ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্লোগানে নিয়ে কোনো লাভ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একেবারেই ভুলে যান। ওই অস্বাভাবিক সরকার, অসাংবিধানিক সরকার বাংলাদেশে আর আসবে না।
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়, সারা বছরই রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই প্রোগ্রাম হবে। বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় হবে। কখনো সম্মেলন হবে, কখনো গণসংযোগ হবে, কখনো শান্তি সমাবেশ হবে, কখনো সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে; আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি নিয়ে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে। জনগণের ঘরে ঘরে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় আছি, জনগণের জানমাল রক্ষায় আমরা পাহারাদার। জনস্বার্থে আমরা পাহারাদার। সিরাজগঞ্জে ১৮টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে, কখন এরা আবার আগুন-সন্ত্রাস নিয়ে মাঠে নামে, এটার জন্য আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে। আপনি আগুন নিয়ে আসবেন, পুড়িয়ে দেবেন; আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখব? এ আগুন-সন্ত্রাসীদের আমরা ক্ষমতায় যেতে দিতে পারি না।
সরকার পদত্যাগ করবে কেন—এমন প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, মামাবাড়ির আবদার, কোন দোষে সরকার পদত্যাগ করবে। কী কারণে নির্বাচনের আগে সরকারের পতন হবে, কারণটা কী। হাওয়া ভবনের যুবরাজ, তাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য, ওই খাম্বা সরদার, ওই খাম্বা সরদার ক্ষমতায় বসবে। বাংলাদেশের মানুষ এই লুটেরা, এই খাম্বা সরদার, এই অর্থ পাচারকারীকে এ দেশে ক্ষমতার মঞ্চে আর বসতে দেবে না।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যেসব অপকর্ম হচ্ছে, তা দুর্বৃত্তদের কাজ। এসব দুর্বৃত্তের আওয়ামী লীগের কোনো সংগঠনে থাকার অধিকার নেই। তাদের দল থেকে শুধু বহিষ্কার করলে হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, তাদের গ্রেপ্তার করুন, শাস্তি দিন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা অন্যায় ও অপরাধ করবে, তাদের দলের পরিচয় থাকলেও শেখ হাসিনা ছাড় দেবেন না। আমরা এত উন্নয়ন করছি; কিন্তু গুটিকয়েকের অপকর্ম উন্নয়ন ম্লান করে দিচ্ছে। অপকর্মকারীদের দিয়ে মিছিল বড় করার প্রয়োজন নেই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুলের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবিরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
কামরুল ইসলাম বলেন, যদি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চান, তবে নির্বাচনে অংশ নিন। আর কখনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের ভোটচুরি করতে দেওয়া হবে না। বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে লাভ হবে না। এর আগেও আগুন-সন্ত্রাসের মাধ্যমেও নির্বাচন বন্ধ করতে পারেননি তারা। এবারও পারবে না।
মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, যে বাংলাদেশ একসময় ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, সেই দেশকে উন্নয়ন আর অগ্রগতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে। কিছু রাজনৈতিক দল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে রাস্তায় নেমে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। শুধু এখনই নয়, সব সময় তারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ছাড়া তারা আর কিছু করতে জানে না।
‘রাজনীতিতে সেতু বানাতে পারছি না শুধু দেয়াল উঠছে’ : গাজীপুর থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, দেশের অস্তিত্ব ও গণতন্ত্রচর্চার জন্য রাজনীতিতে সেতু নির্মাণ আবশ্যক হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এই অলঙ্ঘনীয় দেয়াল ভেঙে সম্প্রীতির সেতু তৈরি করতে হবে। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি; কিন্তু রাজনীতি... পলিটিক্স ইজ সো ডিভাইডেড, সো পোলারাইজড, সো ডিভাইসিভ; রাজনীতিতে সেতু নির্মাণ অনেক চ্যালেঞ্জিং। কবে যে হবে, তা আমি জানি না। এখানে ব্রিজ নির্মাণ করতে পারছি না, শুধু দেয়াল উঠছে। আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের দেয়াল উঁচু থেকে উঁচুতে যাচ্ছে। সেতু আমরা নির্মাণ করতে পারছি না।’ গতকাল দুপুরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি রিসোর্টে অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন অভিনেতা মামুনুর রশিদ, তারিক আনাম খান, দিলারা জামান, ডলি জহুর, শহিদুল আলম সাচ্চু ও আমিনুল হক চৌধুরী। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের নাটক ও অভিনয়শিল্পীদের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশের নাটক গুণে-মানে, অভিনয়ে ও সংলাপে অনেক সমৃদ্ধ। আমাদের শিল্পীরা অনেক ট্যালেন্টেড।’
দেশে সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ‘অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন’ করা হয়েছিল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তোলেন, ‘অভিনয় কেন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে? অভিনয় তো নিয়ন্ত্রণের বিষয় না। এই কালো আইন আমরা তুলে দিয়েছি। এখন আর নেই।’
অভিনয়শিল্পীদের আশ্বস্ত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, কোনো পালোয়ান আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, এটা আমি আশ্বস্ত করতে পারি।