মাগুরা জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের পদক্ষেপে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ পাকা কাঞ্চনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আদালতে মামলা
মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাকা কাঞ্চনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ টি ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ পদে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতর আলী ও প্রধান শিক্ষক রজব আলীর বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতির অভিযোগ উঠেছে। যার সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত মঙ্গলবার ৯ মে পাকা কাঞ্চনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয় মাগুরা জেলা প্রশাসন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এলাকায় সূত্রে জানা যায় এই পাকা কাঞ্চনপুর বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দুজন মিলে নিজের নিকটতম লোকজনকে প্রার্থী করে নিয়োগ প্রদান করছে এবং নিয়োগ প্রাপ্ত আয়া পদ থেকে মঞ্জুয়ারা বেগমকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন আয়া পদসহ ৩টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে।
অভিযোগ উঠেছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে সভাপতি আতর আলীর আপন বড় ভাই পাকা গ্রামের শওকত হোসেনের ছেলে মিলনের স্ত্রী রাশিদা খাতুন কে চাকরি দেওয়া হবে। নিরাপত্তা কর্মী পদে পাকা কাঞ্চনপুর বিদ্যালয়ের সভাপতি আতর আলীর ছেলে নয়ন হোসেনের চাকরি দেওয়া হবে এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রজব আলীর আপন বোন ছোট বোন মুক্তি খাতুনের চাকরি দেওয়া হবে।
পাকা কাঞ্চনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আতর আলী নিয়োগের ব্যাপারে কথা এড়িয়ে যান এবং সাংবাদিকদের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য বললে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন।
প্রধান শিক্ষক মোঃ রজব আলী বলেন ২২ নভেম্বর ২০২২ সালে ৩ টি পদে নিয়োগ দিতে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত করা হয়।
নিয়োগের বিষয়ে সভাপতি আতর আলী ও প্রধান শিক্ষক কিভাবে নিকটতম লোকদের এই পদে নিয়োগ দিচ্ছেন; মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যোগ্য হলে নিয়োগ পাবে। কিন্তু হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে রেগে বলে উঠেন তাহলে এই সব চাকরির নিয়োগ পদে যোগ্য ব্যক্তি কারা। আসলে তার এই অবান্তর উত্তর শুনে উপস্থিত সাংবাদিকগণ হতভম্ব হয়ে যান।
বর্তমান কর্মরত আয়া মঞ্জুয়ারা বেগমের চাকরি কেন এমপিও ভুক্ত হলো না এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকার থেকে নিয়োগ আটকানো ছিলো এবং আয়া মঞ্জুয়ারা বেগম মাগুরা আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আয়া মোছাঃ মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ এই পাকা কাঞ্চনপুর বিদ্যালয়ে সুনামের সাথে চাকরি ও দায়িত্ব পালন করে আসছি। তিনি বলেন এই বিদ্যালয়ে ১০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে আয়াপদে যোগদান করি। অদ্যাবধি সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে ২৫ বছর চাকুরি করিয়া আসিতেছি।
উক্ত পদটি দীর্ঘ দিন যাবৎ স্থগিত থাকার কারণে এমপিও ভুক্ত হয় নাই এবং বর্তমানে সরকার আয়া পদটি চালু করেছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আমাকে উক্ত আয়া পদে এমপিও ভুক্তির চেষ্টা না করিয়া নতুন ভাবে উক্তপদে লোক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। বিষয়টি একান্ত মানবিক ও হৃদয় বিদারক কষ্ট দায়ক। ২৫ বছর যাবৎ উক্ত পদে বেতন বিহীন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১০০০ নামমাত্র টাকায় সেবা প্রদান করে যেখানে কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়ে অন্য লোককে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন গত ১১ ডিসেম্বর, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ও ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে স্বীয় পদে বহাল রেখে এমপিও ভুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে জেলা প্রশাসক মাগুরা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল, খুলনা, পাকা কাঞ্চনপুর প্রধান শিক্ষক বরাবর।
১০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে সভার কার্যবিবরনী রেজিস্ট্রারে দেখা যায় পাকা কাঞ্চনপুর বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ২ জন সহকারী শিক্ষক ও ১ জন ৪র্থ শ্রেণির কমচারি প্রয়োজন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্কুল প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম ছরোয়ার, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলী আহম্মদ বিশ্বাস, সদস্য আতিয়ার রহমান, আমজাদ আলী, আবুল হাশেম, সিদ্দিকুর রহমান, মোকাদ্দেস মোল্যা, আবু বক্কার, তৈয়ব আলী, নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক রজব আলী।
সভায় সদস্য আতিয়ার রহমান বলেন যে দক্ষিণ মির্জাপুর গ্রামের আপ্তাব উদ্দিনের ছেলে মোঃ আবুল কাশেম ও মির্জাপুর গ্রামের নেছারউদ্দীনের ছেলে মুত্তাল্লিব বিএ পাশ সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হোক। সভাপতি গোলাম ছরোয়ার ২ জনকে নিয়োগ দেয়।
পাকা কাঞ্চনপুর বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলী আহম্মদ বলেন যে পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামের মোঃ মোসলেম উদ্দিন খাঁর মেয়ে মোছাঃ মঞ্জুয়ারা বেগম এই মেয়েটিকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়া হউক। এই প্রস্তাবে উপস্থিত সকল সদস্যদের মধ্যে বিশেষ আলোচনা হয় এবং সকলের সিদ্ধান্ত অনুসারে সভাপতি সাহেব বলেন যে মোছাঃ মঞ্জুয়ারা বেগমকে আয়া পদে নিয়োগ দেওয়া হোক।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাগুরা মোঃ আলমগীর হোসেন জানান নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই চাকরি হওয়ার প্রাথীদের নাম সাংবাদিকদের কাছে তথ্য গেলে সে নিয়োগ অবৈধ। তিনি আরও জানান আর আয়া মঞ্জুয়ারা বেগমের সাথে চরম দূর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন মূলক আচরণ করা হয়েছে।
|
জেলা প্রশাসক মাগুরা মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বলেন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমি এই পাকা কাঞ্চনপুর বিদ্যালয়ের ঘটনার বিস্তারিত জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঞ্জুয়ারা বেগমের আয়া পদে নিয়োগ বৈধকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকায় শনিবার ২১ এপ্রিল ২০০০ সালে। এই বিষয়ে আয়া মঞ্জুয়ারা বেগম মাগুরা আদালতে দেং ২৫৪/২৩ মামলা দায়ের করেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha