বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠের সুলতান মঞ্চ চত্বরে ১৪দিনব্যাপী ‘সুলতান মেলার’ উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ৩টায় মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো: আব্দুর রশিদ।
জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ড.লুৎফর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: ফকরুল হাসান, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: রবিউল ইসলাম, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএ বাকি, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু, সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোটের জেলা সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু, অধ্যক্ষ মো: রওশন আলী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু, এস এম হাফিজুল করিম নিলু। জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা উদ্বোধনের পর সুলতান মঞ্চ চত্বর এলাকা নারী-পুরুষ ও শিশুদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। শীতকে উপেক্ষা করে সুলতানপ্রেমীরা মেলাস্থলে ঘুরতে আসেন।
নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ফারদিন শাহরিয়ার জানায়, করোনাকালীন বন্ধ থাকার পর মেলা চালু হওয়ায় আমরা শিশুরা অনেক আনন্দ পাচ্ছি। এসএম সুলতান দাদুর স্বরণে অনুষ্ঠিত এ মেলা নতুন প্রজন্মকে চিত্রাংকনে অনেকখানি উৎসাহ জোগাবে।
লোকজ সংস্কৃতির এ মেলায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সুলতান স্বর্ণপদক প্রদান ও সুলতানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা।আগামি ২০ জানুয়ারি মেলা শেষ হবে।
জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, জাঁকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া এ মেলায় প্রতিদিন সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও দূর-দূরান্ত থেকে বিপূল সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে।
মেলায় গ্রামীণ কুঠির শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের শতাধিক ষ্টল বসছে।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট অব আর্টিষ্ট হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মননা পান। ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী, লাহোরে ১৯৪৮ সালে, করাচীতে ১৯৪৯ সালে, লন্ডনে ১৯৫০ সালে,বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে ১৯৭৬ সালে এবং ঢাকাস্থ জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ১৯৮৭ সালে তাঁর চিত্র প্রদর্শিত হয়।
এছাড়া দেশ-বিদেশে বহুবার তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় যা সবার নজর কাড়ে। ১৯৯৪ সালে ১০ অক্টোবর চিরকুমার এই শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত হাসপাতালে শেষ-নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য শহরের কুড়িগ্রামস্থ তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।