রসালো ফলের মৌতাতে উতলা এখন প্রকৃতি। চারদিক এখন পাকা ফলের সৌরভে মাতোয়ারা। সুবাসিত আবেশ। আজ শুরু মিষ্টি ফলের রসে টইটম্বুর মধুমাস। আজ পয়লা জ্যৈষ্ঠ। গাছে গাছে এখন পুরুষ্টু কাঁঠালের বর্ণাঢ্য বিভা। গাঢ় সবুজ আমের শরীরে সিঁদুরের ছোপ। পেকে ওঠা লিচুগাছ ঘিরে দিনে পাখি আর রাতে বাদুড়ের কোলাহল।
শুরু হয়েছে ‘মধুমাস’ জ্যৈষ্ঠ। রসালো শাঁসালো হরেক রকম ফলের ডালি নিয়ে হাজির হলো জ্যৈষ্ঠ। গাছে গাছে ঝুলছে টক-মিষ্টি আম, মন ভোলানো লাল লিচু। আর আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালও পাকতে শুরু করেছে। মধুময় ফলের ডালি যেন পূর্ণতা পায় এ সময়ে।
পঞ্জিকার শাসন অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের শেষ মাস জ্যৈষ্ঠ, এ মাসে ফল পেকে রসের ভারে টইটম্বুর হয়। গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা তাজা ফলের পরশ অসাধারণ এক অনুভূতির জন্ম দেয়। এ মধুমাসে তাজা ফলের স্বাদ নিতে কে না চায়!
জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে ‘মধুমাস’ বিশেষণটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কারণ এ মাসে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, ডেউয়া, লটকন, গোলাপ জাম, বেতফল, গাব, জামরুল, আতাফল, কাউ, শরীফা প্রভৃতি ফল পাওয়া যায়। ফলের এই ম-ম ঘ্রাণে জ্যৈষ্ঠ হয়ে উঠেছে মধুময়।
এদিকে তাপপ্রবাহের দাপট দেখিয়ে বিদায় নিল বছরের পহেলা মাস বৈশাখ। এ মাসে বেশ কয়েকবার কালবৈশাখী ছোবল মেরেছে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে। কালবৈশাখীর প্রভাব রাজধানী ঢাকায়ও ছিল খানিকটা। তবে তাপপ্রবাহের দাপটই ছিল বেশি।
জ্যৈষ্ঠ মানে কি শুধু ফল? না! গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলেল আগুনে ছেয়ে যায় বন-বাদাড়। এ সময়ে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া, পারিজাত, জবা, মাধবী, করবী, কড়ই, হলদিয়া, কনকচূড়া, হলুদচূড়া, সোনালু, জারুল, বকুল, বেলি, নিমকুল এমনকি বর্ষা রানীর প্রতীক কদমফুল ইত্যাদি মনোহর শোভা আর মৃদু সুগন্ধী বিতরণ করে অবসন্ন চোখে প্রশান্তি এনে দেয়।
এতকিছুর পরও জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে ‘মধুমাস’ শব্দটি বসালে প্রশ্ন উঠতে পারে! কারণ অভিধান বলছে, চৈত্র মাস হচ্ছে মধুমাস। খনার বচনেও মধুমাস বলতে চৈত্র মাসকেই বোঝানো হয়েছে, ‘মধুমাসে প্রথম দিনে হয় যেই বার/ রবি শোষে মঙ্গল বর্ষে, দুর্ভিক্ষ বুধবার।/ সোম শুক্র শুরু আর/ পৃথ্বী সয় না শস্যের ভার।/ পাঁচ শনি পায় মীনে/ শকুনি মাংস না খায় ঘুণে।’
প্রাচীন কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীও চৈত্র মাস অর্থেই মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন, ‘মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।’ এদিকে চন্ডীদাসও চৈত্র মাস বা বসন্তকাল অর্থে মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন, ‘মধুমাস আপায় মাধব পরশে।’ এখানে আপায় মানে ‘গত হয়’।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।