনিময়ে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে পড়া শিক্ষার্থীরাও বনে যাচ্ছে সম্পাদক ও প্রকাশক। তাদের বেশীর ভাগই ১৫-১৮ বছরের বয়সের মধ্যে।
আবার ৫৫ থেকে ৭৫ বছরের কর্মজীবন শেষ করা কিশোর/যুবক (!) তো আছেই। টাকার বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রেস কার্ড। অনেকেই আবার নিজের স্বাক্ষরিত কার্ডে নিজেই সম্পাদক প্রকাশক, স্টাফ রিপোর্টার কিংবা জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি’র কার্ড ব্যবহার করছেন। যার ফলে সংবাদিকতায় বাড়ছে কপি পেস্টের ব্যবহার। এসব অপসাংবাদিকতা বন্ধ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুত্র জানায়, কিছু দিন পূর্বে যারা ছিল ব্যবসায়ী, ড্রাইবার, ভ্যান্ডার, হাতুড়ে ডাক্তার, ওষুধের দোকানদার, কর্মহীন যুবক, ঠিকাদার কিংবা দালালের কাজে নিয়োজিত; তারাই আজ এসব অনলাইন নিউজ পোর্টালের বদৌলতে সাংবাদিকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই হুট করে বনে যাচ্ছেন জেলা উপজেলার বড় মাপের সাংবাদিক, জেলা চীফ (জেলা কীট!) বা ব্রুরো চীফ। তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন সম্পাদক প্রকাশক কিংবা সাংবাদিক হিসেবে।
যেকোন দফতরে গিয়েই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ব্লাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। এছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিস্তির কেনা মটরসাইকেল বা ভাড়ার মটরসাইকেলে চড়ে স্ব স্ব জেলা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট চষে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোথায় কে কার গাছ কাটছে, কে পুকুর থেকে মাটি/বালু কাটছে, কার মেয়ের বিয়ে বা কে কার সাথে প্রেম করছে অথবা বাল্য বিয়ে; কখনও কখনও কার মুরগী কার বাড়ী গেল, কার বাড়ীর গরুর চোনা (গোমুত্র) কোন বাড়ীতে গেল, রাস্তা তৈরীর সময় ফেলে দেয়া মাটি বা ভাঙ্গা পলেস্তারা অথবা ভাঙ্গা ‘পিচ’ কে নিলো ইত্যাদি। এদের রয়েছে এদের মতোই সোর্স।
এসব সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে দল বেধে হাজির হন ঘটনাস্থলে। নিজেকে বিভিন্ন বাংলা ভাষার সাথে ইংরেজি মিলিয়ে (যেসব ইংরেজি কোন ডিকশনারীতেও খুজে পাওয়া যাবে না) উপস্থাপন করে বাড়ীওয়ালা বা গৃহকর্তার কিছু দূর্বল দিক তুলে ধরে। এতে কাজ না হলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওমুক স্যার তমুক স্যার আমাকে পাঠিয়েছে। কথা না মানলে এক্ষুনি থানায় খবর দিবো, নয়তো ভ্রাম্যমান আদালত বসাবে ইত্যাদি।
শেষমেষ নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে দেন দরবার করে কিছু অসদ পদ্ধতির মাধ্যমে ফয়সালা হয়ে যায়। তখন সবই হালাল। যেমন- গাছ মালিকের নিজের যায়গায় ছিলো; নিজের পুকুরের মাটি/বালি নিজের বাড়ীতে ফেলছে অথবা মেয়ের বয়স ঠিকই আছে, স্কুলে স্যাররা (স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষক) ভুল করে কম লিখেছিলো ইত্যাদি। আবার এসব ঘটনা জানাজানি হলে অনেক সময় অতি উৎসাহী হয়ে ফেজবুকে সাফাই গেয়ে দেয়। তাছাড়া ইদানিং এসব সম্পাদক প্রকাশক কিংবা সাংবাদিকরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে নেমে পড়েছে শালিশ বানিজ্যে। ফলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে সাধারণ নিরীহ ও অসহায় মানুষেরা।
এসব পত্রিকা বন্ধ করা খুবই জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা ফেজবুকের কারণে বহুগুনে বেড়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজীর ঘটনা। এদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা হারাচ্ছে তাদের গ্রহনযোগ্যতা।
এসব পত্রিকার মালিকের মধ্যে অনেকেই আবার মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত রয়েছেন, তবুও তারা সম্পাদক। নিজের পোর্টাল থেকে লাইভের মাধ্যমে জেলা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহার করে তাদের জনপ্রিয়তা হাসিল করে চলছেন। এতে করে জেলার মূলধারার সাংবাদিকতা হুমকীর মুখে পড়ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন ব্যক্তির নামে ২-৫ টি নিউজ পোর্টাল রয়েছে। আর এসব পোর্টালে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপদেষ্টা হিসেবে নাম ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সাংবাদিকতা ব্যবসা।
দেখা যায়, হঠাৎ করে কোন ব্যাক্তি বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মনগড়া ও ভিত্তীহীন রিপোর্ট তৈরী করে একই নিউজ এক সাথে একাধিক অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করে তাদের ইমেজ নষ্ট করছে। আবার উপর থেকে চাপ আসলে সাথে সাথে তা ডিলিট করে দিচ্ছেন। আবার বড় বড় নেতাদের লাইভে এনে কামাচ্ছেন অর্থ।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ গত কিছুদিন পূর্বে বলেছিলেন “সরকার কর্তৃক নিবন্ধন ব্যতিত কোন নিউজ পোর্টালের গ্রহনযোগ্যতা নাই এবং তারা কোন সাংবাদিক নয়। এদের কারণে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।” অথচ একটি পত্রিকার অনুমোদন নিতে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বার বার যাচাই বাচাই করণের মাধ্যমে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। আর এসব পত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। ফলে, ইচ্ছে করলেই যে কোন বিষয়ে সংবাদ প্রচার করতে পারেন না।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, “যেভাবে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সাংবাদিকের সংখ্যা বাড়ছে; এভাবে বাড়তে থাকলে আমরা প্রকৃত সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ছিটকে পড়তে হবে। বন্ধ করে দিতে হবে এসব পত্রিকা। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।”
এ ব্যাপারে সিনিয়র জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, সরকার এসব অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এবং তথ্য অধিদফতর কিছু অনলাইন পোর্টালকে আবেদনের প্রেক্ষিতে নিবন্ধন প্রদান করছে। যাদের নিবন্ধন পাওয়ার বাকি রয়েছে পর্যায়ক্রমে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে নিবন্ধন দেয়া সম্পন্ন করবে সরকার।
তিনি আরও জানান, যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে আবেদনকৃত অনলাইন পোর্টালের মধ্যে যেসব অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে নিবন্ধন দেয়া হবে না তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha