প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়েটি পুরোপুরি চালু হলে শুধু নতুন শহর পূর্বাচলের সঙ্গেই নয়, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। পশ্চিমে প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বে ঢাকা বাইপাসকে সংযুক্ত করবে এই সড়ক। কমে যাবে যাতায়াতের সময় ও দূরত্ব। এ প্রকল্পটিকে অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া পাড় বাঁধানো দৃষ্টিনন্দন খালে নামানো হবে ওয়াটার বাস। পাড়েই লাল ইটের ওয়াকওয়ে। খালপাড় শোভিত থাকবে নানা রঙের দেশি-বিদেশি গাছে।
কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ‘কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্প’র পরিচালক এম এম এহসান জামীল গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি অনেক বড় একটি কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৮ ভাগের বেশি। করোনায় শ্রমিক সংকটে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। চলতি মাসের শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী যেন প্রকল্পটি উদ্বোধন করতে পারেন, সেভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের সদয় সম্মতি দিয়েছেন। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকায় পূর্ব-পশ্চিম বরাবর তেমন কোনো রাস্তা নেই। এই রাস্তাটি হলে ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের দিকে কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে।নরসিংদী থেকে এসে মানুষ অফিস করতে পারবে। ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ৮০ ফুট, ১৩০ ফুট ও ২০০ ফুট চওড়া তিনটি রাস্তা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে মাদানি এভিনিউ হয়ে ডেমরার দিকে চলে যাবে। উল্টো দিকে রাস্তা তিনটি যাবে টঙ্গী পর্যন্ত। অর্থাৎ ৩০০ ফুট সড়কটি রাজধানীকে চতুর্দিক থেকে সংযুক্ত করবে।
এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মেট্রোরেল যাবে। এ জন্য মাঝ বরাবর ৪ মিটার জায়গা রেখেছি। প্রকল্পের আওতায় খননের মাধ্যমে তিনটি খালের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করায় নিকুঞ্জ, জোয়ারসাহারা, বিমানবন্দর, কালাচাঁদপুর, কাওলা, খিলক্ষেতসহ আশপাশের এলাকা আর জলাবদ্ধ হবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কটির বেশির ভাগ লেন দিয়েই চলছে গাড়ি। ফুট ওভারব্রিজগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে। কিছু স্থানে চলছে কার্পেটিং ও মাটি সরানোর কাজ। খালপাড় ও সড়ক বিভাজনে লাগানো হচ্ছে গাছ। বসানো হচ্ছে ল্যাম্পপোস্ট। খালের অস্থায়ী বাঁধ অপসারণ চলছে। কুড়িল থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিআরটিসির বাসে ভোগান্তি ছাড়াই পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলায় যাচ্ছেন নগরবাসী। বাসের চালক সালাউদ্দিন জানান, মেলায় যেতে মাত্র ২০-২৫ মিনিট লাগছে। কোথাও যানজটে পড়তে হচ্ছে না। এ ছাড়া সড়কটির দুই পাশেই গড়ে উঠছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, ফুডকোর্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পূর্বাচলেও উঠতে শুরু করেছে বহুতল ভবন। পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরে গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট, বিনোদন পার্ক, সুইমিং পুল, ক্লাবসহ নানা স্থাপনা। ময়েজউদ্দিন চত্বরেই ডজনের বেশি রেস্টুরেন্ট। সন্ধ্যা নামতেই লাল-নীল বাতিতে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করছে। রাত-দিন রাজধানীবাসী ভিড় জমাচ্ছেন এসব এলাকায়। নগরবাসীর অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্ক। আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এই সড়কের কারণে জলসিঁড়িতেই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তিনটি ভালো স্কুল হয়েছে। আগে এসব এলাকার মানুষ তার সন্তানদের এমন স্কুলে পড়ানোর কথা চিন্তাও করতে পারেনি। খিলক্ষেতের ডুমনি এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, এক সময় নৌকায় করে শহরে যেতে হতো। পরে রাস্তা হলেও তা ছিল ভাঙাচোরা। বর্ষায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা থাকত। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়া যেত না। ৩০০ ফুট সড়কটি এই এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ। একদিকে এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের কারণে ডুমনিতেও জমির দাম বহুগুণ বেড়ে গেছে। জমি বিক্রি করে অনেকেই এখন বড় বড় বিল্ডিং তুলছেন। পাতিরা এলাকায় ৩০০ ফুট সড়কের কাছাকাছি ২০১৪ সালে সাড়ে ৭ কাঠা জমি কেনেন ওবায়দুল ইসলাম হিমেল। তিনি বলেন, তখন প্রতি কাঠা জমি ৭ লাখ টাকায় কিনেছিলাম। রাস্তাটার কারণে এখন প্রতি কাঠা ৫০-৬০ লাখ টাকা দাম উঠে গেছে।