বাংলা প্রকৃতির রূপরঙের প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। আর এ গ্রীষ্মের রক্তরাঙা ফুল কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য রাঙিয়ে তুলেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের (ইবি) ১৭৫ একরের প্রতিটি প্রান্তর। ক্যাম্পাসটির বিভিন্ন ভবন, অফিস, হল ও রাস্তার মোড়ে গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা সৃষ্টি করেছে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। বৈশাখের শুরুতেই এ রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুলের দৃশ্যপট রমণীয় ও মোহনীয় করে তুলেছে ক্যাম্পাসটির আঙ্গিনা। পাতাহীন গাছে থরে থরে সাজানো রক্তিম ফুলগুলো যেন অদ্ভুত ভালোলাগার এক আবেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবন, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, খালেদা জিয়া হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে, শহীদ মিনারের পেছনে ও খালেদা জিয়া হলের ভেতরেসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলবে রক্তরাঙা ফুলে আচ্ছন্ন কৃষ্ণচূড়া গাছের। এসব গাছে গাছে ফুটে থাকা লাল ফুল পুরো ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলেছে।
গাছের নিচে পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া দেখে মনে হয় এ যেন লাল বিছানা বিছিয়ে রেখেছে ভ্রমণপিপাসুদের স্বাগত জানাতে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তরে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের চোখ আটকে যায় অনিন্দ্য সুন্দর লাল রঙের ফুলের থোকায়। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ‘কৃষ্ণচূড়া রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে, আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য। বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন উপময় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় এসেছে।
কৃষ্ণচূড়া, যে ফুল গাছের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। এ ফুল গাছের আদিনিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে হলেও এশিয়াজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার জুড়ি নেই। ভারত ও পাকিস্তানে কৃষ্ণচূড়া গুলমোহর নামেই পরিচিত। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়ার ডালে এ ফুলের আবির্ভাব ঘটে চৈত্রের শেষের দিকে। আর বৈশাখের শুরুতে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় তার রক্তরাঙা রূপ।
কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্তিম জাগরণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুহূর্তের জন্য হলেও শিহরণ জাগায় এবং রোদ্দুর দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া দেয় প্রশান্তি। এভাবেই রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ফুল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মনকে আলোড়িত করছে। এছাড়া জারুল, হিজলসহ গ্রীষ্মের সব ফুলে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাসটি।
কৃষ্ণচূড়া গাছ মধ্যম থেকে লম্বা গড়নের মাথা ছড়ানো হয়ে থাকে। ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত।
কমলা অথবা লাল রঙের আকর্ষণীয় ফুলের ডালের আগাছা গুচ্ছবদ্ধ। চিকন পাতা ও সুন্দর ফুলের জন্য সারাদেশে জনপ্রিয়। ফুলের সৌন্দর্যের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্যে সুসজ্জিত হয়েছে ক্যাম্পাস। এই সৌন্দর্যের সমাহার প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে আমাকে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ক্যাম্পাসের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে শিহরণ জাগাচ্ছে।’
এছাড়া হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে কৃষ্ণচূড়া যে রং ছড়িয়েছে, তা চোখে না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। কৃষ্ণচূড়া দেখলে আমার মনে হয় যেন নীল আকাশের বুকে প্রকৃতির এক রঙিন আলপনা।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।