চিঠি পত্র কিংবা মৌখিক কোন আমন্ত্রন ছাড়াই পবিত্র ওরশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন দেশের দুর দুরান্তের হাজার হাজার নারি পুরুষ। এমনকি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত থেকেও আসতেন অনেকে। প্রতি বছর আরবি শওয়াল মাসের ৩ তারিখ বাঘা মাজার ওয়াকফ এষ্টেট পরিচালনা কমিটির আয়োজনে রাজশাহীর বাঘা দরগা শরীফ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ) এবং তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর ওফাত দিবসে পবিত্র ওরশ অনুষ্ঠান। বিগত বছরগুলোতে করোনার সংক্রমন এড়াতে, বন্ধ রাখা হয় ওরশ অনুষ্ঠান। সেই পরিস্থিতি এবার না থাকলেও এবারের আয়োজনও ছিল স্বল্প পরিসরে। ওরসের সেই আনন্দ ছিলনা বাঘা দরগা শরীফ প্রাঙ্গনে।
সোমবার (২৪ এপ্রিল- ৩ শওয়াল) মাজার প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়,এবারেও আধ্যাত্বিক দরবেশ- হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ) এর ৪৯৪ তম এবং তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর ৩৯৫ তম ধর্মীয় ওরশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু চোখে পড়েনি আগের পুরণো সেই চিত্র। ছিলেন না মাজার পরিচালনা কমিটির কোন সদস্য কিংবা বাঘা ওয়াকফ এষ্টেট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবও। মাজারের খাদেম বাচ্চু মিঞার দাবি, এবার ৮০ কেজি চাল,১৫ কেজি ডাল আর ২০ কেজি খাসির মাংস দিয়ে তবারক পাকানো হয়েছে। যোহরের নামাজের আগেই তবারক বন্টন শেষ করা হয়েছে। কিন্তু সবার ভাগ্যে জোটেনি সেই তবারক। কেউ পেয়েছেন কেউ না পেয়ে ফিরে গেছেন।
জানা যায়, ধর্মীয় আদর্শের দিক-নির্দেশনার মহৎ পুরুষ আব্বাসীর বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ)ও তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর সাধনার পীঠস্থান বাঘা। প্রায় ৫০০ বছর আগে সুদূর বাগদাদ থেকে ৫ জন সঙ্গীসহ বাঘা এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। বসবাস শুরু করেন, পদ্মা নদীর কাছে কসবে বাঘা নামক স্থানে। আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। তাদের ওফাৎ দিবস স্বরণে প্রতিবছর পবিত্র ওরস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ সব শ্রেণীর লোকের সমাগম ঘটতো এখানে। স্থানীয়রা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাদের বাস তারাও ছুটে আসতেন বাঘা দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত ওরশ মোবারকে। সীমান্তবর্তী এলাকার যাদের স্বজনরা সীমান্তের ওপারে আছেন, তারা বছরের এই সময়টা বেছে নিতেন একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য। মাজার জিয়ারত, মানত পরিশোধ, রোগমুক্তি, মনবাসনা পূরণ, আধ্যাত্মিক কামিয়াব লাভসহ নানা কারণে আসেন তারা। একদিনের এই ওরশে যোহর নামাজের পর কয়েক হাজার মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানো হতো। খানকা বাড়ির মধ্যে রাতভর সামাকাওয়ালি, মারিফতি গানের আসর বসাতো ওরশে আসা লোকজন। স্থানীয় সাবদার আলীসহ অনেকেই জানান, আগে দেখেছি যোহর নামাজের পর সবার মাঝে তবারক বিতরণ করা হতো। স্থানীয়দের অভিযোগ যাদের উদ্দেশ্য করে মাজারের আয়,তাদের জন্য ব্যয় করতে সমস্য কি?
স্থানীয়রা জানান, ওরশের সঙ্গে ঈদের বাড়তি আনন্দ যোগাতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদে মেলার আয়োজন করা হতো। ওরশ অনুষ্ঠানের লোক সমাগমকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন পণ্য ব্যবসায়ীরা বসতো বিকি কিনি করার জন্য। পরবর্তীতে যা মেলায় রুপ নেয়। সেই মেলা বাঘা ঈদ মেলা নামে খ্যাত। এবার সেই মেলাও হয়নি। মেলা অনুষ্ঠানের জন্য ওয়াকফ এস্টেটের মাঠ ইজারা দিত কর্তৃপক্ষ। যারা ইজারা নিতেন, তারা যাত্রী সাধারনের বসার জায়গা থেকেও খাজনা নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করে নিদিষ্ট হারের বাইরে খাজনা আদায় করা হতো । এসব বিষয় নিয়েও রয়েছে আলোচনা সমালোচনা।
বাঘা মাজার ওয়াকফ এষ্টেট, আধ্যাত্বিক দরবেশ ও পবিত্র ওরশ মোবারক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর মৃত্যুর পর,তাঁর তৃতীয় ছেলে মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রঃ) খানকার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ওই সময় তিনি দিল্লীর সম্রাট শাহাজানের প্রেরিত একটি শাহী ফরমান যোগে ৪২ মৌজা মাদদমাস হিসেবে গ্রহন করেন। (১০৩০ হিজরি) যার বাৎসরিক শালিমানা ছিল ৮০০০ টাকা। এই মাদাদমাসের উদ্দেশ্য ছিল, এই অর্থ সৎ কাজে ব্যয় করা, পরিবার বর্গের ভরন পোষণ করা এবং বাদশাহের জন্য দোয়া খায়ের করা। মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রঃ) এর মৃত্যুও পর ৪২টি মৌজা তার পুত্র হযরত শাহ মোহাম্মদ রফিক (রঃ) এবং হযরত শাহ মোহাম্মদ নুুরুল আরেফিনের পরিার বর্গেও মধ্যে বন্টন করা হয় এরই উদ্দেশ্য। হযরত শাহ মোহাম্মদ রফিক (রঃ) তার অংশের ২০৩৭/আনা শালি আনার সম্পত্তি (১০২৮হিঃ) ওয়াকফ করেন। ১৮০৫ সনের পর থেকে এই অফসিল ওয়াকফনামা দলিলটি আর পাওয়া যায়না। ১৪ তম মোতাওয়াল্লি সাজ্জাদনিশীল খন্দকার মনিরুল ইসলামের সময় ১৯৫৩ সালে প্রজাসত্ব আইনটি পাশ হলে বাঘার রফিকি ওয়াকফ এষ্টেট অধিকাংশ প্রজা বিলি থাকায় সরকার অধিগ্রহন করে।
|
মাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য, শাহদৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবু বকর সিদ্দিক জানান, প্রতিবছর ওরশ হয় জানি। এবার ওরশের বিষয়ে জানিনা। বাঘা মাজার ওয়াকফ এষ্টেট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম (রইশ) জানান, মূলতঃ ওরশ ও ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে দেশের দুর দুরান্ত নারি পুরুষদের সমাগম হতো বাঘায় । এখানে কেউ আসতেন নামাজ আদায় করতে, কেউ আসতেন ওরশে। পরবর্তীতে যা মেলায় রুপ নেয়। মেলার মাঠ ইজারা দিয়ে যে টাকা পাওয়া যেত, সেই টাকায় গরু-ছাগল কিনে ওরশ করা হতো। বাঁকি টাকা মাজার ফান্ডে জমা করে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হতো। এবার মেলার জন্য মাঠ ইজারা না দেওয়াসহ ওরশের ব্যাপকতায় নিষেধ ছিল। যার কারণে সীমিত পরিসরে ওরশের আয়োজন করা হয়েছে। শারিরিক অসুস্ততার কারণে থাকতে পারেননি বলে জানান খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম (রইশ) ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha