শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানবজীবন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা মানুষের ভিতর ও বাহির উভয়েরই স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায়। মানুষের বোধশক্তিকে জাগ্রত করে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে উন্নত স্বপ্ন দেখায়। নৈতিক ও আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলে। কিন্তু চলামান প্রেক্ষাপট আমাদেরকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা কি আমাদের আচরণের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তনে সহায়তা করছে? আমরা কি আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠছি? আমরা কি সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছি?
সমাজে নানা রকম অনাচার বাড়ছে। নৈতিকতার অবক্ষয় দৃশ্যমান। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সমাজ, দেশ নিয়ে কারো কোনো ভাবনা নেই! মানুষ তার নিজ নিজ অবস্থান থেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সব মানুষের ভিতরে অপরাধবোধ কাজ করে। আমাদের বিবেক শাণিত নয়। এর কারণ মানসম্মত শিক্ষার অভাব। ফলে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ হচ্ছে না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে কার্যকর নয়। শিক্ষার্থীরা কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ানটিটি অর্জনের প্রতি বেশি আগ্রহী। অভিভাবক ও শিক্ষকরাও এই ব্যাপারে উদাসীন। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করলেই অভিভাবক ও শিক্ষকরা সন্তুষ্ট হন। একবারের জন্য তাঁরা ভাবেন না যে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জন না করেই উত্তীর্ণ হচ্ছে।
প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি বিষয়কে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে, বলতে ও লিখতে পারে না। শোনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ইংরেজি ভাষার চারটি দক্ষতার মধ্যে কোনোটিই অর্জন না করেও ভালো ফলাফল করছে। মাতৃভাষা বাংলায়ও শিক্ষার্থীরা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। সঠিক চর্চার অভাবে নিজের মতামত/ভাব লিখে প্রকাশ করতে পারে না।
অন্যান্য বিষয়েও দীনতা রয়েছে। এসএসসি পর্যন্ত গণিত পড়েও জীবনের স্বাভাবিক হিসাব-নিকাশ করা সম্ভব হয় না। ইতিহাস পড়েও পৃথিবী এমনকি আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট নয়। আমাদের দেশ ও পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। চারদিকে নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাপকতা লক্ষ করলে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের গুরুত্বই অর্থহীন হয়ে পড়ে। যেহেতু কোনো বিষয়েই ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন না করেই শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে, সেহেতু শিক্ষকতা পেশায় এলে পাঠদান ত্রুটিপূর্ণ হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই ত্রুটিপূর্ণ পাঠ নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ জাতিই তৈরি হবে। এতে উন্নয়ন কখনো টেকসই হবে না। আর আমরা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি, তা ব্যাহত হবে। তাই মানসম্মত শিক্ষা অর্জন জরুরি।
মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারে কেবল মানসম্মত শিক্ষক। মানসম্মত শিক্ষক বলতে বোঝায়— যাঁর পর্যাপ্ত বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে এবং যিনি সমাজের একজন অনুকরণীয় আদর্শ। আর মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখতে হবে। শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো করে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষকদের দ্বিতীয় পেশায় যাতে নিযুক্ত না হতে হয় এবং শিক্ষকগণ যাতে গবেষণামূলক কাজ করতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ পরিবারের সঠিক ব্যয়ভার বহনের নিশ্চয়তা দিতে হবে তাঁদের।
লিখেছেনঃ পলাশ সরদার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও)
গোপালগঞ্জ সদর।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha