মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে গৌরবের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করল বাংলাদেশ। রবিবার দিনটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায় দেশবাসী।
একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে এবং বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে। প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। এ উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের ঢল নামে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে তার দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুল-উল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পর্যায়ক্রমে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাভার স্মৃতিসৌধে সব বয়সী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সমাজকর্মী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার পুষ্পাঞ্জলিতে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। অনেকে মুখে পতাকা ও স্বাধীনতার প্রতীকী চিহ্ন এঁকে ঘুরে বেড়িয়েছেন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা সফের আলী বলেন, ‘আমার শহীদ ভাইদের প্রতি এই শ্রদ্ধা, এই মর্যাদায় আমি আবেগে আপ্লুত। চাকরিজীবী সোহেল আরমান বলেন, ‘আমি তো তো যুদ্ধ করতে পারিনি, কিন্তু যুদ্ধে জীবন দেওয়া আমাদের পূর্বপুরুষদের মনে রাখতে পেরেছি।’
শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদের মতো এমন নানান পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এসব এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে।’
স্বাধীনতা দিবসে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি বলেন, ‘এই মহান দিনে শপথ করছি, আমরা গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, চাল, ডাল তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে যে সংগ্রাম শুরু করেছি তা চালিয়ে যাব।’
শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও এখনো অনেক অপ্রাপ্তি, বৈষম্য আছে। আছে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের ছোবল। তারপরও সব শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।’
স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ সময় দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করলেও আমরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। এ জন্য আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।’
শ্রদ্ধা জানানো শেষে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শাসন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। এ দেশের শ্রমিকের, কৃষকের যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি ছিলেন রাষ্ট্রে তাদের সেই ন্যায্য হিস্যা ও অধিকার রাষ্ট্রের ওপর তাদের যে নিয়ন্ত্রণ সেটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘গত পাঁচ দশকে রাষ্ট্র জনগণের ভরসা ও আশ্রয়স্থল না হয়ে নিপীড়কের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে নতুন আর একটি মুক্তিযুদ্ধ জরুরি হয়ে উঠেছে।’
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রবিবার ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha