মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বুকচিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নবগঙ্গা নদটি নাব্য হারিয়ে আজ মরে যেতে বসেছে। বালুও পলি জমে ক্রমশ: ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পরিনত হয়েছে জরাজীর্ণ খালে। নদীর বুকে জেঁগে উঠছে বিস্তীর্ণ চর। স্থানীয়রা নদীর এই চর দখলে নিয়ে এখন করছেন চাষাবাদ। সেই চর এখন পরিণত হয়েছে আবাদী ক্ষেতে। নদী বক্ষে এখন সবুজের সমারোহ। সবুজের এই সমারোহ নাব্য হারানো নবগঙ্গায় এনে দিয়েছে নবজাগরণ।
উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে নবগঙ্গা নদী প্রবাহিত। নদী তীরবর্তী গ্রামবাসীরা জানান, এক সময় নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে নিয়মিত চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো। অনেকে নদীর পানিও পান করত। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ খনন না করায় নদীর তলদেশে পলি ও বালি জমে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেঁগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। অনেকে আবার নদীর এ সকল যায়গা ভরাট করে বসত বাড়ি গড়ে তুলেছেন। নদীর অভয় আশ্রমে এখন আর তেমন মাছ পাওয়া যায়না। কারণ পানির অভাবে নদীতে মাছের বিচরণ ক্ষেত্র কমে গেছে। বাধ্য হয়েই মৎস জীবিরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার তাদের বাপ-দাদার এ পেশা আঁকড়ে ধরে থাকলেও তাদের চলছে চরম দুর্দিন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরজমিনে মহম্মদপুরের সীমান্তবর্ত্তী বিনোদপুর ও আলোকদিয়া নদীতীরে গিয়ে দেখা যায় নবগঙ্গার জেঁগে ওঁঠা বিস্তীর্ণ চরে হাজার হাজার একর জমিতে স্থানীয় কৃষকরা বোরোধানের আবাদ করেছেন। চরের খালি অংশে এখনো অব্যাহত রয়েছে বীজতলা রোপণ। অনেক কৃষক একমাস আগেই নিজ এলাকার মধ্যে নদীর চর দখল করে সরিষা,গমসহ রকমারি ফসলের আবাদ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর এ চাষাবাদকে অবৈধ্য বললেও স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন এটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এসব জমি এক সময় তাদের বাপ-দাদার দখলে ছিল। নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে এসব জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নাব্য হারিয়ে পলি পলি নদীতে চড় পড়ায় এ জমি তারা দখল নিয়েছেন। বৈধ্য কাগজ-পত্রও তাদের রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিনোদপুর এলকার অনেক বৃষক পরিবার। তবে জেলা প্রশাসন বলছেন পর্যায়ক্রমে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীটিকে খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনা হবে।
নবগঙ্গা নদীটি এক সময় ছিল প্রবল খরস্রোতা এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতংক। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এদের ভয়াল রুপ আর চোঁখ পড়েনা। প্রমত্তা নবগঙ্গা নদীর ঢেউয়ের বাধভাঙ্গা স্রোতের মাতম এখন শুধুই স্মৃতি। উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত এ নদী পথে শিল্প নগরী খুলনায় এ নদীর মাধ্যমে খুব সহজেই যাতায়াতের সুযোগ ছিল। পণ্যবাহী বড় বড় জাহাজ এ নদী পথে দেশের বিভিন্ন নৌ বন্দরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করত। নাব্য কমে যাওয়ায় ক্রমান্বয়ে মরে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নবগঙ্গা। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী ও আশে পাশের খাল-বিল। স্বাভাবিক পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কাজ। চাষাবাদে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। প্রয়োজনীয় গভীরতা না থাকায় নৌ চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়ছে উপজেলার সহস্রাধিক জেলে পরিবারের অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ। যারা এক সময় এ নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। অত্যন্ত ব্যায় সাপেক্ষ হলেও নদীতে ড্রেজিং এর মাধ্যমে খনন কাজ করে কৃষি ক্ষেত্রের বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব বলে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী। নবগঙ্গা নদীর বুকে পলি জমে জেঁগে উঠেছে বিশাল চর। জরাজীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে নদী। নৌকায় পাল তুলে মাছ ধরার দৃশ্য অথবা বড় বড় নৌকায় পণ্য বোঝায় দিয়ে গুন টেনে পরিবহন চলাচলের সে সব দৃশ্য কেবলই অতীত। নবগঙ্গার দুই পাড়ে জেঁগে ওঁঠা বিশাল চর জুড়ে হাজার হাজার একর জমিতে এ বছর আবাদ হয়েছে বোরো ধানসহ রকমারি ফসল।
মহম্মদপুর উপজেলার সীমান্তবর্ত্তী নবগঙ্গা নদীটি এখন পরিণত হয়েছে আবাদী ক্ষেতে। যে নদী এক সময় ভেঙ্গে চুরে গ্রাস করেছে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ-মন্দির ক্ষেত-খামার ও গাছপালা সেই রাক্ষুসী নদী এখন নদী পাড়ের মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। এবং তাদের ভাগ্য উন্নয়নের একমাত্র সহায়ক এখন নবগঙ্গা নদী।
ধনঞ্জয় মাঝি নামের এক স্থানীয় জেলে বলেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় আর আগের মত মাছ পাওয়া যায়না। তবুও বাপ দাদার পেশা ধরে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছি। স্থানীয় আজিজ ম্যোল্লা বলেন, নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করে ভাল আছি।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ২শ’ পঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয় করে খনন করা হয়েছে। একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে নতুন করে আবেদন করেছি।অনুমোদন পেলে আবার খনন কাজ শুরু করা হবে। মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের সমন্বয়ে নবগঙ্গা নদী পরিমাপ ও দখলদারদের তালিকা প্রনয়ন করে পর্যায়ক্রমে তাদের উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে। স্থানীয় দুই এমপি অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর ও ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, নবগঙ্গা নদী খননের জন্য আমরা মহান জাতীয় সংসদে কথা বলেছি। খনন কাজের জন্য শীঘ্রই নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha