আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি। এদেশের ইতিহাসের একটি কালো দিন। এই দিনে জাতীয় পতাকার রূপকার ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদসহ পাঁচ জাসদ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের আজ ২৪তম বার্ষিকী। হত্যাকান্ডে ১৬ বছর পর ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৩ ঘাতকের ফাঁশি কার্যকর করা হওয়ায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্থি প্রকাশ করলেও তাদের দাবি এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মুল পরিকল্পনাকারীরা আজও রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। একই সাথে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ফাঁসির আরও ৪ আসামী এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা দানা বেঁধেছে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মাঝে। সেই সাথে তারা শংকাও প্রকাশ করেছেন। এদিকে গ্রেফতার হওয়া ফাঁশির অপর আসামি রওশন আলী যশোর কারাগারে থাকলেও তার ফাঁশি দ্রুত কার্যকর করার দাবি নিহতদের পরিবার ও জাসদ নেতৃন্দের।
হত্যাকান্ডের নির্মম শিকার শহীদ ইয়াকুব আলীর বড় ছেলে ইউসুফ আলী রুশো জানান, ৩ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আমাদের মাঝে কিছুটা স্বস্থি ফিরলেও এ হত্যাকান্ডের নেপথ্য মুল পরিকল্পনাকারীরা আজও রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এখনও গ্রেপ্তার হয়নি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ঘাতকদের অনেকেই। তাই এখনও উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা পিছু তাড়া করে, সেই সাথে মনের মাঝে সর্বদা বিরাজ করে শংকাও। ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িত যারা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি তাদের গ্রেপ্তার এবং এর পেছনের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
একই দাবি জানিয়েছেন সেদিনের ওই জনসভার পরিচালনাকারী ও মামলার স্বাক্ষী জাসদ নেতা কারশেদ আলম। তিনিও হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের জনসন্মুখে এনে বিচার করার দাবি জানান। একইসাথে ফাঁশির পলাতক ৪জন আসামি দৌলতপুরের মান্নান মোল্লা, বাকের আলী ও মিরপুরের জীবন ও জালাল ওরফে বাসারকে গ্রেফতার করে তাদের ফাঁিশ কার্যকর করার দাবি জানান তিনি। এছাড়ও গ্রেফতার হওয়া যশোর কারাগারে থাকা ফাঁশির আসামি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রওশন আলীর ফাঁশি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান কারশেদ আলম। কাজী আরেফ আহমেদেরর ভাতিজা হুমায়ুন কবীরের আক্ষেপ পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার না করায় একই সাথে জাতীয় নেতা কাজী আরেফ আহমেদের স্মৃতি সংরক্ষণ না করায়।
এদিকে নির্মম ও ইতিহাসের জঘন্নতম হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার ২৪ বছর পার হলেও আজও কালিদাসপুর ট্রাজেটি স্থলে শহীদদের স্মরনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগন ও এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস বিরোধী এক জনসভায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভপাতি কাজী আরেফ আহমেদ, জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারন সম্পাদক এ্যাড. ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমসের মন্ডল সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সেসময় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি পরদিন সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সাড়ে পাঁচ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগষ্ট কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০ আসামীর ফাঁশি ও ১২ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আসামীপক্ষ আপিল করলে ২০০৮ সালের ৫ আগষ্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিম্ন আদালতের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামীর মধ্যে ৯ জনের ফাঁশির আদেশ বহাল রাখেন। একই সাথে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামীর সাজা মওকুফ করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁশির তিন আসামী রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু, আনোয়ার হোসেন ও সাফায়েত হোসেন হাবিব ওরফে হাবি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ২০১১ সালের ৭ আগষ্ট প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শেষে আপিলকারী ফাঁশির ৯ জনের সাজা বহাল রাখেন। পরে ফাঁশির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামীরা সুপ্রিমকোর্টে রিভিউ করলে তাও ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে দেন আদালত। এরপর ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারী গভীর রাতে যশোর কারাগারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামী আনোয়ার হোসেন, রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ও সাফায়েত হোসেন হাবিব ওরফে হাবির ফাঁশি কার্যকর করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে কাজী আরেফ পরিষদ ও ইয়াকুব আলী স্মৃতি সংসদ পৃথক কর্মসূচী গ্রহন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শহীদদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন, ফাতেহা পাঠ ও স্মরন সভা।