ফরিদপুরের সালথায় গুজব ছড়িয়ে তান্ডবের ঘটনায় ৫ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে প্রত্যেকটি মামলায়।
এবং এ পর্যন্ত মোট আটক হয়েছে ৫১জন। গত শুক্রবার এক দিনে আটক হয়েছে ২২ জন, আটককৃতদের জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে । এর মধ্যে অনেক কে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ঘটনার সাথে প্রকৃত জড়িতদের বের করতে।
ঘটনার পরের দিন ৬ এপ্রিল পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় সালথা থানার এস আই মিজানুর রহমান বাদি হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা হয়েছে। এর পর গত ৮ এপ্রিল আরও ৪টি মামলা করা হয় বিভিন্ন সরকারী অফিস থেকে। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকারের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় ড্রাইভার হাসমত আলী বাদী হয়ে ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
উপজেলা ভূমি অফিসে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অফিসের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস বাদী ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খাঁন হীরামনির সরকারী গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় ড্রাইভার সাগর সিকদার বাদি হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩ থেক ৪ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্্র ভাংচুরের ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মিয়া বাদি হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭ শত থেকে ৮শত অজ্ঞাত রেখে আসামী করা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (সালথা-নগরকান্দা ) সার্কেল সুমিনুর রহমান। উল্লেখ্য গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি দুই আনছার সদস্য ও ব্যক্তিগত এক সহকারী কে নিয়ে স্থানীয় ফুকরা বাজারে যান।
সেখানে লকডাউন নামতে নারাজ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা তারা জটলা সৃষ্টি করে। এ অবস্থা দেখে তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন। পরে সালথা থানার এসআই মিজানুর রহমান ঘটনাস্থালে পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে গেলে তার উপরে হামলা করে বাজারের লোকজন। এতে এসআই মিজানের মাথা কেটে গুরুত্বর আহত হয়।
পরে স্থানীয় জনতা বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে চতুর দিকে থেকে লোক জড়ো করে। সেখানে গুজব ছড়ানো হয়েছে যে ফুকরা বাজারে পুলিশের গুলিতে দুইজন মারা গেছে। এবং বাহিরদিয়া মাদ্রাসার হুজুর কে আটক করা হয়েছে। এসব গুজবে কান দিয়ে চারিদিক থেকে সাধারন জনতা ও বিএনপি, জামাত, হেফাজত দলীয় সমর্থকরা আসতে শুরু করে।
হাজারো মানুষ সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলা পরিষদ ও থানা ঘেরাও করে। উপজেলা ভূমি অফিসে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায়ে উপজেলা পরিষদের মেইন গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পরিস্থিতি আস্তে আস্তে আরও খারাপ হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসবভনে ডুকে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং কয়েক দফা ইউএনও বাস ভবনেও অগ্নি সংযোগের চেষ্টা করে তারা। উপজেলা চেয়ারম্যানের বাস ভবনেও হামলা করে ভাংচুর করা হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনেও হামলা ভাংচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ছড়ে আর জনতা ইট পাটকেল বাসের লাঠি দিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে। এতে ৮ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক লোক আহত হয়।
এসময় জুবায়ের হোসেন (১৯) নামের একজন মারা যায়। এবং ঘটনার দুদিন পর মিরান মোল্যা (৩০) নামের একজন মারা যায়। এ ঘটনায় তদন্তের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট্র মোসা. তাসলীম আলীকে ।
আরও একটি তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্লাকে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha