মাগুরার মহম্মদপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার দ্বন্দ্বে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিভেদ এবং বিভাজনে জড়িয়ে পড়েছেন। কর্মীরা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সংগঠনটির মধ্যে। দুই নেতার এই বিভেদ কে কেন্দ্র করে কোন সময় সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। একে অপরের দোষারোপ করে পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন আ’লীগের এই দুই নেতা। ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে স্থানীয় প্রেসক্লাবে সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি, দীঘা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. আছাদুজ্জামান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এদিন রাতেই সভাপতির পক্ষে স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম লিটন। সাংবাদিক সম্মেলনের দুই নেতা একে অপর কে অশালীন ভাষায় মন্তব্য করায় বিষয়টি টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানা যায়- ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা ও সংঘর্ষ এবং পিকআপ ভ্যান ভাংচুরে ঘটনার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মহম্মদপুর উপজেলা শহরে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়ি শহর থেকে ১০ কিলোমিটার এবং সাধারন সম্পাদকের বাড়ি ১৫ কিলোমিটার দুরে হওয়ায় খবর পেয়ে আসতে বিলম্ব হয়। প্রথম দফার প্রতিবাদ মিছিলটি শেষ হওয়ার পর শহরে প্রবেশ করেন সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান। এ সময় সদর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জল আক্তার কাফুর এবং আছাদুজ্জামানের সাথে শহরের প্রবেশদ্বারে আব্দুল মান্নানের দেখা হয়। শহরে এমন বিশৃঙ্খল ঘটনায় তার আসতে দেরি হওয়ার কারনে ক্ষুদ্ধ হন ওই দুই নেতা এবং বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। এ সময় আছাদুজ্জামান আব্দুল মান্নান কে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে গত ৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পবার রেজুলেশন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আছাদুজ্জামান কে সাময়িক বহিস্কার করেন।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার বিকেলে সভাপতির স্থানীয় প্রেসক্লাবে তিনি সভাপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন আছাদুজ্জামান। তিনি অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৯০ পরবর্তী সকল আন্দোলনে মহম্মদপুরের প্রেক্ষাপটে আমি অগ্রনি ভূমিকা পালন করে এসেছি। ২০০৬ এবং ১০১৪ সালে মহম্মদপুর উপজেলা শহরে বিএনপি-জামাত জোট যে অপতৎপরতা চালিয়েছিল সেদিন আমি জীবন বাজি রেখে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে ছিলাম। আমি কোন দিন সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কোন কাজ করি নাই। গত ১ সেপ্টেম্বর মহম্মদপুরে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর যে হামলা এবং শহরে অরাজকতা সৃষ্ঠি করেছিল আমি খবর পেয়ে মহম্মদপুরে ছুটে এসে নেতা-কর্মীদের সংঘবদ্ধ করে সেদিন বিএনপি’র অপতৎপরতাকে রুখে দিয়ে পুলিশ কে সহযোগিতা করেছিলাম। সেদিন আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপিতর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সেদিন আপনার দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম লিটনের চাচা নুরল মোল্যার নেতৃত্বে সেদিন সহশ্রাধিক লোক বিএনপি’র হয়ে মহম্মদপুর এসে সেই বিশৃঙ্খলায় সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিএনপি জামাত কে ইন্ধন দিয়ে থাকেন এঘটনার প্রতিবাদ করায় ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি আমাকে একটি হত্যা মামলার আসামি করেন। এবং আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তিনি ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার্থে আমাকে দল থেকে বহিস্কার করেছেন। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহম্মদপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জল আক্তার কাফুরসহ শতাধিক নেতা-কর্মী।
এই সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নানের পক্ষে শনিবার রাতে শহরের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম লিটন। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অসম্মান এবং সংগঠনের মধ্যে বিশৃঙ্খরার দায়ে সদ্য বহিস্কৃত মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. আছাদুজ্জামান সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটন এবং আমার বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে করে যে অপপ্রচার এবং মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সংগঠনের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করছেন।
১লা সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের দলীও কোন প্রগ্রাম ছিল না। ফাঁকা মাঠে বিএনপি সেদিন পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছিল। তবুও খবর পেয়ে সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক সেদিন ছুটে এসে নেতা-কর্মীদের সংঘবদ্ধ করে সেদিন শহর থেকে বিক্ষুদ্ধ বিএনপি কে হঠাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাছাড়া আমার চাচা নুরল মোল্যার নেতৃত্বে বিএনপির পক্ষ হয়ে সেদিন কোন ভূমিকা রাখেন নি। তিনি আওয়ামী লীগের কোন পদে না থাকলেও সব সময় সংগঠন কে নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, আছাদুজ্জামান একজন উৎশৃংখল কর্মী। তিনি একটি হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি। এলাকার ডাকাত এবং মাদক কারবারিদের সহযোগী। তার এই উৎশৃঙ্খল জীবন-যাবন ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ায় তাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার ও স্থায়ীভাবে বহিস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সকল কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বার লিখিত বক্তব্য শেষ করেন।
মাগুরার মহম্মদপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা দ্বন্দ্বে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিভেদ এবং বিভাজনে জড়িয়ে পড়েছেন। কর্মীরা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সংগঠনটির মধ্যে। দুই নেতার এই বিভেদ কে কেন্দ্র করে কোন সময় সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। সাংবাদিক সম্মেলনের দুই নেতা একে অপর কে অশালীন ভাষায় মন্তব্য করায় বিষয়টি টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে দুই নেতা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসকে নুরুজ্জামান বলেন, আছাদ কে গঠনতন্ত্র অনুসরন না করে বহিস্কার করা হয়েছে। সব নাটের গুরু স্থানীয় এমপি বীরেন শিকদার। তিনি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্ঠি করতে এদের কে উস্কে দিয়েছেন। এর পরিনাম ভাল হবে না। স্থানীয় এমপি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আছাদ কে বহিস্কার করা সংগঠনের একটা তাৎক্ষণিত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে জেলা কমিটির সাথে কথা বলে সমাধান করার সুযোগ আছে। যেহেতু আওয়ামীলীগ একটা বড় দল এনিয়ে নেতা-কর্মীদের উপর সাময়িক প্রভাব পড়লেও তা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha