নির্যাতনের ঘটনার ২৮ দিন পর ক্লাসে ফিরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। সোমবার (১৩ মার্চ) সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে বিভাগের ক্লাসে অংশ নেন তিনি। এর আগে তিনি গত রবিবার ক্যাম্পাসে ফিরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ৫০১ নম্বর রুমে ওঠেন।
ক্লাস ফেরার পর ফুলপরী বলেন, ওই ঘটনার পর আজকে প্রথম ক্লাসে এসেছি। ক্লাসে ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমার বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতা পেয়েছি। আমি এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করব। আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে এখন সেটি নেই। আমাকে হলেও সিট বরাদ্দ দিয়েছেন। আমি সেখানেও ভালো আছি। আশা করি স্বাভাবিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করে রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করব।
ফুলপরীর সহপাঠী এবং ওই ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি রায়হান বলেন, ফুলপরী গত একমাস ক্লাস করেনি। তবে আজকে ক্লাস করেছে। সে খুব বন্ধুসুলভ। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
ফুলপরীর সহপাঠী বান্ধবীরা বলেন, ফুলপরীকে ক্লাসে পেয়ে আমরা আনন্দিত। সে সবার সঙ্গে ভালোভাবে মিশে গেছে। আমরা তাকে যে কোনো সহযোগিতায় পাশে থাকব। আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে পড়াশোনা শেষ করতে চাই। আর প্রত্যাশা থাকবে তার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি যেন অন্য কারও সঙ্গে না হয়। আমরা মনে করি তার মতো সব মেয়ের সাহসী হওয়া উচিত।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে প্রায় এক মাস ক্লাসে অংশ নিতে পারেননি নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন। তার সহপাঠীরা নিয়মিত ক্লাস করলেও তাকে পাবনার বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে এসে ঘুরে বেড়াতে হয় নির্যাতনের বিচার পেতে। ফলে অন্যদের থেকে একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে অতিথি হিসেবে উঠে ক্লাস শুরু করেন ফুলপরী খাতুন। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে পরদিন সকালে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে যান। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দিতে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এরপর তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে ও হল পছন্দ করতে কয়েক দফা ক্যাম্পাসে এলেও ক্লাসে ফেরা হয়নি তার।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে পছন্দের হল বরাদ্দের নির্দেশের পর গত ৪ মার্চ (শনিবার) ক্যাম্পাসে এসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন ফুলপরী খাতুন। পরে ওই হলের একটি কক্ষে তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। হল বরাদ্দ দেওয়া হলে সেদিন বাড়ি ফিরে যান তিনি।
এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, আজকে ফুলপরী ক্লাস করেছেন। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করবেন। আমরা ওই ছাত্রীর খোঁজ-খবর রাখছি। একাডেমিক কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ওই ছাত্রী ক্লাসে এলে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় না পড়ে এবং কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়- এ নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া গত মাসে ক্লাসে অংশ না নিলেও যেন সে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আমরা বিষয়টি দেখব।
|
ফুলপরীর বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুরে গ্রামে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ফুলপরী খাতুনকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পরদিন ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান ফুলপরী। নির্যাতনের অভিযোগ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এতে আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি ১৮ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha