ফরিদপুর-৩ আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী রাজনীতি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রচার চালাচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে বেশি সক্রিয় রয়েছে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর বাইরেও রয়েছে জামায়ত ইসলাম ।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি টানা তিনবার আসনটি ধরে রেখেছেন। তার অনুসারীরা চান তাকে দিয়েই এই আসনটি ধরেরাখা সম্ভব হবে।ক্ষমতাসীন দল চায় জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। অন্যদিকে বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। তবে নির্বাচনী
মাঠ ছেড়ে দিতে রাজী নয় জামায়াতে ইসলাম।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই আসন। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিটিং, মিছিল, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা।
শহরের অলিগলি থেকে গ্রাম-মহল্লায় শোভা পাচ্ছে বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারের অনুষঙ্গ। আবার কেউ দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে করছেন উঠান বৈঠক। কেউবা আবার গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে সরাসরি ভোটারদের কাছে দলীয় প্রতীকে ভোট চাইছেন।
এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে বর্তমানে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এ. কে. আজাদ। তিনি ঈদ পরবর্তী টানা সাত দিন দীন ধরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের বার্তা জনগণের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।
শিল্পপ্রতি এ.কে আজাদ শুক্রবার দিন ব্যাপী ফরিদপুর শহরের হাবেলী গোপালপুর রেল কলোনী জামে মসজিদের সাবেক দুই সাধারন সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম আমজাদ হোসেন খান এবং সাবেক ভূমি কর্মকর্তা নুরুল আমিন বাবুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলে অংশ নেনে। এছাড়াও তিনি একইদিন বিকালে ফরিদপুর সদরের চরমাধদিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের একটি কবরস্থান পরিদর্শন করেন ।
ঈদুল আযহা পরবর্তী সাত দিনে তিনি ফরিদপুর সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৪০ টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান পরিদর্শন করেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
এসময় এ.কে. আজাদ আরো বলেন, সকল প্রানীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। মৃত্যুর সময় দুনিয়ার কিছুই আমাদের সাথে যাবে না। মৃত্যুর পরে মানুষের সম্পদ হবে তার আমল। তিনি বলেন, আসুন আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করি। কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে আমাদের জীবন গড়ি। তাহলে দেখবেন সমাজে আর মানুষে মানুষে হানাহানি আর হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না।
এ ছাড়া মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মো. ফারুক হোসেন। তবে দীঘ দিন ফরিদপুর সদরে অনুপস্থিত বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন । শারিরিক অসুস্থায় তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন । তার সমর্থকরা মনে করে দলের মধ্যে বিদ্যমান গ্রুপিংয়ের কারনেই একমাই মোশাররফই পারেন এই আসনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে ।
এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ করছেন। সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দলীয় আসনটি ধরে রাখতে চাইছেন।
অন্যদিকে জাতীয়ভাবে এখনো বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না ঘোষণা না দিলেও দলীয় সমর্থনের আশায় একাধিক প্রার্থী এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন।
বিএনপির সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল।
আওয়ামী লীগ , বিএনপির বাইরেও জামায়াত ইসলাম কেন্দ্রীয় নেতা প্রফেসর আব্দুত তাওয়াব সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার প্রচারনার অংশ হিসেবে ব্যানার , পোষ্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে নিজেকে জানান দিচ্ছেন ।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর সদর আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লক্ষ ৬০ হাজার। এরমধ্যে দুই লক্ষ ৬১ হাজার পুরুষ এবং ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮০০ রয়েছে নারী ভোটার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম মুরসিদ (লিটু সিকদার) মোবাইল: 01728 311111