অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ এবং বিভাজনে চরম দুরাবস্থার মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি এবং ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তর থেকে অধিনস্তদের যোগাযোগ, সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণ বা আদেশের পালাক্রম না থাকায় চরম বিশৃঙ্খলায় পড়েছে সংগঠনটি।
অন্যদিকে পদাধিষ্ঠ নেতৃবৃন্দের দায়বদ্ধতা পক্ষপাত হওয়ায় চরম বিভেদ প্রতিফলিত হয়েছে প্রাচীনতম এই সংগঠনটির মধ্যে। এ ক্ষেত্রে অনমনীয় অবস্থানে থেকে একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে নেতারা নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ফলে ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট। অভ্যন্তরীণ এই বিভাজন তৃণমুলে ছড়িয়ে পড়লেও সমঝোতায় কেউ এগিয়ে আসছে না। তবে সংগঠরের অন্তরলে থাকা সাবেক সিনিয়র নেতারা মনে করছেন এমন অবস্থা চলমান থাকলে এর প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
অন্যদিকে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ এলাকার বিএনপি’র রাজনীতি। ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিছিল থেকে বিএনপি’র বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা, সংঘর্ষ ও তাদের ব্যবহৃত একটি পিকআপভ্যান এবং তিনটি মটরসাইকেল ভাংচুর এবং সংঘর্ষ চলাকালিন সময়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতে থানার ওসি তদন্তসহ ৫ পুলিশ অফিসার ও একজন কনেষ্টবেল আহত হওয়ার ঘটনায় মহম্মদপুর থানায় এজাাহারভূক্ত ১০১ এবং অজ্ঞাত দেড় হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করে ২ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে মামলা হওয়ায়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ত্যাগ করায় তাদের রাজনীতি এখন লক্ষভ্রষ্ঠ।
আওয়ামীলীগ-
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রবীণ নেতা আলহাজ্ব গোলাম রব্বানীর মৃত্যুর পর অনেকাংশে ঝিমিয়ে পড়ে এ এলাকার রাজনীতি। সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতক্ষ ভোটে অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান সভাপতি এবং মোস্তফা কামাল দিদ্দিকী লিটন সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক প্রার্থী থাকা সত্বেও সেদিন আর কাউকে পদাধিষ্ঠ না করায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্ঠি হয়। এবং সেখান থেকে শুরু হয় বিভাজন। এরপর কেটে যায় তিন বছর। কমিটি এবং পাল্টা কমিটি জমা পড়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হাতে। ক্রমাগত জটিল হতে থাকে রাজনীতি। পরে জেলা কমিটির হস্তক্ষেপে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন হয় মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। তবুও স্বস্থি ফিরে আসেনি রাজনৈতিক অঙ্গনে। দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে নেতা-কর্মীরা। জাতীয় শোক দিবস পালনের ক্ষেত্রেও রয়ে যায় বিভক্তি। ১৫ আগষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি ড. শ্রী বীরেন শিকদার, এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সসদ্য নির্মল চ্যাটার্জী। এ অনুষ্ঠানে নির্মল চ্যাটার্জিকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। ২৮ আগষ্ট আওয়ামী লীগের আরেকটি গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপজেলা মৎসজীবি লীগের আয়োজনে অনাড়ম্বর পরিবেশে শোক দিবসের প্রোগ্রাম করেন। এখানে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জেলা আওয়ামী মৎসজীবি লীগের প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব আশরাফুজ্জামান হিসাম।
এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিছিল থেকে বিএনপি’র বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা, সংঘর্ষ ও তাদের ব্যবহৃত একটি পিকআপভ্যান ভাংচুর এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতে থানার ওসি তদন্তসহ ৫ পুলিশ অফিসার ও একজন কনেষ্টবেল আহত হওয়ার ঘটনায় মহম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলায় ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ঠ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সজিব শিকদারসহ বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তির নামা না থাকা এবং এ মামলায় একজন ছাত্রলীগ নেতার নাম থাকায় রোষানলে পড়েছেন সংগঠনের দ্বায়িত্বশীল নেতার। তাছড়া পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে এখানে। অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আত্মীয়তার সুবাদে বিএনপি’র অধিকাংশ নেতা-কর্মীর নাম বাদ রেখে এ মামলায় অভিযুক্তদের তালিকা প্রনয়ন করা হয়েছে। নৃশংস এ ঘটনার ধারণ করা ভিডিও চিত্রে যাদের দেখা গেছে আসামির তালিকায় তাদের অধিকাংশ ব্যক্তির নাম নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে মামলার পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন বিতর্কিত নেতা সাধারন মানুষকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে। এবং গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলা শহরসহ গ্রামের হাট-বাজার গুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বানিজ্যে। তবে অধিকাংশ বিষয়ে নেতৃবৃন্দ একে অপর কে দোষারপ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটন বলেন, সমসামিক রাজনৈকি সমস্যা সমাধানে শ্রীঘ্রই মিটিং ডাকা হবে। সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘটনায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ একক সিদ্ধান্তে মামলা এবং আসামিদের তালিকা প্রনয়ণ করেছে। এখানে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। এলাকায় গ্রাম রাজনীতি থাকার কারনে কিছু নেতা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে তালিকা প্রণয়নে সংযোযন বিয়োজন করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ঠদের বিষয়ে পুলিশ কে অবহিত করা হয়েছে। তাদের কে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এজাহারে ছাত্রলীগ নেতার নাম থাকার বিষয়ে তিনি দু:খ প্রকাশ করেন। সাধারন মানুষ কে ভয়ভীতি দেখিয়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার অর্থ আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি শুনেছি। সত্যতার প্রমাণ মিললে কেবল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য বা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন সংগঠন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থাকতেই পারে। তবে সমসায়িক সমস্যা নিয়ে আমি সকল কে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।
বিএনপি-
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে বিগত দিনের ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে সমন্বয় সাধন করে হঠাৎ করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা সমাবেশ করে সংগঠনটি সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা। বিএনপি’র আহবায়ক অধক্ষ মৈমুর আলী মৃধা এবং সদস্য সচিব সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারজ্জামানের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে খুলনার আঞ্চলিক সমাবেশ এবং ঢাকার মহা সমাবেশে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি গোচরীভূত হয়েছিলেন তারা। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলা সদরে বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিছিল থেকে বিএনপি’র বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা, সংঘর্ষ ও তাদের ব্যবহৃত একটি পিকআপভ্যান এবং তিনটি মটরসাইকেল ভাংচুর এবং সংঘর্ষ চলাকালিন সময়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতে থানার ওসি তদন্তসহ ৫ পুলিশ অফিসার ও একজন কনেষ্টবেল আহত হওয়ার ঘটনায় মহম্মদপুর থানায় এজাাহারভূক্ত ১০১ এবং অজ্ঞাত দেড় হাজার নেতা-কর্মীর নামে থানায় মামলা হওয়ায় এবং নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ত্যাগ করায় তাদের রাজনীতি ভূলণ্ঠিত হয়েছে এবং অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির রাজনীতি। এ বিষয়ে মুঠোফোনে বিএনপি’র একাধিক সিনিয়র নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যানি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha