প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি সেটা জানেন। কিন্তু তার দ্বারা সেটা হবে না। তিনি বলেন, ‘এ দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। দেশের স্বার্থ কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশকে কেউ আক্রমণ করবে, সেটি হতে দেবে না আওয়ামী লীগ।’
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। কাতার ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ওই সময়ই সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি জাতীয় নির্বাচন, ব্রিকস জোটে যোগদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায়’ এবং সেজন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা সংসদে কথা বলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকেও সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে কথা বললেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ‘গ্যাস বিক্রি করার’ মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? আমি তো এটুকু বলতে পারি যে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা। আমার হাত থেকে এ দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছে, যারা এ দেশের গণতন্ত্র হরণ করে গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেজেছে, স্বাভাবিকভাবে তারা কখনো এ দেশের কল্যাণ চাইবে না। তারা একটা ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইবে। দেশের যেসব সচেতন নাগরিক তারা এসবকে গুরুত্ব কেন দেবেন। তারা তো বিচার করবেন সাড়ে ১৪ বছর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিল আর এখন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, দেশের সার্বিক উন্নতি হয়েছে কী হয়নি, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে কী পায়নি, দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নত হয়েছে কী হয়নি, মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে কী পায়নি। আপনাদের মতো সচেতন নাগরিকরা সেটাই আগে বিবেচনা করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার আত্মবিশ্বাস আছে আমি মানুষের জন্য কাজ করছি। মানুষের যদি পছন্দ হয় আমাকে ভোট দেবে, না হয় না দেবে। ভোট না দিলে আমি থাকব না।’
ব্রিকসে যোগদানের সিদ্ধান্ত
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সুইজারল্যান্ড সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগদানের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানাই। ব্রিকসের আগামী সম্মেলনে নতুন সদস্যের বিষয়ে আলোচনা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর যেন নির্ভরশীল হতে না হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যেন আমাদের বিনিময়ের সুযোগ থাকে। এখানে আমরা দেখব যে, বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের উদ্যোগ যদি কেউ নেয়, আমরা তার সঙ্গে আছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি যে, নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে আমরা যেন ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি। শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে যেন আমরা নিজেদের অর্থবিনিময়ের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারি, সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আছে।’
সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন
প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই এটা জানে (উচ্চ আদালতের রায় এবং সংবিধান সংশোধন)। এটা জানার পরও তারা কেন সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করছে? এর উদ্দেশ্যটা কী? এর অর্থ গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করা।’
তিনি বলেন, এখন এটা দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে যে, তারা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ চায়, নাকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল আবার তা চায়।
নির্বাচনকালীন সরকার
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশে ওয়েস্টমিনিস্টার টাইপ গণতন্ত্র অনুসরণ করি, তাই ইংল্যান্ডে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমাদের এখানেও সেভাবেই নির্বাচন হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল থেকে নানা প্রস্তাব, এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, খালেদা জিয়ার উক্তি ছিল, বলেছিলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। এই পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, এখন আবার সেটাই তারা ফেরত চায়। উচ্চ আদালতের রায় আছে, সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।’
ভারতের সহায়তা প্রসঙ্গ
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ভারতের সহায়তা চেয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিষ্কার করার জন্য অনুরোধ করেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একজন সাংবাদিক। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় ভুলভাবে পত্রিকায় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, পররাষ্ট্র বিষয়ে তারা কী বলতে হবে জানে। কাজেই ভারতের কাছে আমাদের ওকালতি করার দরকার হবে না।’
শত ফুল ফুটতে দিন
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবং ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে পরিচ্ছন্ন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল জানতে চান, জাতীয় নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে কি না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকেরই আগ্রহ থাকবে এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। কাকে প্রার্থী করা হবে কাকে করা হবে না এ ব্যাপারে আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে। একটা অবাধ, নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, এটা আমাদেরও দাবি। অনেকেই তো প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী যদি হয়, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেব।
আরেক কান খালেদা জিয়া গ্রেনেড দিয়ে দিছে শেষ করে
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের সংখ্যা কমে যাওয়া-সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করার সময় মাইক না থাকায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাইকে মাইকে। আমি এক কানে শুনি ভাই, আরেক কান তো খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলা করে দিছে শেষ করে। খুনির দল, সে একটা খুনি, তার স্বামী একটা খুনি, তার একটা ছেলেও খুনি।’
বাংলাদেশে নির্বাচন ‘বাধাগ্রস্তকারীদের’ ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চাপে আছে। তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ঠিক যেভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায় প্রতিবাদ করেছে। বলেছে যে, না এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া তথ্য, সেভাবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে; যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ২০০১ সালের পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন, যে বীভৎস ঘটনা ঘটেছে, সেদিন তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান কেউ রেহাই পায়নি। মানুষ হত্যা করেছে, মসজিদ ভেঙেছে, মন্দির ভেঙেছে, কোনটা না করেছে তারা?
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha