এক সময় রাজধানীর পয়ঃবর্র্জ্য সরাসরি পড়ত হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন খালে। ফলে দূষিত হতো নগরীর চারপাশের নদীগুলো। হাতিরঝিলকে রক্ষা করতেই একটি প্রকল্প নেয় ঢাকা ওয়াসা। এর মূল উদ্দেশ্য হাতিরঝিলের দক্ষিণে নির্মিত ৬টি ও উত্তরে ৫টি স্পেশাল স্যুয়ারেজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) দিয়ে নির্গত পয়ঃবর্জ্য শোধন করে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা। ওয়াসার এই প্রকল্পের নাম দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা নির্ধারণ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজও শেষ। বর্তমানে চালু রয়েছে পুরোদস্তুর, যা থেকে বর্জ্য শোধন করা হচ্ছে নিয়মিত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ঢাকা ওয়াসার ভাষ্য এখানে সরাসরি কোনো আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। তাই দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না। যা বলা হয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা। এদিকে প্রকল্পটি সরাসরি উদ্বোধনের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে আবেদন করেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও চীনা রাষ্ট্রদূত। প্রকল্পটি দেখে সন্তোষও প্রকাশ করেছেন তারা।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাতিরঝিলের পানি শোধন করে ফেলা হচ্ছে পাশের গজারিয়া খালে। সেখান থেকে বালু নদী হয়ে পরিশোধিত এই পানি যাচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। ফলে গজারিয়া খাল, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এখন অনেকটাই দূষণমুক্ত। ওয়াসা বলছে, পরিশোধিত এই পানি পান করা ছাড়া সব কাজেই ব্যবহার করা যাবে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে তা পান করলেও সমস্যা নেই। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার হবে সিমেন্ট তৈরির কাজে। এরই মধ্যে একটি সিমেন্ট উৎপাদন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
প্রকল্পটির আওতায় রয়েছে মগবাজার ওয়্যারলেস, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, নয়াটোলা মহানগর হাউজিং, উলন ও তৎসংলগ্ন এলাকা, কলাবাগান ও ধানমন্ডি (পূর্বাংশ)। এছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, নিকেতন, বাড্ডা, বনানী ও গুলশান (আংশিক) এলাকার পয়ঃবর্র্জ্য ও কিচেন ওয়াটার ওয়াসার এসএসডিএসের মাধ্যমে পাইপ লাইন দিয়ে হাতিরঝিলে রামপুরার পাশে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশনে পড়ছে। সেখানে পলিথিনসহ বড় বড় বর্জ্য শোধন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দাসেরকান্দি শোধনাগারে পাঠানো হচ্ছে। কয়েক দফা ট্রিটমেন্ট করে স্বচ্ছ পানি ফেলা হচ্ছে পাশের গজারিয়া খালে। সেখান থেকে পানি বালু নদী হয়ে শীতলক্ষা নদীতে পড়ছে। ফলে এই দুটি নদীর দূষণ কমানো সম্ভব হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি আগের তুলনায় নদী দুটির পানি দূষণ নেই বললেই চলে।
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেনেন্স) এ কে এম শহীদ উদ্দিন বলেন, দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার চালু হওয়ায় বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ অনেকাংশ কমে গেছে। আগে যেখানে এই নদীগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পানিতে এমোনিয়ার পরিমাণ প্রতি লিটারে ২০ মিলিগ্রাম পর্র্যন্ত উঠে যেত, দাসেরকান্দি প্রকল্পের কারণে এখন সেখানে তা মাত্র ২ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। অর্থাৎ পানির দূষণ অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, দাসেরকান্দির এই প্রকল্পের কারণে আমাদের সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। আমরা যে পানি নিয়ে শোধন করতাম সেই পানি এতটাই দূষিত ছিল যে সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের আগে প্রি-ট্রিটমেন্ট করতে হতো। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৪৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হতো। এখন আর সেই প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করতে হচ্ছে না। তাতে প্রতি মাসে ৪২ লাখ ৬৪৩ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মহসেন আলী মিয়া বলেন, আমরা ট্রিটমেন্ট করার পর পরিষ্কার পানি প্রকল্পের পাশেই গজারিয়া খালে যায়। সেখান থেকে সেই পানি বালু নদী হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে পড়ে। প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি লিটার পানি শোধন করে ৪৮ কোটি লিটার স্বচ্ছ পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে। আর সেখান থেকে যে শুষ্ক বর্জ্য (ফ্লাই অ্যাশ) তৈরি হচ্ছে সেই বর্জ্য সিমেন্ট কারখানা তাদের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রতিদিন সেখান থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টন ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট কারখানায় নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয় ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। তা অনুমোদন হয় ২০১৭ সালে। মাস্টারপ্ল্যানে ঢাকাকে ৫টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ভাগ করা হয়েছে। সেখানে স্যুয়ারেজ লাইনগুলোকে সংযোজন করে ৫টি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পানি শোধন করার জন্য রাখা হয়েছে। দাসেরকান্দি প্রকল্প সেই ৫টির একটি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম মুরসিদ, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha