বিৃটিশ আমলে ভারতবর্ষে রেলপথ নির্মাণের সময় পদ্মা নদীর পাকশী-ভেড়ামারার সংযোগ সৃষ্টির জন্য নির্মাণ করা হয় ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ । ১০০ বছর মেয়াদকালের এ ব্রিজটি ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সেই সময় আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়।
মেয়াদোত্তীর্ণ এই ব্রিজটি ১০৮ বছর পূর্ণ হলো । দিব্বি ব্রিজটি দাঁড়িয়ে আছে। সবকিচ্ছুই ঠিক ঠাক থাকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়ে চলছে নিয়োমিত ট্রেন।
গত ৪ মার্চ ২০২৩ সালে এর বয়স ১০৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেলসেতু। এখনও এই ব্রিজটি দেখতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ প্রতিদিনই পাকশী-ভেড়ামারায় ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একনজর দেখার জন্য আসছেন বেড়াতে।
ভেড়ামারার পি ডাবলু আই সাইফুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২নন্বর গার্ডার তৎকালিন সময় পূনরায় মেরামত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত আর শতবর্ষের গৌরব নিয়ে আজও পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বয়স গত ৪মার্চ শনিবার ১০৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। সময় সীমা বেধে দেওয়া ১শ’বছরের ব্রিজটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। অতিরিক্ত ৮ বছর চলছে। আরো কত বছর এই ব্রিজটির উপর দিয়ে ট্রেন চলবে কেউ বলতে পারে না।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, ১৯০৯ সালের প্রথম ভাগে প্রাথমিক জরিপ, জমি অধিগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
রেলওয়ে অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি ও ট্রেন চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়। তার নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয় 'হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) নুর মোহাম্মদ জানান, সেতুর ১৫টি স্প্যানের দুটি বিয়ারিংয়ের মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৩৪৫ ফুট দেড় ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৫২ ফুট। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ১২৫০ টন, যা রেল লাইনসহ ১৩০০ টন। সেতুটিতে মোট ১৫টি স্প্যান ছাড়াও দুই পাড়ে তিনটি করে অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান রয়েছে। এদের দুটি বিয়ারিংয়ের মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট। এভাবে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৫৮৯৪ ফুট বা এক মাইলের কিছু বেশি। ১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ করে ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা বাহিনীকে রুখতে মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা ফেলা হয় পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপর। এই বোমার আঘাতে সেদিন সেতুর ১২ নম্বর গার্ডার ভেঙে যায়। আরও বেশকিছু গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভারত সরকার সেতুর ১২ নাম্বার গার্ডারের অনুরূপ আরেকটি স্প্যান স্থাপন করে দেয়।
তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে রেলযোগাযোগ পুনঃস্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। সে সময়ে এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এ সেতুর পূণর্নিমাণ জাতীয় পুনর্গঠন কাজে আত্মপ্রত্যয় ও নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে অন্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার মৈত্রীর বন্ধন ও যৌথ প্রচেষ্টার সার্থক স্বাক্ষর হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকুক।
ভেড়ামারা সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রাজা ও পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ঈশ্বরদীর ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে গবেষণাকারী প্রবীণ অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির বয়স ১০৮ বছর পূর্ণ হলো। শতবছর পূর্তির সময় সেতুটি পরিদর্শন করে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই সেতু সঠিকভাবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটি আরও অন্তত ২৫ বছর টিকে থাকতে পারে।
এই ব্রিজটি গত শনিবার (৪ মার্চ) ২০২৩ সালে এর বয়স ১০৮ বছর পূর্ণ হলো। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেলসেতু। এখনও এই ব্রিজটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ প্রতিদিনই পাকশী ও ভেড়ামারাতে আসেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha