সকল যন্ত্রপাতি থাকার পরেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জনের অভাবে প্রায় একযুগ ধরে বন্ধ রয়ছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। ফলে উপজলাবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার ( ২৮ ফেব্রুয়ারি ) নলছিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা ঝুলছে এবং মূল কক্ষে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। জরুরী প্রসূতি সেবাসহ (ইএমওসি) সকল ধরণের অপারেশন( অস্ত্রপাচার) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার সাধারন জনগনের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে। মত্যুঝুঁকিসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা। ফলে অতিরিক্ত অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
জানাগেছে, জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন অনায়াশেই চালানো যেত। অসহায়, গরীব রুগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল উপজেলা পর্যায়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এ জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি।
হাসপাতাল সূত্রে জানাগছে, জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মাহবুব হোসেন ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে নলছিটি থেকে বদলি হয়ে যান। এরপর প্রায় ১৪ বছরেও এই দুই পদে কোনো চিকিৎসক নিযুক্ত হয়নি। এ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন এমন প্রসূতিদেরকে নিতে হচ্ছে কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে অনেক টাকাও খরচ হয়। যে কারণে অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা অস্বাভাবিক ডেলিভারির কথা জেনেও ভাগ্যের ওপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হন এই নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদার জানান, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরি প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকার অপচয় না, প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সিভিল সার্জন অফিসের সদিচ্ছা না থাকার কারণে ১৪ বছরেও দুজন চিকিৎসক নিয়োগ হচ্ছে না। এতে করে উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিকগুলো লাভবান হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে ১৪ বছর ধরে চিকিৎসক নেই অথচ জেলায় সিভিল সার্জন আছেন। আমার প্রশ্ন সিভিল সার্জনের তাহলে কাজটা কী?
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিউলি পারভীন বলেন, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়াতো অন্য কেউ ওই সেবা দিতে পারবে না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জেনারেল সার্জন, গাইনি সার্জন, অর্থোপেডিক সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় আমি এখানে যোগদান করার পরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি জানি। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার।