কুষ্টিয়ায় নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব চলছে। শহরতলীর কুমারগাড়া এলাকায় প্রভাবশালী একটি চক্র গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুই পাড়ের ছয় শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে ফেলেছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চললেও যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া বিসিকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জিকে সেচ খালের দুই পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার প্রায় ছয় শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ গত কয়েক দিন ধরে নির্বিচারে কাটছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। গাছ নিধনের এই মহোৎসবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা ও স্থানীয় ২০ নম্বর পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত বৃক্ষ নিধনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ইলেকট্রিক করাত।
কুমারগাড়া খালপাড়া এলাকার বাসিন্দা তরিকুল বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে খাল পাড়ের গাছ কেটে ট্রলি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালভার্ট থেকে শুরু করে পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত দুই পাশ দিয়ে কমপক্ষে ৬০০-৭০০ গাছ ছিল। ইলেকট্রিক করাতের সাহায্যে দ্রুত গাছগুলো কেটে ফেলে ট্রলি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম, খালের সেচ কমিটির সভাপতি বড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক এবং পাউবো কুষ্টিয়ার সহকারী সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বিচারে এই বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব চলছে।
তবে পাউবো কুষ্টিয়ার সহকারী সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ নিজ বাড়ির সামনের গাছ কেটে নিয়েছেন। তিনি এই গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত নন।
আর কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম বলেন, এইটার দায়িত্ব আমার না, এইটার সমিতি আছে। কে গাছ লাগাইছে, কে কাটছে, এইসব বিষয় আমি জানি না।
খালের সেচ কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেক দাবি করেন, এই গাছ কাটার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। তারাই ভালো বলতে পারবে এই গাছ কাটার সঙ্গে কারা জড়িত।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সামাজিক বনায়ন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে বনায়ন ও বৃক্ষ রোপণের কোনো বিকল্প নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, স্থানীয় একটি দুর্বৃত্ত চক্র সেচ খালের উভয় পাড় থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটেছে বলে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় স্থানীয় বটতৈল ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক ও সেলিম হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৬ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় লিখিতভাবে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেছে বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ মোকাবিলায় সরকার বৃক্ষ রোপণ ও বনায়নে দেশব্যাপী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে কুষ্টিয়াতে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগকে ব্যাহত করতে যে বা যারা বৃক্ষ নিধনে লিপ্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃক্ষ নিধনের বিষয়ে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫