হুমকির মুখে পড়েছে ঝিনাইদহের জনস্বাস্থ্য। জেলার লক্ষাধীক নলকুপ মাসের পর মাস পানিশূন্য অবস্থায় রয়েছে। পানির জন্যে চলছে হাহাকার আর মাতম। মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদী কোথাও নেই পানি। পানি নেই নলকুপেও। জেলার ৬টি উপজেলায় লক্ষাধীক নলক‚পে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে জেলার শুধুমাত্র শৈলকুপা উপজেলাতেই ৩০ হাজার নলক‚প পানির অভাবে অকেজো হয়ে গেছে।
এ ছাড়া সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুর সহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে কোন নলক‚পেই পানি উঠছে না। গত কয়েক মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। কিছু কিছু জায়গাতে পানি মিললেও চলতি মাসের শুরুতে একেবারেই পানিশূন্য সব নলক‚প। পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলি ক্রমেই পানি শূন্য আর গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সব নলক‚পই এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এ অঞ্চলে গত ৬মাসের বেশী সময় ধরে বৃষ্টিও নেই ফলে ক্রমেই অবস্থার অবনতি অব্যহত রয়েছে।
তাছাড়া কৃষকেরা জানায়, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রত্যেক শুষ্ক মৌসুমে তাদের সেচ খালগুলিতে পানি দিয়ে থাকে কিন্তু এবারে কোন ধরনের পানি ছাড়েনি প্রকল্প থেকে। সেচ খালে পানি প্রবাহ থাকলে নলকুপগুলোতেও পানির স্বাভাবিকতা কিছুটা থাকে। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির, গ্রামাঞ্চলে প্রত্যেক বাড়ির নলকুপ অকেজো। ফলে একদিকে রান্না-বাড়া সহ ঘর-গৃহস্থালীর কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে অন্যদিকে গরু-ছাগল বা গৃহপালিত পশু-পাখির জন্যও পাচ্ছেনা বিশুদ্ধ পানি।
এমন অবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে, ব্যাক্তি উদ্যোগে যারা বাড়িতে নলকুপ বসিয়েছে তারা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়রের পরামর্শ নিয়ে নলকুপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে। ডিজাইন অনুসারে টিউবওয়েল না বসালে প্রত্যেক শুষ্ক মৌসুমে এটি ঘটতেই থাকবে। দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ৬টি উপজেলা।
এগুলো হলো শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও ঝিনাইদহ সদর। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াই সহ বেশকিছু নদনদী প্রবাহিত। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত, হচ্ছে ফসলের চাষ। অনুসন্ধান ও তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলার উপজেলাগুলোর ভেতরে শুধুমাত্র শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭হাজার ৫শ নলকুপ। যার ভেতরে এই মুহুর্তে ৩০হাজার নলকুপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে ২লক্ষাধীক মানুষের জীবনযাত্রা এখন প্রায় অচল।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর শৈলকুপা উপজেলার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলাতে ৩৭হাজার ৫শ নলকুপ রয়েছে, তার মধ্যে সরকারী নলকুপ মাত্র ১৫শ, বাকী সব ব্যাক্তিমালিকানার। এসবের ভেতরে ৩০হাজারই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, উপজেলার বেশীরভাগ টিউবওয়েলে পানির সংকট শুরু হয়েছে। তাদের অফিসপাড়ার ৪টি নলক‚পই অকেজো বলে জানান।
সরেজমিনে শৈলকুপার ধলহরাচন্দ্র ,কুশবাড়িয়া, মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর, কবিরপুর সহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সমস্ত অগভীর নলকুপ অকেজো। গত মাসেও কিছু নলকুপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে সব নলকুপ। গ্রামের দারিদ্র মানুষগুলো এমন অবস্থায় নদনদী বা দূরের কোন জলাশয় থেকে পানি এনে ফুটিয়ে তা পারিবারিক সব কাজে ব্যবহার করছে।
মনোহরপুর গ্রামের গৃহবধু সাগরী, কৃষক মোকন মিয়া, বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক ভুন্ডলে মিয়া সহ অনেকে জানান, গত কয়েকমাস ধরেই তাদের নলকুপে কোন পানি নেই। শুধু গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে নয় পানি নেই স্কুল-কলেজ, বিদ্যালয়ের নলকুপ, পানি নেই হাসপাতালের নলকুপেও। হাট-বাজার, মাঠ-ঘাটের সব জায়গাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সামর্থবান মানুষ মাটখুঁড়ে তাদের নলকুপের নীচে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ইঞ্জিন চালিত জলমটর বা সাবমার্সেল পাম্প বা এ জাতীয় মটর স্থাপন করে নলকুপের পানি সচল রাখছে।
টিউবয়েল ব্যবসায়ী মনিনুর রহমান জানান, তাদের ঘরের শ্রমিকরা গ্রামাঞ্চলে নলকুপ বসিয়ে থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ফুট মাটির নীচে পানির লেয়ার বা স্তর পাওয়া যায় কিন্তু এখন নলকুপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নীচে পানির লেয়ার মিলছে। তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না বলে এই ব্যবসায়ী জানান।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম চালানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সচেতন মহলের অনেকেই। মাঠে সেচকাজে ব্যাপকহারে সেচপাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পনির অতিরিক্ত ব্যবহার করায় সংকট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছে।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে বলে মতামত তাদের। সুপেয় পনির সংকটে জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে শৈলকুপা হাসপাতালের ডাক্তার রাশেদ আল মামুন জানান, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করতে পারলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুকি থেকে যায়। বিশেষ করে শিশুরা ডাইরিয়া, আমাশয়, পেটেরপিড়া সহ নানা অসূখে পড়ে।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বে-সরকারী বা ব্যাক্তি উদ্যোগে নলকুপ রয়েছে তা তাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারীভাবে জেলায় ৩২ হাজার নলকুপ স্থাপন করা আছে। আর এসব নলকুপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে।
তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলে তারা জানিয়েছেন যাতে ডিজাইনমাফিক নলকুপ স্থাপনের আইন পাশ হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকুপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে বলে তিনি পরামর্শ দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha