উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে পর্যটকদের পানির সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ডুব দেওয়া ডুবোযান টাইটানের সন্ধানে শেষ মুহূর্তের ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। রোববার সাগরের তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর এই ডুবোযানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডুবোযানটিতে রয়েছেন একজন চালক ও চারজন যাত্রী।
নিখোঁজ এই ডুবোযানের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার প্রচেষ্টা বুধবার শেষ রাতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। কারণ টাইটানে থাকা পাঁচ যাত্রীর অক্সিজেন সরবরাহ শেষ হওয়ার বাকি রয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
তবে মার্কিন কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, তারা এখনও আশাবাদী। উদ্ধারকারী প্রচুর সরঞ্জাম ও অনেক বিশেষজ্ঞ এই অভিযানে যোগ দিচ্ছেন। অত্যাধুনিক সোনার সিস্টেমে সমুদ্রের তলদেশে শব্দ শনাক্ত হয়েছে। তবে টাইটানকে শনাক্ত এবং এর যাত্রীদের জীবিত উদ্ধারের চ্যালেঞ্জ ক্রমান্বয়ে প্রবল আকার ধারণ করেছে।
মার্কিন কোস্ট গার্ডের ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডেরিক বলেছেন, ‘কখনও কখনও আপনি এমন অবস্থানে থাকেন, যেখানে আপনাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। এটি এখনও শতভাগ অনুসন্ধান ও উদ্ধার মিশন রয়ে গেছে।’
[caption id="attachment_44759" align="alignnone" width="1200"] -উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে পর্যটকদের পানির সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ডুব দেওয়া ডুবোযান টাইটান।[/caption]
কোস্ট গার্ড বলছে, নিখোঁজ যাত্রীরা যদি এখনও বেঁচে থাকে, তাহলে সময় তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি পরিস্থিতিতে প্রায় ৯৬ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে টাইটান। স্থানীয় সময় গত রোববার ৮টায় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের উদ্দশে ডুব দেয় এটি। বিকেল ৩টার মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু যাত্রা শুরুর পর ৯টা ৪৫ মিনিটে টাইটানের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই হিসাবে টাইটানে আর মাত্র তিন ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টাইটান অত্যন্ত ছোট এবং সরু একটি ডুবোযান। সাড়ে ২২ ফুট দীর্ঘ, ৯ দশমিক ২ ফুট ব্যাস এবং ৮ দশমিক ৩ ফুট উচ্চতার টাইটান মাত্র পাঁচজনকে পরিবহন করতে পারে। তাদের একজন পাইলট এবং চারজন যাত্রী। এর ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা নেই। খালি পায়ে মেঝেতে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনী ও বাণিজ্যিক গভীর সমুদ্রবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত দল উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন থেকে এই তল্লাশি ও উদ্ধারকাজের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
• অভিযানে অংশ নিয়েছে যেসব যান
ফ্রান্সের গভীর সমুদ্রের তলদেশে অভিযান পরিচালনায় সক্ষম অত্যাধুনিক একটি রোবট বুধবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছেছে। নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে আটলান্টিকে পৌঁছানো এই রোবট বৃহস্পতিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে অনুসন্ধান শুরু করবে। মনুষ্যবিহীন রোবট দিয়ে সজ্জিত ফরাসি সমুদ্র গবেষণাবিষয়ক জাহাজ এল’ আটলান্টা।
টাইটানের যাত্রীদের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের দুই কিলোমিটার দক্ষিণের এলাকায় ফ্রান্সের এল’ আটলান্টা পৌঁছেছে।
[caption id="attachment_44760" align="aligncenter" width="1200"] - আটলান্টিন মার্লিন নামের কানাডার একটি সরবরাহ জাহাজও এই তল্লাশি ও উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে[/caption]
• জাহাজের অবস্থান শনাক্তকারী ওয়েবসাইট বলছে, উত্তর আটলান্টিকের পশ্চিমের দিকে পাঁচ নট গতিতে চলছে এল’ আটলান্টা। এই জাহাজ থেকে দ্য ভিক্টর ৬০০০ নামের একটি অত্যাধুনিক ডুবোযান টাইটানিকের আশপাশে তল্লাশি শুরু করবে।
ফরাসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এফরেমারের এই ডুবোযান পরিচালনা করবেন দু’জন পাইলট। তারা সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা এল’ আটলান্টা থেকে চার ঘণ্টা করে দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন। ভিক্টর ৬০০০-এ রয়েছে শক্তিশালী লাইট ও ক্যামেরা। যা সমুদ্রপৃষ্ঠে জাহাজে থাকা দলটিকে একটি ছোট টেনিস কোর্টের সমান দূরত্ব পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে কী রয়েছে, তার রিয়েল টাইম দৃশ্য দেখাবে।
রোবোটিক এই যানের দু’টি যান্ত্রিক হাত রয়েছে; যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম কৌশলে ধ্বংসাবশেষ কাটা বা অপসারণ করতে পারে। ফ্রান্সের দক্ষিণের ঘাঁটির পরিবেশ বেশ শান্ত। কারণ তারা জানে, এল’ আটলান্টায় ভিক্টর ৬০০০ পরিচালনাকারী দলটি অত্যন্ত অভিজ্ঞ।
• অভিযানে অংশ নিয়েছে ডিপ এনার্জি নামের একটি জাহাজ। এই জাহাজ থেকে দুটি দূর-নিয়ন্ত্রিত যান সমুদ্রের তলদেশে পাঠানো হয়েছে। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট নিচে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করতে পারে। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা জাহাজ থেকে দূর-নিয়ন্ত্রিত যান দুটির সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখার জন্য তার সংযুক্ত রয়েছে।
[caption id="attachment_44761" align="alignnone" width="1000"] -নিখোঁজ এই ডুবোজাহাজের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার প্রচেষ্টা বুধবার শেষ রাতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।[/caption]
• আটলান্টিন মার্লিন নামের কানাডার একটি সরবরাহ জাহাজও এই তল্লাশি ও উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে। এই জাহাজও রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল (দূর-নিয়ন্ত্রিত যান) বা আরওভি বহন করছে। তবে এই যান কত গভীরে কাজ করতে পারে তা জানা যায়নি।
• উপসাগরে সহায়তাকারী জাহাজ স্ক্যান্ডি ভিনল্যান্ডও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে। এই জাহাজে দুটি আরওভি রয়েছে। তবে এসব যানও কতটা গভীরে কাজ করতে পারে তা জানা যায়নি।
• বাণিজ্যিক জাহাজ হরিজন আর্কটিকও এই উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে।
• ডিকম্প্রেশন চেম্বার বহনকারী কানাডার নৌবাহিনীর জাহাজ ‘গ্লেস বে’ চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
• কানাডার কোস্ট গার্ডের পরিচালিত সোনার অনুসন্ধান সক্ষমতার বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ জন ক্যাবটও কাজ করছে।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha